নেছারাবাদ (পিরোজপুর) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বাড়িতে ফিরে অসুস্থ দুই মেয়েকে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে সোহেল। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস চট্রগ্রামের সীতাকুন্ডে অগ্নিকান্ড ট্রাজেডি সোহেলকে তার স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে জীবিত ফিরতে দিলোনা। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারলোনা সোহেল তার অসুস্থ দুই কন্যা সন্তানকে।
সোহেল (৩৩) পিরোজপুরের নেছারাবাদের আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সংগীতকাঠি গ্রামের দিনমজুর আবুল কালামের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে। সোহেল পেশায় একজন কাভার্টভ্যান চালক। সোহেল এ.জে.আর কুরিয়ার এ্যান্ড পার্সেল সার্ভিস কোম্পানীতে গাড়ি চালকের চাকুরি করত। স্ত্রী ও তিন কন্যা সন্তান নিয়ে সোহেল ঢাকা মিরপুর ১১ নম্বরের সবুজবাগ আবাসিক এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
নিহত সোহেলের স্ত্রী সুরভী আক্তার রানু জানান, তাদের দশ বছর বয়সের জান্নাতুল ফেরদৌস, সাড়ে তিন বছর বয়সের হাফসা ও সাত মাস বয়সের রুকাইয়া নামের তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। গত ২৯মে সোহেল বাড়িতে এসে মেঝ মেয়ে হাফসা ও ছোট মেয়ে রুকাইয়াকে অসুস্থ দেখতে পায়। পরদিন ৩০মে মেয়েদের নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবার কথা থাকলেও কোম্পানীর কাজের জন্য বাড়ি থেকে চলে যেতে হয় সোহেলকে। যাবার সময় সে নিজের হাতে তার মেয়েদেরকে আম ও লিচু খাইয়ে স্ত্রীকে বলেছিলো সম্ভব হলে মেয়েদেরকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে না হলে কাজ শেষে ফিরে সে মেয়েদেরকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে।
শনিবার দূর্ঘটনার ওই সময় সোহেল তার গাড়ীতে কোম্পানীর মালামাল নিয়ে ওই ডিপোতে অবস্থান করছিলো। ঘটনার সময় সোহেল তার স্ত্রীর মোবাইলে ভিডিও কল দিয়ে আগুন লাগার সংবাদ দেয়। এক পর্যায়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে পরে কথা হবে বলে জানিয়ে সে কলটি কেটে দেয়। পরবর্তিতে তাকে আর ফোনে পাওয়া না গেলে পরিবারের লোকজন কোম্পানীর মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে জানতে পারেন ওই গাড়ির হেলপার আহত হয়েছেন এবং সোহেল নিখোঁজ রয়েছেন। রবিবার সোহেলের চাচা শ^শুর আনিসুর রহমান ওই কোম্পানীর আরেক গাড়ী চালক আলীকে সাথে নিয়ে চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে সোহেলকে খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি সোহেলের লাশ দেখে তাকে সনাক্ত করেন।
ওই এলাকার ইউপি সদস্য শরীফ মাহমুদ জানান, সোমবার দিবাগত ভোররাতে পরিবারের লোকজন সোহেলের লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বাড়িতে পৌছালে। সেখানে এলাকার শত শত লোক ভীড় জমায়। সে সময় পরিবারের লোকজনের আর্ত¥নাদে সেখানে এক হৃদয় বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়। নিহত সোহেলের পিতা আবুল কালাম সন্তানের নাম ধরে চিৎকার করে বার বার মুর্চ্ছা যায়। মঙ্গলবার (৭ জুন) ভোরে নিজ বাড়ীতে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
সোহেলের পিতা আবুল কালাম জানান, প্রায় দশ বছর পূর্বে গাছের কাজ করতে গিয়ে তিনি আহত হয়ে সেই থেকে একপ্রকার পঙ্গুত্ব জীবন কাটছে তার। তাদের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিই ছিলো সোহেল। সন্তানকে হারিয়ে তাদের পুরো পরিবারের ভবিষ্যৎ জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। একদিকে সন্তান হারানোর শোক অপরদিকে স্ত্রী, পুত্রবধু ও তিন নাতনীদের নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকবেন সেই দুঃশ্চিন্তায় তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
শোকার্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে গিয়ে আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার বলেন, সোহেল ছিল ওই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। পরিবারে তার স্ত্রী ও তিন কন্যা সন্তান ছাড়াও বৃদ্ধ মা-বাবা রয়েছে। সোহেলের মৃত্যুতে ওই পরিবারটির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমার ব্যক্তিগত ও ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ওই পরিবারটিকে যতদুর সম্ভব সহযোগীতা করা হবে। পাশাপাশি পরিবারটির পাশে দাড়ানোর জন্য ইউনিয়নবাসির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
আরএ/এমআর