আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
শতাধিক পরিবারের ফসলি জমি কেটে তিন পরিবারের চলাচলের রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ রাস্তার নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবীতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেছে। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার উত্তর রাওগা গ্রামের মাঝগ্রাম এলাকায় মঙ্গলবার দুপুরে।
জানাগেছে, সিআরআইআইপি প্রকল্পের অধিনে ২২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের মালশিরামের বাঁধ থেকে শুরু করে মাঝগ্রাম হয়ে উত্তর রাওগা গ্রামের কাসেম মীরা বাড়ী পর্যন্ত দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা নির্মাণের দরপত্র আহবান করে উপজেলা প্রকৌশল অফিস। ওই কাজ পায় ঠিকাদার মনির খাঁন। ওই দুই কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা প্রভাবশালী রহমান মীরা, শাহআলম মীরা ও বারেক মীরা এই তিনটি পরিবারের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন ঠিকাদার মনির খাঁন প্রাক্কলন অনুসারে রাস্তার কাজ না করে তিন পরিবারের সাথে আতাত করে তাদের সুবিধার জন্য শতাধিক পরিবারের ফসলি জমি কেটে রাস্তা নির্মাণ করছেন। গত ১৫ দিন পুর্বে ১৬ ফুট উচ্চতায় ২৯ ফুট পাদদেশের এ রাস্তার কাজ শুরু হয়। এদিকে কার্যাদেশে স্থানীয় শ্রমিক দ্বারা রাস্তা নির্মাণের কথা উল্লেখ থাকলেও ঠিকাদার ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলি জমি কেটে ওই রাস্তা নির্মাণ করছেন। ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ করায় ফসলী জমি গভীর গর্তে পরিনত হচ্ছে। ওই জমিতে আগামী ১০ বছরে ফসল অনিশ্চিত বলে জানান ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা। ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলি জমি কেটে রাস্তা নির্মাণ কাজ বন্ধে জমির মালিকরা বাঁধা দেয়। এতে ঠিকাদারের সহযোগী মোঃ বেল্লাল মিয়া তাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন কৃষক লতিফ হাওলাদার, রত্তন, জাহাঙ্গির ও একিন আলী খাঁন। তিন পরিবারের চলাচলে ফসলি জমি কেটে রাস্তা নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবীতে মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্থ মাঝগ্রামের শতাধিক পরিবার বিক্ষোভ করেছে। প্রভাবশালী তিন পরিবারের চলাচলের জন্য শতাধিক পরিবারের ফসলি জমি কেটে রাস্তা নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবী জানান তারা।
হতদরিদ্র শাফিয়া খাতুন বলেন “ মোর ৭ হড়া জাগা আছে। হেই জাগায় রাস্তা হরবে। হ্যালে মোর খয়রাত করা ছাড়া আর কোন পোত থাকবে না। মুই মোর জমিদ্দা রাস্তা নেতে দিমু না।
দরিদ্র চন্দ্রভানু বলেন, মোর ৯ হড়া জাগায় রাস্তা হরলে মোর গুড়াগাড়া লইয়্যা ঢাহা যাইতে অবে। হ্যার চাইয়ে মোরো মাইর্যা হালান।
জহুরা বেগম কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, মুই বিধবা মানু, স্বামীর ৬ হরা জাগা পাইছি। হেই জাগায় রাস্তা হরবে। মোরে বিষ দেন। মুই বিষ খাইয়্যা মইর্যা যাই।
ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম ভুইয়া, ফোরকান মিয়া, জালাল খাঁন ও নাশির হাওলাদার বলেন, উপজেলা প্রকৌশল অফিস কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে ঠিকাদার মনির খাঁন শতাধিক পরিবারের ফসলি জমি কেটে প্রভাবশালী তিন পরিবারের চলাচলে রাস্তা নির্মাণ করছেন। তারা আরো বলেন, কার্যাদেশ অনুসারে রাস্তার কাজ না করে প্রায় এক কিলোমিটার ফসলি জমি কেটে রাস্তা নির্মাণ করছেন ঠিকাদার। এ রাস্তা নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবী জানান তারা। তারা আরো বলেন, ঠিকাদার ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ করছেন। এতে ফসলী জমি গভীর গর্ত হচ্ছে। আগামী ১০ বছরে ওই জমিতে ফসল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ফসলী জমির মালিক হিরন হাওলাদার বলেন, প্রভাবশালী তিন পরিবারের চলাচলের পথ নির্মাণে আমার ৪৫ শতাংশ জমি রাস্তায় দিতে হবে। জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হলে আমার পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে। আমার রেকর্ডীয় জমিতে আমি রাস্তা নির্মাণ করতে দেব না।
কাইয়ুম ভুইয়া বলেন, বাবার ৬৬ শতাংশ জমি পেয়েছি। ওই সমুদয় জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ হলে আমার কিছুই থাকবে না। আমার সব শেষ হয়ে যাবে। এ রাস্তা নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবী জানান তিনি।
ঠিকাদার মনির খাঁন তার সহযোগী বেলাল মিয়ার জমির মালিকদের ভয়ভীতি দেখানের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয়রা জমি না দিলে কাজ বন্ধ থাকবে। যতটুকু কাজ করেছি তত কাজের বিল নেব।
আমতলী উপজেলা এলজিইডির কমিউনিটি অর্গানাইজার শ্রীদাম চন্দ্র বিশ^াস বলেন, ফসলী জমি কেটে কোন মতেই রাস্তা নির্মাণ করা যাবে না। স্থানীয়রা জমি না দিলে তিন পরিবারের জন্য রাস্তা নির্মাণ করবো না।
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর