ডোমার (নীলফামারী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগডাবুরি একরামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরি এক সন্তানের জনক মেরাজুল ইসলাম (৩৫) কর্তৃক পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নির্যাতিত একাধিক শিশু শিক্ষার্থীর অভিযোগের তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। তারা জানায়, মেরাজুল দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণ করে আসছে। গত বৃহস্পতিবার (১৯ মে) এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার সময় কয়েকজন শিশু বিষয়টি দেখে ফেলে, মেরাজুল এই ঘটনা কাউকে জানালে তাদের সাথেও এরকম করবে এই হুমকি দিলে প্রায় সপ্তাহখানেক পরে ঘটনাটি উক্ত শিশুরা তাদের অভিভাবকদের জানায় এবং বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।
এ বিষয়ে অভিভাবক মুসা ইসলাম, তারিকুল, নাজমুল, শেফালি বেগম, ফারুক, রাব্বি ইসলাম, আবু সাঈদ, আযাদ এর সাথে কথা বললে তারা জানায় যে, আমরা কয়েকজন মিলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীনকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন “আপনার সন্তানের সাথে তো এরকম হয়নি আপনি কেন আসছেন? আমাকে কেউ অভিযোগ জানায়নি, যদি জানায় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।” উক্ত সময়ে উপস্থিত আশেপাশের আরো কিছু অভিভাবক জানান যে, “প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন শিশুদের এ বিষয়টি বাড়িতে না জানানোর জন্য ভয়ভীতি দেখান এবং তাদের উপবৃত্তি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান “এর আগেও ২-৩ বার এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে মেরাজুল। আমারও তো মেয়ে আছে, আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্কুলে শিক্ষিকা থাকা অবস্থায় কিভাবে মেরাজুল এই ঘটনা ঘটায়? আমরা তাহলে কার ভরসায় বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাব? আমরা তো হাজিরা করে খাই, তাহলে কি আমরা স্কুলে পাহারা দিব?”
উক্ত বিদ্যালয়ের নির্যাতিত পঞ্চম শ্রেণির শিশুটির কাছ থেকে ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে শিশুটির চাচা এসে ভয়ভীতির কারণে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে এবং বাসায় একজন সদস্যকে মারধোর শুরু করে। তিনি সাংবাদিকদের তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে গত সোমবার (৩০ মে) দুপুর দেড়টায় স্কুলে গেলে দপ্তরি মেরাজুলকে স্কুলে পাওয়া যায়নি, তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। স্কুলের এক সহকারী শিক্ষকা জানান মেরাজুলকে ছুটি দেয়া হয়েছে। এ সময় প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন স্কুলে না থাকায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি নিজ বাসায় দেখা করতে বলেন। তার বাসায় কথা হলে রেকর্ড না করার শর্তে তিনি জানান, “মেরাজুল ৮ বছর ধরে চাকরি করছে এতদিন আমাদের চোখে তার কোন খারাপ আচরণ চোখে পড়েনি, এমনকি এতদিন কোন অভিভাবকও আমাকে জানায়নি। গত বুধ বা বৃহস্পতিবার কিছু গার্জিয়ান আসে এবং আমার স্কুলের সহসভাপতি হারুন স্কুলের ম্যাডামকে জানালে তার কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারি। আমি বিষয়টি সভাপতিকে জানাই এবং নির্যাতিত শিশুর বাসায় এক ম্যাডামসহ গিয়ে শিশুর সাথে কথা বলে বিস্তারিত শুনি এবং মেরাজুলের সাথে কথা বললে সে সবকিছু স্বীকার করে। এরপর আমি সভাপতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার এর সাথে কথা বলে এ বিষয়ে মঙ্গলবার (৩১ মে) মিটিং আহবান করি। প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তার বিরুদ্ধে মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিব।”
মঙ্গলবার (৩১ মে) দুপুর ২ টায় স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান, সহসভাপতি হারুন, প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন, স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার সাদেকুর রহমান, সদস্য গোলাপ, নির্যাতিত শিশুর অভিভাবক, স্কুলের শিক্ষিকাবৃন্দ ও অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতিতে আলোচনা সভায় আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় দপ্তরী মেরাজুল ইসলাম মেরাজের অনুপস্থিতিতেই তাকে ৭ দিনের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় ম্যানেজিং কমিটি। প্রধান শিক্ষক জানান, আমরা তাকে সাত দিনের সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সাতদিনের মধ্যে আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপজেলা শিক্ষা অফিসে পাঠাব তারপর যা ব্যবস্থা নেয়ার অফিস নেবে। এ বিষয়ে সভাপতির কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার জনাব মোঃ রকিবুল হাসানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,“ বিষয়টি আমি শুনেছি কিন্তু কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি, পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।” তবে স্থানীয় নাগরিক ইয়াছিন আলী মমতাজ (এ্যাডভোকেট, জজকোর্ট নীলফামারী) জেলা শিক্ষা অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
বিঈজে/এমআর