আমতলী সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
অ্যাপসে নিবন্ধিত তালিকাভুক্ত ৮৮ কৃষকের মধ্যে ৭৫ কৃষকের হদিস নেই। অ্যাপসের জটিলতায় আমতলী উপজেলা খাদ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ বোরো ধান সংগ্রহে সমস্যা হচ্ছে। বরাদ্দ ২’শ ৬৪ মেট্রিকটন হলেও বিগত এক সপ্তাহে মঙ্গলবার পর্যন্ত সংগ্রহ করেছে মাত্র ৩৯ মেট্রিকটন। অ্যাপসের জটিলতায় ধান সংগ্রহে বড় সমস্যা বলে দাবী করেন এলএসডি মোঃ হুমায়ুন করিব। কৃষকদের অভিযোগ উপজেলা খাদ্য বিভাগ ধান ক্রয়ে বিলম্ব করায় বরাদ্দকৃত বোরো ধান সংগ্রহে ব্যর্থ হবে। অধিকাংশ কৃষক ইতিমধ্যে ধান বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন।
জানাগেছে, বোরো মৌসুমে আমতলী উপজেলা খাদ্য বিভাগকে ২’শ ৬৪ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহে বরাদ্দ দেয় সরকার। ধান বিক্রয়ে অ্যাপসে নিবন্ধনের জন্য কৃষকদের আহবান করা হয় উপজেলা খাদ্য বিভাগ। আমতলী উপজেলায় অ্যাপসের মাধ্যমে ধান বিক্রির জন্য ৭০০ কৃষক আবেদন করেন। ওই কৃষকদের মধ্যে বরাদ্দ অনুসারে ৮৮ জন কৃষককে লটারীর মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করা হয়। তালিকাভুক্ত নিবন্ধিত ৮৮ কৃষক প্রত্যেকে তিন মেট্রিক টন করে বরাদ্দৃকৃত ২ ’শ ৬৪ মেট্রিকটন ধান উপজেলা খাদ্য বিভাগের কাছে বিক্রি করতে পারবেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত ৮৮ কৃষককের অধিকাংশ অ্যাপসে নিবন্ধনে জটিলতা রয়েছে। লাটারীর মাধ্যমে তালিকাভুক্ত ৮৮ কৃষকের মধ্যে ৫০ কৃষকের বাড়ী আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে। ওই ৫০ কৃষকের কারো হদিস নেই। তাদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অধিকাংশ ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। কিছু ফোন নম্বর খোলা পাওয়া গেলেও তাদের ঠিকানা বরগুনা জেলার বাহিরে রংপুর ও চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলায়। অ্যাপসে জটিলতার কারনে ওই নিবন্ধনকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করতে পারছেন না খাদ্য বিভাগ। গত ২৫ মে ধান ক্রয় শুরু করে ৩১ মে পর্যন্ত অর্থ্যাৎ এক সপ্তাহে ১৩ জন কৃষকের কাছ থেকে উপজেলা খাদ্য বিভাগ ৩৯ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করেছে । অবশিষ্ট ৭৫ আপসে নিবন্ধিত কৃষকের হতিস নেই। ওই কৃষকের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোন নম্বর বন্ধ অথবা রং নম্বর বলে চিহিৃত করা হয়েছে। এ অ্যাপসের মাধ্যমে ধান ক্রয় নিয়ে বিপাকে পরেছেন উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা এলএসডি মোঃ হুমায়ুন করিব। বোরো ধান সংগ্রহে অ্যাপসের জটিলতাকে দায়ী করেছেন তিনি। তিনি আরো দাবী করেন কৃষকদের অ্যাপসের মাধ্যমে ধান বিক্রির জ্ঞান নেই। কৃষকদের অ্যাপস নিবন্ধনে ভুলত্রুটি থাকায় ধান সংগ্রহ করতে সমস্যা হচ্ছে। এদিকে কৃষকদের অভিযোগ যথা সময়ে অ্যাপসে নিবন্ধন করা হলেও সঠিক সময়ে উপজেলা খাদ্য বিভাগ ধান ক্রয় করেনি। অনেক কৃষক বাজারে ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে খাদ্য বিভাগ ধান সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হবে। অপর দিকে বাজারে ধানের দাম বেশী থাকায় কৃষকরা সরকার নির্ধারিত মুল্যে খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী নন বলে জানান পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের কৃষক সোহেল রানা।
আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের নিবন্ধিত কৃষক উত্তর হাওলাদার (০১৭০৪২৭২৫৩৬) ও আরতি মিস্ত্রীর (০১৭০৯১১৬১৩৬) মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
ওই ইউনিয়নের নিবন্ধিত কৃষক ছনু মিয়ার মুঠোফোনে (০১৭৮৬৭১৬৯৯৯) যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
একই ইউনিয়নের বিধুভুষন হাওলাদার (০১৭৩৪৪২২৪৫৫) ও নেপাল মুজমদারের (০১৭২৯৩৮১৭৪২) মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, এই নামের কাউকে আমরা চিনেন না। ভুল নম্বরে আপনী ফোন দিয়েছেন। আমাদের বাড়ী অনেক দুরে।
হলদিয়া ইউনিয়নের নিবন্ধিত তালিকাভুক্ত কৃষক গাজী শফিউল বাশার বলেন, অধিকাংশ কৃষক ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। কৃষকদের কাছে কিছু ধান থাকলেও তা সংগ্রহ করতে সময় লাগবে।
আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের কৃষক সোহেল রানা বলেন, উপজেলা খাদ্য বিভাগ যথা সময়ে ধান ক্রয় করতে উদ্যোগ নেয়নি। ইতিমধ্যে অধিকাংশ কৃষক ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। উপজেলা খাদ্য বিভাগ এখন ধান ক্রয় করতে চাইলে তা কোথায় পাবে? কৃষকের ঘরেই ধান নেই।
আমতলী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা সমির কুমার রায় বলেন, অ্যাপসের জটিলতায় কারনে ধান সংগ্রহ করতে সমস্যা হচ্ছে। নিবন্ধিত কৃষকদের নামের সাথে মোবাইল নম্বরে মিল না থাকায় এ জটিলতা সৃষ্টি হয়। তিনি আরো বলেন,গত এক সপ্তাহে মাত্র ৩৯ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে ধান ত্রয়ের যে গতি তাতে লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে না।
এমএইচকে/এমআর