ছাতক(সুনামগঞ্জ) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
সুনামগঞ্জে ছাতকে সুরমা, চৈলা, পিয়াইন ও বটের নদীর পানি কিছুটা কমলেও বন্যা পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ অবস্থায় বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণের জন্য হাহাকার বাড়ছে। উপজেলার ১৩টি ও একটি পৌরসভার সবকটি এলাকা কম-বেশি বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ত্রাণ থেকে এখনো বঞ্চিত রয়েছেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ত্রাণ বরাদ্দ পর্যাপ্ত এবং অব্যাহত আছে। কিন্তু, ধাপে ধাপে সংশ্লিষ্টদের হাত পেরিয়ে তা সময়মতো বন্যাদুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে, দুর্গতদের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি বাড়ছে। সুরমা, চৈলা, পিয়াইন, বটের নদীতে বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদ সীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।
গ্রামীণ সড়ক বন্যা প্লাবিত হওয়া ১৮টি সড়কের মধ্যে বুড়াইরগাও-আলমপুর পাকা সড়ক গত শনিবার সকালে ভেঙ্গে গেছে। উপজেলা সদরের যান ও মানুষ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ছাতক ও সিলেট সড়ক। গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক সড়ক পথে ঝুঁকি নিয়ে কিছু কিছু যান চলাচল করতে দেখা গেছে। বন্যায় তলিয়ে গেছে এখানের বহু পাকা রাস্তাঘাট, প্লাবিত হয়েছে লাখ লাখ বসত ঘরবাড়ি, শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মৎস্য খামার। গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে এখানে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। চরম দুর্ভোগের শিকার বানভাসি মানুষ। বিশেষ করে নদীর তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও বসত ঘরের মধ্যে হাঁটুপানি, কোমরপানি থাকায় ৫ দিন ধরে হাড়ি বসছে না তাদের ঘরে।
উপজেলার ছৈলা আফজলাবাদ ইউপির তেঘরি গ্রামে শফিক মিয়াও নোয়াপাড়া গ্রামে রোবহান উদ্দিন জানান, সুরমা নদীর পানি উপচে আমাদের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। আমরা খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছি। কিন্তু, এখনো কোনো সহায়তা পাইনি।’ নদীতে কার্গো লোডিং-আনলোডিং কাজ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকেল পর্যন্ত উপজেলায় মোট ৩০ টন চাল, ৫ শতাধিক বস্তা শুকনো খাবার এবং নগদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উপজেলায় ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১শত ৩০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন এসব বানভাসির মানুষের খোজ খবর নিয়মিত নিচ্ছেন।
এদিকে জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুনুর রহমান উপজেলার জাউয়া বাজার ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে থাকা অসহায় বন্যার্ত মানুষের মাঝে গত শনিবার দুপুরে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। এখানে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা ২১ পরিবারের মধ্যে চাল ও প্যাকেট জাত শুকনো খাবার বিতরণ করেন। এ সময় জাউয়াবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হক, ইউপি সচিব মোহাম্মদ কায়েস মাহমুদসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিকালে গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাও ইউপির লক্ষীপুর গ্রামের মাষ্টার হাবিবুর রহমান ফাউডেশনের পক্ষ থেকে দশঘর, মালিকান্দিসহ ১০টি গ্রামে ৫ শতাধিক অসহায় বন্যার্ত মাঝে প্যাকেট জাত শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। প্রধান সম্বয়ক মাসুম আহমদ ও শিক্ষক রেজ্জাদ আহমদের নেতৃত্বে বানভাসি মানুষের ঘরে ঘরে ত্রান পৌছিয়ে দেয়া হয়েছে।
এএমএল/এমআর