সাগরকন্যা স্পোর্টস ডেস্ক ॥
ওয়ানডে সিরিজ কেটেছে দুঃস্বপ্নের মতো। টেস্ট সিরিজের শুরুটা হলো স্বপ্নময়। তবে তা কেবল তামিম ইকবালের জন্যই। দেশ সেরা ব্যাটসম্যানের স্ট্রোকের দ্যুতিতে বাংলাদেশের শুরুটাও হলো উদ্ভাসিত। কিন্তু অন্যান্যের ব্যর্থতায় সেই ইনিংসই ডুবল আঁধারে। বাটিং হতাশার স্রোত পরে গিয়ে মিশল বোলিংয়েও।
হ্যামিল্টন টেস্টের প্রথম দিনে তামিম উপহার দিয়েছেন চোখধাঁধানো এক সেঞ্চুরি। তার সতীর্থরা একের পর এক উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন প্রতিপকে। তামিমের ১২৮ বলে ১২৬ রানের ইনিংসের পরও তাই বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ২৩৪ রানেই। লিড নেওয়ার পথে নিউ জিল্যান্ড অনেকটা এগিয়ে গেছে বিকেলেই। বৃহস্পতিবার প্রথম দিন শেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে কিউইদের রান ৮৬। সেডন পার্কের উইকেট সবুজ ঘাসে মোড়ানো। সেখানেই টস হেরে নিতে হয়েছে আগে ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জ। শঙ্কার কারণ ছিল যথেষ্টই। কিন্তু তামিমের দারুণ সব শটে আস্তে আস্তে দূরে সরে যায় শঙ্কার মেঘ।
ওয়ানডে সিরিজে তামিমের রান ছিল ৫, ৫ ও শূন্য। কিন্তু রঙিন পোশাকে বিবর্ণ সময়টুকু পেছনে ফেলে সাদা পোশাকেই হয়ে উঠলেন রঙিন। এ দিন শুরু থেকেই খেলেছেন আত্মবিশ্বাসী সব শট।
উদ্বোধনী জুটিতে তামিমকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন সাদমান ইসলাম। দুজনের ব্যাটে ১০ ওভারেই ৫৩ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদিরা সুইং পাননি প্রত্যাশিত। বাংলাদেশের আগ্রাসন চমকে দেয় তাদের। ৫৭ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে বোল্টের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে। বাতাসে অনেক পরে সুইং করা বলে আগেই ব্যাট ঘুরিয়ে ফেলে, লাইন মিস করে সাদমান বোল্ড হন ২৪ রান করে।
পরের জুটিতে কেবলই ‘তামিম শো’। মুমিনুল হক উইকেট আগলে রেখেছেন,তামিম শট খেলে গেছেন। বোল্টের এক ওভারে টানা তিন চারে তামিম ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন ৩৭ বলে;দেশের বাইরে তার দ্রুততম ফিফটি। ওই ওভারে বাউন্ডারি মারেন চারটি।
ইনিংসটির পথে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তামিম ছুঁয়েছেন টেস্টে ৫০০ চার। কেবল কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমই তাকে একটু শান্ত রাখতে পারছিলেন। এই মিডিয়াম পেসারের বলেই ৬৫ রানে বেঁচে যান ফিরতি ক্যাচ দিয়ে।
লাঞ্চের একটু আগে বাংলাদেশ হারায় মুমিনুলকে। ৩৩ বলে ৩ রান থেকে নিল ওয়েগনারের বাউন্সারে ব্যাট পেতে দিয়ে থার্ডম্যান দিয়ে ছক্কা মেরেছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ওয়েগনার শোধ তুলেছেন বাউন্সারেই তাকে ফিরিয়ে।
তামিমের সৌজন্যে তবু বাংলাদেশই ছিল এগিয়ে। ৯ বছর আগে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনে লাঞ্চের আগে সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়েছিলেন তামিম। ইংল্যান্ডের বিপে সেদিন ৭১ বলে ৮৫ করে আউট হয়েছিলেন, লাঞ্চ হয়েছিল আরও ৯ ওভার পরে। এবারও তামিম পারলেন না একটুর জন্য। লাঞ্চের সময় অপরাজিত ছিলেন ৮৫ বলে ৮৬ রানে। লাঞ্চের পর ছুটেছেন একই গতিতে। সাউদিকে দারুণ পুলে বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১০০ বলে। তার নবম টেস্ট সেঞ্চুরি, দেশের বাইরে চতুর্থ।
সেঞ্চুরির পর সাউদির শর্ট বলের জবাব দেন তামিম পুল করে ছক্কায়। ৩৪ ছক্কায় বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডে ছুঁয়েছেন মোহাম্মদ রফিককে। সাউদির ওই ওভারে মারেন আরও দুটি বাউন্ডারি। শেষ পর্যন্ত তাকে থামান ডি গ্র্যান্ডহোম। ২১ চার ও ১ ছক্কার ইনিংস খেলে তামিম ক্যাচ দেন গালিতে।
তামিম আউট হওয়ার আগে অন্য পাশে শুরু হয়েছে ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়া। শরীর তাক করে ক্রমাগত বাউন্সার করে যাওয়ার ফর্মূলায় বরাবরই সফল ওয়েগনার। এ দিনও ব্যাটসম্যানরা পা দিয়েছে সেই ফাঁদে। এই বাঁহাতি পেসারের শর্ট বলে বাজে শটে ফেরেন মিঠুন ও মাহমুদউল্লাহ। মাঝে সাউদির বল ছাড়তে গিয়ে গ্লাভসে ছুঁইয়ে দেন সৌম্য সরকার। একটি করে চার ও ছক্কার পর মেহেদী হাসান মিরাজকেও শর্ট বলে ফেরান ওয়েগনার। আরেকটি শর্ট বলে লিটন দাসকে ফিরিয়ে শেষ করে দেন বাংলাদেশের ইনিংস। ২৭ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ৪৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন ওয়েগনার, টেস্টে এই স্বাদ পেলেন ষষ্ঠবার।
ব্যাটিংয়ে অমন শেষের পরও বোলিংয়ের শুরুটায় দলকে মনে হচ্ছিল বেশ উজ্জীবিত। আবু জায়েদ ও অভিষিক্ত পেসার ইবাদত হোসেন নতুন বলে দারুণ বোলিংয়ে পরীা নেন জিত রাভাল ও টম ল্যাথামের। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় বলেই উইকেট নিতে পারতেন ইবাদত। স্লিপে ল্যাথামের ক্যাচ নিতে পারেননি সৌম্য।
এরপর আর কোনো সুযোগ দেয়নি কিউইরা। দুজনই ঠা-া মাথায় কাটিয়ে দেন সময়টুকু। উইকেট না পেয়ে ক্রমে কমে আসে পেসারদের ধার। দুই ব্যাটসম্যানই তা কাজে লাগান। দারুণ খেলে রাভাল পেরিয়ে যান ফিফটি, ল্যাথামও জমে যান উইকেট।
সব মিলিয়ে সম্ভাবনার আলো ছড়িয়ে শুরু বাংলাদেশের দিনটা হারিয়ে গেছে হতাশার আঁধারে। প্রথম দিনেই ইঙ্গিত আরও অনেক কঠিন সময়ের।
সংপ্তি স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫৯.২ ওভারে ২৩৪ (তামিম ১২৬, সাদমান ২৪, মুমিনুল ১২, মিঠুন ৮, সৌম্য ১, মাহমুদউল্লাহ ২২, লিটন ২৯, মিরাজ ১০, আবু জায়েদ ২, খালেদ ০, ইবাদত ০*; বোল্ট ১/৬২, সাউদি ৩/৭৬, ডি গ্র্যান্ডহোম ১/৩৯, ওয়েগনার ৫/৪৭, অ্যাস্টল ০/১০)।
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৮ ওভারে ৮৬/০ (রাভাল ৫৩*, ল্যাথাম ৩৫*; আবু জায়েদ ০/১৫, ইবাদত ০/২৬, খালেদ ০/৬, সৌম্য ০/৮, মিরাজ ০/৩১)।