কুয়াকাটা সাগরকন্যা অফিস॥
বর্ষার মৌসুম শুরু হতে না হতেই সমুদ্রের উম্মাদনাও শুরু হয়েছে। সেই সাথে পূর্ণিমার জোয়ের সঙ্গে খেলা করছে উত্তাল সমুদ্র। বড় বড় ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। কান পাতলেই অবিরত গর্জন শোনা যাচ্ছে দিনে-রাতে সর্বক্ষণ। দখিনা বাতাসে কাঠফাঁটা রোদকে হার মানিয়ে ভিন্ন এক অনুভূতির পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে নানা বয়সী পর্যটকদের মনে। কেউ সৈকতের বেঞ্চিতে আবার কেউ তালগাছ নারিকেল গাছের ছায়ায় বসে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগে ব্যস্ত। এযেন স্বর্গীয় এক অনন্য বেলাভূমে যান্ত্রিকতার ক্লান্তি ভুলতে সবাই এসেছেন কুয়াকাটায়। এমন হাজারো পর্যটকদের আড্ডায় মুখোরিত হয়ে উঠেছে সৈকত সংলগ্ন ঝাউবাগানসহ বিভিন্ন বন-বনানী। প্রকৃতি আর পর্যটকের নীবিড় সেতু বন্ধনে অন্য ভুবন হয়ে উঠেছে সাগর কন্যা কুয়াকাটার। যেসকল পর্যটক কুয়াকাটা সৈকতে শীত মৌসুমে বেড়াতে এসেছেন, তাদের কাছে বর্ষার সাজে সুসজ্জিত সমুদ্র নতুন রূপে ধরা দিয়েছে। অন্যদিকে উত্তাল এই সমুদ্রে পর্যটকদের গোসল ও সাঁতার কাটতে মাইকিং করে সচেতন করছে পর্যটন পুলিশ। পর্যটন পুলিশের এমন সচেনতায়ও আগত পর্যটকরা বিচলিত নয়, পর্যটকদের উম্মাদণা ছিল চোখে পড়ার মত।
শুক্রবার (২০ মে) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে হাজার হাজার পর্যটকদের আগমনে উৎসবমুখর এক পরিবেশের সৃস্টি হয়। উত্তাল সমুদ্রে গোসল, হই হুল্লোড়, ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে আনন্দ উল্লাস ও উম্মাদনায় মেতে ওঠে নানা বয়সের পর্যটকরা। উত্তাল সমুদ্র, বিশাল আকারের ঢেউয়ের ভয়কে জয় করে সমুদ্রে সাতার কাটা, ওয়াটার বাইকে ঘুরে বেড়ানো, ঢেউয়ের সাথে গাঁ ভাসিয়ে দিয়ে সৈকতে গড়াগড়ি খাচ্ছে সমুদ্র প্রিয় পর্যটকরা। এমন ছন্দময় সময়কে স্মরণীয় করে রাখতে অনেকেই সৈকতের ফটোগ্রাফার দিয়ে ছবি তুলছে, কেউ কেউ ছাতার নিচে বসে সমুদ্র ও সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করছে, আবার কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ে সৈকতের প্রকৃতি দেখছে। আগত পর্যটকরা অনেকেই এর আগে সমুদ্রের এমন রুদ্র রুপ দেখেনি। মৌসুমের শেষে বর্ষার শুরুতে ছুটির দিনে কুয়াকাটায় অসংখ্য পর্যটকদের আগমন ঘটেছে। হোটেল মোটেল রিসোর্ট গুলোতে কম ভাড়ায় রুম পেয়ে খুশি পর্যটকরা। খাবার হোটেল, ঝিনুক মার্কেট, রাখাইন মার্কেট, মিশ্রিপাড়া তাতঁ পল্লীতে কেনাকাটায় খুবই খুশি পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীরা। অমৌসুমে অসংখ্য পর্যটকদের আগমনে খুশি তারা। তবে খাবারের মুল্য নিয়ে পর্যটকদের কোন অভিযোগ না থাকলেও অভিযোগ রয়েছে মানহীন খাবার নিয়ে। দুই থেকে তিন মাস আগে ফ্রিজে রাখা মাছ খাওয়ানো হচ্ছে পর্যটকদের।
আগত পর্যটকরা শুটকি পল্লী, গঙ্গামতির লেক, রাখাইন পল্লী, ঝাউ বন, লেম্বুর বন, লাল কাঁকড়ার চর, তিন নদীর মোহনা, কুয়াকাটার কুয়া, শ্রী মঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, মিশ্রিপাড়ার সীমা বৌদ্ধ বিহার সহ অধিকাংশ পর্যটন স্পট এখন পর্যটদের পদচারণায় মুখর। বর্ষার মৌসুম শুরু হওয়ায় সমূদ্র উত্তাল রয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে সমুদ্রের পানি এবং ঢেউয়ের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকাংশে। সমুদ্রের ঢেউ এসে আচঁড়ে পরছে সৈকতের ভূ-ভাগে। সমুদ্রের এমন রুদ্র মুর্তি দেখে কেউ কেউ ভয়ে সমুদ্রে নামছে না। আবার অনেক এ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটক ও দর্শনার্থীরা বর্ষার এই সমুদ্র দেখে খুশি।
পর্যটক পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে কুয়াকাটা ভ্রমনে এসেছেন। তার মতে সমুদ্র সৈকতে ভ্রমনে এলে বর্ষা মৌসুমে আসতে হবে। বর্ষার সমুদ্র এবং সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ দেখে মুগ্ধ তারা। শীতের সমুদ্র এবং বর্ষার সমুদ্রের রুপ সম্পূর্র্ণ ভিন্নতা রয়েছে। তিনি মনে করেন, সমুদ্রের রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে বর্ষা মৌসুমেই আসা উচিত। আবাসিক হোটেল সৈকতের মালিক রোটারিয়ান জিয়াউর রহমান জানান, মৌসুমের শেষে ছুটির দিনে অনেক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। তার হোটেলের অধিকাংশ রুমই বুকিং ছিল। তবে শীত মৌসুমের চেয়ে অনেক কম ভাড়ায় রুম বুকিং দিয়েছেন। এতে পর্যটকরাও খুশি বলে জানান এই হোটেল মালিক।
কুয়াকাটা পর্যটন পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক জানান, আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় তারা সার্বক্ষনিক সতর্ক দৃস্টি রাখছেন। উত্তাল সমুদ্রে গোসল, সাঁতার কাটতে গিয়ে যেন কোন পর্যটক দুর্ঘটনায় না পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখছেন তারা। পাশাপাশি দুর্ঘটনা রোধে স্পীড বোট ও ওয়াটার বাইক সবসময় প্রস্তুত রাখা হয়।
এনইউবি/এমআর