বামনা (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বরগুনায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে জখমের অভিযোগ ১৯ দিন অতিবাহিত হলেও বিচার পাচ্ছে না বীর মুক্তিযুদ্ধা ও তার পরিবার। বরং উল্টো বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বারের নাতিদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।
জনা যায়, বরগুনা সদরের আয়লাপতাকাটা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল ২৩ এপ্রিল সকালে গরু দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জব্বারের বড় ভাইয়ের ছেলে জহিরুল ইসলামের ক্ষেতের মুগডাল নস্ট করে। জহিরুলের ছেলে ছোটন প্রতিবাদ করতে গিয়ে আউয়ালকে গালমন্দ করেন। এতে আউয়াল অপমানবোধ করেন। ওই দিন বিকাল ৫টার দিকে আউয়াল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে তার বসতঘরে ডেকে নেয়। উভয়ের মধ্য প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আউয়াল উত্তেজিত হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে খুনের উদ্দেশ্য লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধার বাম হাতে মারাত্মক জখম হয়। এরপর হারুন ও চম্পা রড দিয়ে আবদুল জব্বারকে পিটিয়ে জখম করে।
৫ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বরগুনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বুধবার বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে রিপন বাদী হয়ে আওয়ামীলীগ নেতা আউয়ালের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন । চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ মাহবুব আলম জখমী বীর মুক্তিযোদ্ধার মেডিকেল সার্টিফিকেট তলব সাপেক্ষে ২২ মে আদেশের দিন ধার্য রেখেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন, বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা পাতাকাটা গ্রামের মৃত সেকান্দার আলীর ছেলে আবদুল আউয়াল, সোহরাব হাওলাদারের ছেলে হারুন ও আউয়ালের স্ত্রী চম্পা।
বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে রিপন সাগরকন্যাকে বলেন, আমি মামলা করার পরে আসামী আবদুল আউয়াল উল্টো তার কলেজ পড়ুয়া দুই মেয়েকে দিয়ে ২৮ এপ্রিল আমার নাতি শাকিল, রাকিব, রিয়াজ ও এডভোকেট মোঃ খলিলুর রহমানের নামে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালে হয়রানী মূলক একটি মিথ্যা মামলা করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার ১৯ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরে সোমবার বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে বাড়ী যাবার সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি ১৯৭১ সালে সম্মুখযুদ্ধ করে বেঁচে আছি। আজ ৭৫ বছর বয়সে আউয়াল ও তার লোকজন তুচ্ছ ঘটনায় আমাকে হত্যা করার জন্য তাঁর বাড়ীতে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে। তিনি আরও বলেন, আমার নাতিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে আউয়াল। আমার দু:খ হচ্ছে আমাদের মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের কেহ আমার বিপদে আমার পাশে নেই। আমাকে ১৯ দিনে হাসপাতালে কেহ দেখতেও আসেনি। আমার ঈদ কেটেছে হাসপাতালে। কস্টে আমার বুকটা ফেটে যায়। আমি প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিচার চাই। তিনি ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে কেহ থাকেন না। প্রধানমন্ত্রী বেঁচে আছেন। আমাদের মূল্যায়ন করেন। অথচ আমাদের সংগঠনের নেতারা আমার খোজ খবর নিচ্ছেন না। মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের ডেপুটি কমান্ডার আলহাজ আবদুল মোতালেব মৃধা বলেন, এটি একটি দু:খ জনক ঘটনা। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মারবে আর থানা মামলা নিবে না। এটা স্বাধীন দেশে হতে পারে না।
অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতা আউয়াল বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধাকে মারিনি। ছোট ছোট ছেলেদের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। আমরা আপস হতে চাই। মুক্তিযোদ্ধার নাতিদের বিরুদ্ধে কেন মামলা করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অপরাধ করেছে তাই মামলা করেছি।