ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ঢাকা শহরে বিদ্যমান ভবনের ডাটাবেজ তৈরির কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রথম ধাপে পুরান ঢাকার চকবাজার দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরান ঢাকাসহ রাজউকের আওতাধীন পুরো এলাকার ডাটাবেজ তৈরি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ঢাকায় কতগুলো ভবন আছে, কোনটি কয়তলা, কোন ভবনে কী ধরনের কার্যক্রম চলমান প্রভৃতি তথ্য ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। রবিবার দুপুর থেকে রাজউকের কর্মকর্তারা ৪৭টি ভবনের ডাটা সংগ্রহ করে। জনবল স্বল্পতা সত্ত্বেও রাজউক কর্তৃপক্ষ ডাটাবেজ সংক্রান্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আর রাজউকের কাছে ঢাকার ভবন সম্পর্কিত যে তথ্য থাকবে তাতে যেসব ভবনে মিশ্র ব্যবহার চলবে, সেগুলোকে নোটিশ দেয়া যাবে। তাছাড়া রাজউকের অনুমোদনহীন ভবনগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে ভবন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে তা ফিরিয়ে আনা হবে। রাজউক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ভবনের ডাটাবেজ তৈরিতে প্রাথমিকভাবে একটি ফরম তৈরি করা হয়েছে। ওই ফরমে রয়েছে এলাকার নাম, রাস্তার নাম ও প্রশস্ততা, হোল্ডিং নম্বর, মালিকের নাম, ফোন নম্বর, হোল্ডিংয়ের জমির পরিমাণ বা আয়তন, হোল্ডিংয়ের তলার সংখ্যা, ইমারতের বিবরণ, প্রতি তলার ব্যবহার, রাজউকের অনুমোদন থাকা বা না থাকা এবং হোল্ডিংটির নির্মাণকাল সংবলিত সরণি। তাছাড়াও সর্বশেষ পর্যায়ে আরেকটি সরণিতে ভবনের তথ্য সংগ্রহকারী অথরাইজড অফিসার, চিফ ইন্সপেক্টর, ইন্সপেক্টর ও সহকারী অথরাইজড অফিসার তাদের মতামত দেবেন। কোনো ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলে তারা মতামতের সরণিতে ওই সম্পর্কে মতামত দিতে পারবেন। কোনো ভবনের সামনে রাস্তার প্রশস্ততা কম থাকলে ওই ব্যাপারেও জরিপকারী কর্মকর্তা মতামত দিতে পারবেন। জরিপকারী পুরো ভবন পর্যালোচনা করে স্বাক্ষরসহ মতামত দেবেন। তবে ভবনের মালিক বা মালিকপক্ষের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে ডাটাবেজ তৈরি করা হবে।
সূত্র জানায়, ভবন সংক্রান্ত ডাটাবেজ তৈরির ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা থেকে হয়ে বাবুবাজার থেকে সাভারের বংশী নদী পর্যন্ত রাজউক এলাকায় (রাজউকের ৫ নম্বর অঞ্চল) ওই জরিপ পরিচালিত হবে। আর এ ধরনের জরিপ করে ডাটাবেজ তৈরি করা হলে বাড়ির মালিকরা ইচ্ছামতো ভবনের মিশ্র ব্যবহার করতে সাহস পাবে না। রাজধানীর প্রতিটি এলাকাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। তারই প্রথম ধাপ ডাটাবেজ হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, মাঠপর্যায়ে অনেক ক্ষেত্রেই ভবনের মালিকরা তথ্য দিতে চাইছে না। রাজউকের লোক শুনলেই অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। তারপরও ভবনের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে যেসব ভবনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগেরই অনুমোদিত নকশা নেই। দু]একজন ছাড়া অন্যরা কেউ ভবনের নকশাও দেখাতে পারেননি। কোনো কোনো ভবন মালিক নকশা পরে দেখাবে জানাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ভবন মালিকদের কাছ থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে ভবনের কোন তলা কী কাজে ব্যবহার হচ্ছে। তাতে দেখা যায় প্রায় প্রতিটি ভবনেরই মিশ্র ব্যবহার চলছে। ভবনের নিচতলায় বেশিরভাগই দোকানপাট হিসেবে কিংবা বাণিজ্যিক অন্য কোনো কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার কারখানা-গোডাউনও রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক সংরক্ষণের পাশাপাশি আবাসিক হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে কিছু তলা। এককথায় প্রায় প্রতিটি হোল্ডিংয়ে মিশ্র ব্যবহারের চিত্র পাওয়া গেছে।
এদিকে গত রোববার রাজউকের ৫ নম্বর জোনের (বাবুবাজার থেকে সাভারের বংশী নদী পর্যন্ত) ১৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মাঠ পর্যায়ে ভবনের ডাটাবেজ সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। তাদের মধ্যে ৩ জন সহকারী অথরাইজড অফিসার, ৯ জন ইন্সপেক্টর ও ৩ জন চিফ ইন্সপেক্টর ছিলেন। তবে ওই জোনে বর্তমানে অথরাইজড অফিসারের পদ শূন্য থাকায় সহকারী অথরাইজড অফিসার মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
অন্যদিকে এ বিষয়ে রাজউকের পরিচালক শাহ আলম চৌধুরী জানান, ১০ বছর আগে রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। এবার সব ভবনের তথ্যই সংগ্রহ করা হবে। আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা আরো বেড়ে গেছে কিনা, এবারের জরিপের পর সেটাও বেরিয়ে আসবে।
এফএন/এমআর