গত মঙ্গলবার মধ্য রাতে পাকিস্তানের ৮০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে বোমাবর্ষণ করে পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদের বহু শিবির গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছে ভারত। অন্যদিকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে বোমা ফেললেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। তারা বলেছে, পাকিস্তানি বিমানের তাড়া খেয়ে পালিয়ে গেছে ভারতীয় বিমান। ভারত বলছে, পাকিস্তান মিথ্যা বলেছে। ওদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ও রাতে কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গোলাগুলিতে পাকিস্তানে দুই শিশুসহ পাঁচজন নিহত ও ভারতের পাঁচ সেনা সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত খবরে বলা হয়েছে, মানবঢাল ব্যবহার করে পাকিস্তান মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করেছে জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্তরেখা বরাবর।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কয়েক দশকের উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি। এর আগে ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর উরিতে ভারতীয় সেনা ছাউনিতে জইশ-ই-মোহাম্মদের গ্রেনেড ও বন্দুক হামলায় ১৯ জন জওয়ান প্রাণ হারান। প্রতিবাদে ২৯ সেপ্টেম্বর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করেছিল ভারত। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা অঞ্চলে জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়েতে সিআরপির কনভয়ের ওপর হামলা চালায় পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ। তারই প্রতিশোধ নিতে ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম মঙ্গলবার ভোররাতে ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ অতিক্রম করল ভারতীয় জঙ্গিবিমান। পাকিস্তানের ৮০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে জইশ-ই-মোহাম্মদের বহু শিবির উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দাবি করে ভারত বলছে, আড়াই শ থেকে তিন শ জঙ্গি ওই হামলায় নিহত হয়েছে। পাকিস্তান বলেছে, সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে জবাব দেওয়া হবে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে বলা হয়েছে, এখন আমাদের কাছ থেকে জবাবের অপেক্ষায় থাকার পালা ভারতের।
নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে ভারতীয় বিমানবাহিনীর জঙ্গিবিমান মঙ্গলবার পাকিস্তানের বালাকোটে যে হামলা চালিয়েছে, তাতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কে উত্তেজনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই উত্তেজনার ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কই যে অন্যদিকে মোড় নেবে তা নয়; আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। বিশ্বশান্তির জন্যও এই উত্তেজনা হুমকি হতে পারে। দুই দেশের এই যুদ্ধ যুদ্ধ ভাবের মধ্যে দুই পক্ষকেই শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে চীন।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ও যুদ্ধ পরিস্থিতি এই উপমহাদেশের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। উভয় দেশকেই বুঝতে হবে, আজকের দিনে যুদ্ধ নয়, শান্তিই বদলে দিতে পারে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের চেহারা। বাগ্যুদ্ধে শামিল না হয়ে উভয় দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমরা মনে করি।