হস্ত পরাগায়ন কাজে আসেনি আমতলীর সাড়ে তিন হাজার তরমুজ চাষী নিঃস্ব

প্রথম পাতা » বরগুনা » হস্ত পরাগায়ন কাজে আসেনি আমতলীর সাড়ে তিন হাজার তরমুজ চাষী নিঃস্ব
শনিবার ● ১৬ এপ্রিল ২০২২


তরমুজ শূন্য ক্ষেত, উপজেলার সোনাখালী থেকে ছবিটি তোলা হয়েছে।

আমতলী সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
হস্ত পরাগায়নের মাধ্যমে তরমুজের ফল ধরানো পদ্ধতি অবলম্বন করেও কাজে আসেনি। গাছে ফল ধরেনি। এতে আমতলী উপজেলার অন্তত সাড়ে তিন হাজার তরমুজ চাষি নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে তারা ঘুরছে। বিপাকে পড়েছে দাদনে সার বিক্রি করা মহাজনরা। নিঃস্ব চাষিরা সরকারীভাবে সহায়তার দাবী জানিয়েছেন।
আমতলী কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আঠারোগাছিয়া, হলদিয়া, সদর, চাওড়া, কুকুয়া ও গুলিশাখালী ইউনিয়নের ৫ হাজার তরমুজ চাষি এ বছর ৩ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। চাষিদের নিরলস প্রচেষ্টায় তরমুজ গাছ ভালো হয়েছে। কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধেছিল। নিম্নমানের বীজ রোপণ ও অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে তরমুজ গাছে প্রচুর ফুল ধরলেও ফল ধরেনি। উপজেলার অন্তত ৭০ ভাগ তরমুজ খ্েেতর এমন অবস্থায় কৃষি বিভাগ হস্ত পরাগায়নের পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু হস্ত পরাগায়ন পদ্ধতি অবলম্বন করেও কাজে আসেনি। গাছে ফলন না ধরায় অন্তত দের শত কোটি টাকা লোকসান হবে বলে দাবী কৃষকদের। ফলে উপজেলার সাড়ে তিন হাজার তরমুজ চাষী নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে তারা ঘুরছেন। দাদন নেয়া চাষিরা ঋণ পরিশোধের ভয়ে গাঢাকা দিয়েছেন। এছাড়া মহা বিপাকে পরেছে কৃষকদের দাদনে সার বিক্রি করা মহাজনরা। অপর দিকে আগাম তরমুজ  চাষে বেশ সফলতা পেয়েছেন কয়েক’শ চাষী। নিঃস্ব চাষীরা সরকারী সহায়তার দাবী জানিয়েছেন।
শনিবার চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা, চন্দ্রা, হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ রাওঘা, কুকুয়ার কৃষ্ণ নগর, আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী, গুলিশাখালী, হলদিয়া ও টেপুড়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মাঠ ভরা তরমুজ ক্ষেত। গাছে তরমুজ নেই। গাছের অধিকাংশ পুড়ে গেছে।
হলদিয়া ইউনিয়নের টেপুরা গ্রামের কৃষক মোঃ আবুল কালাম মাষ্টার বলেন, ধার দেনা করে তিন একর জমিতে পৌনে দুই লক্ষ টাকা খরচ করে তরমুজ চাষ করেছিলাম কিন্তু এক টাকাও বিক্রি করতে পারিনি। হস্ত পরাগায়ন করেও কোন কাজে আসেনি। কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবো সেই চিন্তায় ঘুম হারাম? স্ত্রীর ব্যবহৃত গহনা বন্ধক রেখেছি। সরকারী সহযোগীতা পেলে কিছুটা হলেও চাষীরা ঘুরে দাড়াতে পারবেন বলে জানান তিনি।
ওই গ্রামের চাষি মজিবর শেখ বলেন, মোর সব শ্যাষ অইয়্যা গ্যাছে। পাবনা মহাজনের গোলে ছয় লাখ টাহা দাদন আনছি। নিজের টাহা খুওয়াইছি। এ্যাহন কি হরমু হেই চিন্তা হরি। ঋণের দায়ে পালাইয়্যা যাইতে অইবে। তিনি আরো বলেন, কি দিয়া মুই ঋণ দিমু কইতে পারি না। হ্যারপর দাদনে সার আনছি হ্যাগো কি কমুন? মুই সরহারী সাহায্য চাই।
রাসেল ফকির বলেন, বলে লাভ নেই ভাই সব শেষ হয়ে গেছে। পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ৯ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম কিন্তু ছয় একর জমিতে কিছুই হয়নি। গাছ পুড়ে গেছে। তিন একর জমিতে কিছু হয়েছে তাকে কি হবে। এ বছর অন্তত চার লক্ষ টাকা লোকসান হবে।
পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের বাহাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ধার দেনা করে এ বছর ৮ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। গাছে তরমুজ হয়নি। অধিকাংশ গাছ পুড়ে গেছে। এতে অন্তত পাঁচ লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে।
তরমুজ ব্যবসায়ী মোঃ সোহেল রানা বলেন, এ বছরের মতন এমন অবস্থা তরমুজ চাষিদের কখনো হয়নি। তরমুজ চাষিরা পথে বসে গেছে। তিনি আরো বলেন, ঋণের বোঝা নিয়ে তরজুম চাষিরা দিশেহারা। অনেক চাষি ঋণের জন্য ইতিমধ্যে গাঢাকা দিয়েছেন। তিনি নিঃস্ব চাষিদের সরকারীভাবে প্রনোচনা দেয়ার দাবী জানান।
সোনাখালী গ্রামের কৃষক মজিবর হাওলাদার বলেন, মোর সব শ্যাস অইয়্যা গ্যাছ্,ে মুইএ্্যাহন কি হরমু? দুই লাখ টাহা ধার কইর‌্যা তরমুজ দিছি সেই খ্যাতে তরমুজ অয়নি। প্রধানমন্ত্রী যদি মোরো সাহায্য না হবে মোর দ্যশ ছাইরা পলাইয়্যা যাইতে অইবো। মৃউ সরকারের কাছে সাহায্য চাই।
কৃষক হাসান মৃধা বলেন, ধার দেনা করে তরমুজ চাষ করেছি কিন্তু তরমুজ হয়নি।
লিয়াকত হাওলাদার, মিলন চৌকিদার, শাহীন মৃধা, ওহাব মৃধা, মোকলেস মৃধা, কালাম, মামুন ও  জহিরুল বলেন, তরমুজতো হয়নি এখন কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবো সেই চিন্তায় ঘুম হারাম।
রাওঘা গ্রামের চাষি মজিবর মৃধা বলেন, তিন একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি কিন্তু কিছুই হয়নি।
হলদিয়া গ্রামের কৃষক শাহ আলম খান বলেন, খেতে তরমুজ হয়নি। গাছ পুড়ে গেছে। কিভাবে ঋণ শোধ করবো ভেবে পাচ্ছি না।
সফল তরমুজ চাষি ইউপি সদস্য আবু ছালেহ বলেন, টেপুড়া গ্রামের অন্তত দুই শতাধিক মানুষ তরমুজ চাষ করেছে। তার মধ্যে এক’শ ৫০ অধিক চাষীর খেতে তরমুজ হয়নি। গাছ পুড়ে গেছে। ওই চাষিরা নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে হবে।
হলদিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, হলদিয়া ও উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের অধিকাংশ চাষির খেতে তরমুজ হয়নি। কৃষি অফিসের পরামর্শে পরাগায়ন করেও লাভ হয়নি।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম বলেন, মান সম্মত বীজ রোপন করতে না পারা ও অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরাগায়ন ঘটেনি। ফলে গাছে তরমুজ হয়নি। সরকারীভাবে তরমুজের বীজ না সরবরাহ করায় বে-সরকারী কোম্পানীগুলো নষ্ট বীজ দিয়ে কৃষকদের সাথে প্রতারন করেছে। তিনি আরো বলেন, তরমুজ চাষাবাদের উত্তমাঞ্চল আমতলী ও তালতলী। এ অঞ্চলের তরমুজ দাষীদের প্রশিক্ষণসহ বীজ সরবরাহ করা গেলে তারা বেশ উপকৃত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫৬:২৩ ● ২০৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ