আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
কচুপাত্রা বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তুলে ঘর বরাদ্দে চাকামইয়া নদী দখল করে তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার এবং ইউএনও মোঃ কাওসার হোসেন গাইডওয়াল নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জাকির হোসেন বাবলু হাওলাদারের মাধ্যমে ঘর বরাদ্দে এ টাকা তুলে কাজ করছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় মাসুম বিল্লাহ নদী রক্ষায় বরগুনা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। দ্রুত নদী দখলে গাইডওয়াল নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দোকান বরাদ্দ বাতিলের দাবী জানিয়েছেন তিনি।
জানাগেছে, গত পাঁচ বছর পুর্বে তালতলী উপজেলার কচুপাত্রা বাজার সংলগ্ন চাকামইয়া নদী ও খাস জমি প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখল করে দোকানঘর ও ইমারত নির্মাণ করে। নদী ও খাস জমি দখল মুক্ত করতে গত বছর ৮ সেপ্টেম্বর উচ্ছেদ অভিযান চালায় বরগুনা জেলা প্রশাসন। ওই অভিযানে পাকা-আধাপাকা ১২৩টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। জেলা প্রশাসনের নদী ও খাস জমি দখল মুক্ত করার ৭ মাসের মাথায় তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার ও ইউ্ওনও মোঃ কাওসার হোসেন নদী দখল করে গাইডওয়াল নির্মাণ শেষে ঘর বরাদ্দের উদ্যোগ নেয়। অভিযোগ রয়েছে ঘর বরাদ্দে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওর নির্দেশে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বাবলু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অন্তত ১০ লক্ষ টাকা আদায় করেছেন । ওই টাকা দিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু, তার ফুফাতো ভাই পান্না দফাদার ও ইউপি সদস্য সেলিম মৃধা সড়ক রক্ষার নামে গাইডওয়াল নির্মাণ করছেন। বাস্তবিক পক্ষে নদী দখল করে ঘর নির্মাণের জন্যই গাইডওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে এমন অভিযোগ স্থানীয় বেল্লাল মুন্সি, জাকির হোসেন, ইলিয়াস মুন্সি ও সিদ্দিকুর রহমানের। স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার ও ইউএনও মোঃ কাওসার হোসেন দোকান বরাদ্দ দিতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা তুলেছেন। ওই টাকা হজম করতেই নদী দখল করে গাইডওয়াল নির্মাণ করাচ্ছেন। তালতলী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে খোজ নিয়ে জানা গেছে, কচুপাত্রা বাজারের সড়ক রক্ষায় কোন গাইডওয়াল নির্মাণে প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, কচুপাত্রা বাজার সংলগ্ন চাকামইয়া নদীর ব্রীজের পুর্ব ও পশ্চিম পাশে সড়ক থেকে অন্তত ১৪ ফুট নদীর ভিতরে গাইডওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। ১২ ফুট দুরত্ব অন্তর অন্তর ২০ টি পিলারের নির্মাণ কাজ চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ ওই ২০ টি পিলারে ২০ টি দোকান ঘর বরাদ্দ দিতেই গাইডওয়াল নির্মাণ করা হয়। তারা আরো অভিযোগ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও যোগসাজসে অন্তত শতাধিক দোকান বরাদ্দ দিতে মোটা অংকের টাকা আদায় করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ঘর বরাদ্দে চাহিদা ভেদে এক থেকে দের লক্ষ টাকা নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে গাইডওয়াল নির্মাণ বাবদ ২০ হাজার টাকা। ওই টাকা দিয়েই গাইডওয়াল নির্মাণ কাজ চলছে।
স্থানীয় মোঃ খোকন মিয়া বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রেজবি-উল করিম জোমাদ্দার ও ইউএনও মোঃ কাওসার হোসেন সড়ক রক্ষায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বাবলুর তত্ত্বাবধানে ইউপি সদস্য সেলিম মৃধার মাধ্যমে গাইডওয়াল নির্মাণ করাচ্ছেন।
ব্যবসায়ী মিরাজ ও মহিউদ্দিন বলেন, পজেশন বরাদ্দ দেয়ার কথা বলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও গাইডওয়াল নির্মাণ করছেন।
বায়েজিদ সিকদার, আব্দুল হাকিম ও আব্দুল হাই বলেন, গাইডওয়াল নির্মাণে সরকারী কোন অর্থ বরাদ্দ নেই। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও ব্যবসায়ীদের পুর্ণবাসনে নদী দখল করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তুলে গাইডওয়াল নির্মাণ করছেন।
মিস্তুরী জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও নির্দেশে কাজ করছি। তবে স্থানীয় সেলিম মৃধা কাজের মজুরীর টাকা দিচ্ছেন।
কচুপাত্রা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইউপি সদস্য সেলিম মৃধা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বাবলুর কিছু টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও গাইডওয়াল নির্মাণ করতে আমাকে কাজের তদারকির দায়িত্ব দিয়েছেন। তাই কাজ দেখাশুনা করছি। কিন্তু এ কাজে সরকারী কোন অর্থ বরাদ্দ নেই। কিভাবে কাজ করাচ্ছেন সেটা আমার জানা নেই।
শারিকখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ জাকির হোসেন বাবলু বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও আমাকে গাইডওয়াল নির্মাণ কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশ মতে কাজ করছি।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কাওসার হোসেন বলেন, উপজেলা পরিষদেও সমন্বয় সভায় কচুপাত্রা বাজারের সড়ক রক্ষায় নদীতে গাইডওয়াল নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল কিন্তু অর্থ বরাদ্দ হয়নি। ওই বাজারের সড়ক রক্ষায় গাইডওয়াল নির্মাণ কাজ হচ্ছে কিনা আমার জানা নেই।
তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রেজবি-উল কবির জোমাদ্দারের সাথে মুঠোফোনে (০১৭১১৯৭৯০৯৫) যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর