আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
আমতলী উপজেলার ফসলি জমির উর্বর মাটি ইটভাটার গ্রাসে যাচ্ছে। কৃষকরা ইটভাটার মালিকদের প্রলোভনে পরে দেদারসে জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি বিক্রি করছেন। এতে হুমকিতে ফসলি জমির আবাদ । কৃষিবিদরা বলেছেন, এভাবে মাটি কাটায় ফসলি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। দ্রুত মাটি কাটা বন্ধ না হলে কৃষি উৎপাদন বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পরবে।
জানাগেছে, উপজেলার আমতলী সদর, হলদিয়া, চাওড়া, কুকুয়া, গুলিশাখালী, আঠারগাছিয়া ইউনিয়নে ঝিকঝ্যাঁক ও ড্রাম চিমনি পদ্ধতির ২৩ টি ইটভাটা রয়েছে। এ ইটভাটা গুলোতে বছরে অন্তত ২০ কোটি ইট পোড়ানো হয়। ইট পোড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় মাটি ভাটার মালিকরা ফসলি জমি কেটে আনছে। আবার অনেকে ইটভাটায় মাটি বিক্রির জন্য কৃষি জমি কেটে পুকুর ও খাল খনন করেছেন। এর ফলে হাজার হাজার একর কৃষি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। ফসলি জমির মালিকরা না বুঝে ইটভাটির মালিকদের প্রলোভনে পরে দেদারসে মাটি বিক্রি করছেন। গত বছর যারা ফসলি জমির মাটি বিক্রি করছেন ওই জমিতে আমনের মৌসুমে ভালো ফসল হয়নি বলে জানান কৃষকরা।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রন আইন-২০১৩, মাটির ব্যবহার হ্রাসকরণ নিয়ন্ত্রন আইনে উল্লেখ আছে, ইট প্রস্তুতের জন্য ইটভাটার মালিকরা কৃষি জমি, পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করিতে পারিবে না। যদি কোন ব্যক্তি ৫ এ উপধারা (১) এ বিধান লঙ্ঘণ করিয়া ইটভাটা প্রস্তুত করনের উদ্দেশ্যে কৃষি জমি বা পাহার বা টিলা হইতে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করিয়া ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করেন তা হইলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বছরের কারাদন্ড বা অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।
ইটভাটার মালিকরা এ আইনের তোয়াক্কা না করে ফসলি জমি (কৃষি) থেকে মাটি সংগ্রহ করে ইট ভাটার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছেন।
রবিবার আমতলী উপজেলার রায়বালা, ফকিরবাড়ী, বান্দ্রা, ছোট নীলগঞ্জ, খলিয়ান, ঘটখালী, কালিবাড়ী, হলদিয়া, তালুকদার বাজার, চাউলা, সোনাখালী ও বাদুরা ঘুরে দেখা গেছে, ট্রলার ও ট্রলি বোঝাই করে শ্রমিকরা দেদারসে মাটি কেটে বিভিন্ন ইট ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে।
কৃষক আবদুল আজিজ মিয়া (৭০) বলেন “ মোগো এ্যালাকায় মানে হ্যাগো জমির মাটি বেইচ্ছা হালাইছে, কেউ সরল জমি কাইট্টা পুহোইর হরছে, মুই জমি’র মাডি কাইটা সর্বনাশ করুমু না”।
ছোট নীলগঞ্জের বাদল চন্দ্র বলেন, অনেকে জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করছেন।
কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, গত বছর ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে ভুল করেছি। ওই জমিতে এ বছর ভালো ফসল হয়নি।
রায়বালা গ্রামের এডিবি ইটভাটার মালিক নুরুজ্জামান বলেন, ইটভাটার মালিকরা জমির মালিকের কাছ থেকে মাটি ক্রয় কওে না। তারা দালালের মাধ্যমে মাটি ক্রয় করেন। তিনি আরো বলেন, দালালরা মাটি ক্রয় করে ভাটায় পৌছে দেয়।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম বলেন, কৃষি জমি’র উপরের ৬ ইঞ্চি থেকে দেড়ফুট পর্যন্ত মাটির উপরিভাগে জৈব পদার্থ থাকে। এ জৈব পদার্থ জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। ফলে অধিক পরিমানে ফসল হয়। জমির উপরের মাটি কেটে নেয়ায় জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। দ্রুত ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ না হলে ফসল আবাদ বিপর্যয়ের মুখে পরবে।
এমএইচকে/এমআর