গৌরনদীতে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাজাকার!

প্রথম পাতা » বরিশাল » গৌরনদীতে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাজাকার!
বুধবার ● ২৩ মার্চ ২০২২


গৌরনদীতে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাজাকার!

গৌরনদী (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার গেজেটভূক্ত মুক্তিযোদ্ধা আঃ হালিম সরদারকে রাজাকার দাবি করে তার মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিলের জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী ও জামুকাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।  উপজেলার বার্থী তাঁরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আঃ হালিম বেপারী (৬৮) সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী ও বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য’র বরাবরে এ লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করা হয়েছে। হালিম সরদারকে স্থানীয় সংসদ সদস্যর প্রতিনিধি’র পদ ও গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেওয়ায় অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
লিখিত আবেদনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আঃ হালিম বেপারী উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালের আগষ্ট মাসে গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের নন্দনপট্রি গ্রামের মৃত রেয়াজউদ্দিন সরদারের পুত্র রাজাকার হালিম সরদার (৬৯) রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করেন। সে ছিল গৌরনদী রাজাকার বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড। পরবর্তিতে রাজাকার হালিম তার আপন চাচা মোবারক সরদার, একই গ্রামের নেয়াল খান, একাব্বর দেওয়ানসহ গ্রামের ৮জনকে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করেছিল। তৎকালীন সময়ে রাজাকার হালিম সরদার গৌরনদী থানার লতিফ দারোগার সহায়তায় থানা থেকে অস্ত্র এনে থানা সংলগ্ন গোবিন্দ বণিকের বাড়ির পাশে মাঠে রাজাকারদের প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে রাজাকার হালিম সরদারের নেতৃত্বে পাক হানাদাররা গৌরনদী, টরকী বন্দরসহ আশপাশের এলাকায় ধর্ষণ ও লুটপাটসহ নানান অপকর্ম করেছে। এক পর্যায়ে  মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করলে ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে রাজাকার হালিম সরদারসহ তার সহযোগী রাজাকাররা সরকারি গৌরনদী কলেজ পাক হানাদার ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। যুদ্ধকালীন পুরো সময়ে বিভিন্ন এলাকায় পাক হানাদারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে কাজ করেছে রাজাকার হালিম সরদার।
দেশ স্বাধীনের পর রাজাকার হালিম সরদার এলাকায় এসে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে এলাকায় বসবাস শুরু করে করে। পরবর্তিতে ক্ষিপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি জানতে পারায় রাজাকার হালিম  সরদারকে মেরে ফেলার জন্য ধরে নিয়ে আসে। তখন হালিম সরদার ক্ষমা চেয়ে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে কান্নাকাটি করলে আমার সুপারিশে মুক্তিযোদ্ধারা তাকে ক্ষমা করে দেন। ক্ষমা ও ছাড়া পেয়ে রাজাকার হালিম পালিয়ে গিয়ে রেলওয়েতে কর্মরত তার চাচার নিকট রাজবাড়িতে আশ্রয় নেন। চাচা তাকে রেলওয়েতে চাকুরী দেন। চাকুরীকালিন অনিয়ম ও দূর্নীতি করে অবৈধ টাকার মালিক হন এবং ২০১৪ সালে টরকীতে ফিরে এসে তহসিল অফিসের সামনে একটি মার্কেট তৈরি করে। প্রায় ৪৫বছর পর গৌরনদীতে ফিরে পুনরায় বসবাস শুরু করেন। ওই সময় রাজাকার হালিম সরদার মোটা অংকের লেনদেন করে  মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভূক্ত হন।
লিখিত আবেদনে আরো বলা হয়, রাজাকার হালিম সরদার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভূক্ত হয়ে ভাতা গ্রহন করছে। সাম্প্রতিক সময়ে এমপি মহোদয়ের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে এবং গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক পদে রাজাকার হালিম অধিষ্ঠিত। জীবনের শুরু থেকে আমি ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি তখন মর্মাহত ও ব্যথিত হই যখন দেখি, ”মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাজাকার লুটেরা, ধর্ষণকারী, স্বাধীনতা বিরোধীরা আ’লীগে ঠাই নিয়েছে”। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একটি বড় রাজনৈতিক দলে রাজাকার হালিম পদ পদবি নিয়ে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে যা দেখে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে শুধু রক্তক্ষরনই হয় না বিষয়টি প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য লজ্জাজনক ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হালিম সরদার একজন চিহ্নিত রাজাকার। দেশ স্বাধীনের পরে পালিয়ে গিয়ে ৪৫ বছর পর এলাকায় ফিরে টাকার জোড়ে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভূক্ত হয়ে দাপটের সঙ্গে সবাইকে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তার গেজেট বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে আঃ হালিম সরদার বলেন, তদন্ত করলে আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রমানিত হবে। আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য একটি কুচক্রী মহল চেষ্টা করছে।

বিকেএস/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:৪৭:৫৩ ● ১৯১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ