জাহিদ রিপন, (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
নানা প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষে ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রীড যুক্ত হয়েছে দেশের প্রথম কয়লা ভিত্তিক ১৩শ’ ২০ মেঘাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পরিবেশ বান্ধব আলট্রা সুপার ক্রিটাক্যাল প্রযুক্তির ব্যবহারে র্নিমিত এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনে আসায় দেশের বিদ্যুৎ খাতে যুক্ত হয়েছে এক নতুন মাইল ফলক। সোমবার (২১ মার্চ) প্রকল্প এলাকায় উপস্থিত থেকে এর অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৩তম আলট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর দেশে প্রবেশ করেছে।
পায়রা ১৩শ’ ২০ মেগাওয়য়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্ভোধনের পাশাপাশি দেশের প্রতিটি ঘরে শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্ভোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। জেলার দ্বীপ উপজেলা রাংগাবালীর দীর্ঘ বছরের প্রত্যাশার বিদ্যুৎ সরাবারহ সহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প পরিদর্শন, ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ও উদ্ভোধন করবেন।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমর্পোট অ্যান্ড এক্সর্পোট করপোরশনের (সিএমসি) মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় কয়লা ভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) নামে যৌথ কোম্পানি গঠন করা হয়। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে অধিগ্রহন করা হয় ১ হাজার একর জমি। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের র্নিমান কাজ। র্নিমানে ব্যায় হয়েছে ১৯ হাজার ৯শ‘ ৭৫ কোটি টাকা। যার প্রায় ৮০ শতাংশ ঋণ হিসাবে দিয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক।
এদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র র্নিমানের ফলে
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন প্রায় ১৩ হাজার টন কয়লা। যা ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে জাহাজের মাধ্যমে সরাসরি বন্দরের নিজস্ব টার্মিনালে আসছে। কয়লাবাহী ওই জাহাজ থেকেই সরাসরি কনভেয়ারের মাধ্যমে কোল্ড ডোরে পৌঁছে যাচ্ছে। এখানেই হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের সুযোগ নেই, এমন দাবী বিসিপিসিএল’র কর্মকর্তাদের।
কর্মকর্তারা আরো জানান, জ্বালানি সাশ্রয়ী পরিবেশ বান্ধব ক্লিন কোল প্রযুক্তির এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দক্ষতা ৪৪.২৯ শতাংশ। সালফার নি:সরণ নিয়ন্ত্রণ করতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে স্থাপন করা হয়েছে ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন। একই সাথে ফ্লাই অ্যাশ কমাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে ৯৯ শতাংশ দক্ষতা সম্পন্ন ইলেক্ট্রো স্ট্যাটিক প্রসিপিটেটর।
বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষে ২০২০ সালের ১৫ মে উৎপাদনে আসে এ প্রকল্পের ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন প্রথম ইউনিট। একই বছরের ৮ ডিসেম্বর উৎপাদনে আসে একই সক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট। গোপালগঞ্জের সাব-ষ্টেশনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে এ বিদ্যুৎ যুক্ত হয়েছে জাতীয় গ্রীডে। এজন্য প্রকল্প এলাকা থেকে গোপালগজ্ঞ পর্যন্ত ১৬০ কিলোমিটারের দুটি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু গোপালগঞ্জের গ্রীড থেকে ঢাকার আমিনবাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় অপাতত: দ্বিতীয় ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবারহ করা যাচ্ছেনা।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মোট সক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহৃত হওয়ায় বেসরকারি এ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট করতে হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে। এতে সরকারের লোকসান হলেও বিসিপিসিএল’র কোনো লোকসান হচ্ছে না।
বিসিপিসিএল’র নির্বাহী প্রকৌশলী রেজওয়ান ইকবাল খান জানান, পদ্মায় রিভার ক্লোসিং লাইন নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। ডিসেম্বরে মধ্যেই এ কাজ শেষ হবে। জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে এ কেন্দ্রের ১৩শ’ ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
বিসিপিসিএল’র প্রকল্প পরিচালক শাহ গোলাম মওলা বলেন, বাংলাদেশ নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমর্পোট অ্যান্ড এক্সর্পোট করপোরশনের (সিএমসি) সম-অংশিদারিত্বে আরো একটি ১৩শ’ ২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ এবং জামার্নির সিমেন্স কোম্পানীর সাথে এলএনজি ভিত্তিক ৩৬শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ভিন্ন দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় র্নিমানের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এসব প্রকল্প দেশের বিদ্যুতের চাহিদার উপড় নির্ভর করে র্নিমান করা হবে।
স্বপ্নের ঠিকানা আবাসন প্রকল্প: বিদ্যুৎকেন্দ্র র্নিমানের ভূমি অধিগ্রহনের ফলে ১৩০ পরিবার হারায় বসতভিটা। এসব পরিবারকে পুর্নবাসনে প্রকল্প এলাকার পাশেই ৪৮ বিঘা জমির উপড় গড়ে তোলা হয়েছে স্বপ্নের ঠিকানা আবাসন। আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্বলিত এ আবাসনে পূর্নবাসিত করা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ ১৩০টি পরিবারেকে। এটিও ভূমি অদিগ্রহন ইতিহাসের এক নতুন মাইল ফলক।
উৎসব মুখর পরিবেশ: এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে পায়রা তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় বিরাজ করছে উৎসব মুখর পরিবেশ। এদিন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনাচারন, নদী-খাল-সাগরভিত্তিক জীবিকা ও অর্থনীতিকে প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরতে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় প্রস্তুত করা হয়েছে ২২০টি নৌকা। বরিশাল চারুকলা ইনষ্টিটিউটের ১০ শিক্ষার্থীর রং-তুলির ছোঁয়ায় নানা রংয়ে সজ্জিত এসব নৌকার ১শ‘ টি থাকবে পালতোলা, ১শ‘ নৌকায় থাকবে প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত ব্যানার ফেষ্টুন এবং বাকি ২০টি নৌকায় থাকবে নিরাপত্তাকর্মীরা।
জেআর/এমআর