বামনা(বরগুনা)সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনার বামনায় সয়াবিন তৈলের সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছে ভোক্তা সাধারণ। সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে রমজানের আগেই হঠাৎ করে বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নিচ্ছে। ফলে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। বাজার থেকে খোলা সয়াবিনের পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপের বসুন্ধরা’, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল লি: কোম্পানির ‘রুপচাঁদা’, সিটি গ্রুপের তীর ও সান’ এসব কোম্পানির পাঁচ ও তিন লিটারের বোতলের সরবরাহ কমে গেছে।
এ সংকটে ক্রেতাদের হয়রানির শিকার ও বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। সাহেব বাড়ী বাজারের মুদি দোকানদার খোকন জানান, ‘সরবরাহ না থাকায় বেশি দামে সয়াবিন তৈল কিনে ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এখানে আমার কিছুই করার নেই। মহাজন (ডিলার) বেশি দাম নিলে আমার কী করার আছে। ‘বসুন্ধরার গ্রুপের হাতে গোনা দুই-চারটি দোকানে পাঁচ লিটারের সয়াবিনের বোতল পাওয়া গেলেও ডিলাররা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বোতল প্রতি ৩০ থেকে ২৫ টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় বিক্রেতারা আরও বেশি দাবি করছেন। খুচরা বিক্রেতা এক সপ্তাহ আগেও যেখানে বসুন্ধার ডিলার ৫ লিটারের ৬৯৫ টাকার তৈলের বোতল প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা লাভে তাদের কাছে বিক্রি করতো। আর এখন সেখানে গায়ের দরের চেয়ে ৫ টাকা লাভ দিয়ে বিক্রি করছে। তাও চাহিদামত পাওয়া যাচ্ছেনা। বরং দাম বাড়ার পরেও আতঙ্কে রমজানকে সামনে রেখে কেনার হিড়িক পড়েছে।
একাধিক ক্রেতা অভিযোগ করেন, প্রতি ডিলার আবার কিছু বিক্রেতা দুটি দুই লিটার এবং একটি এক লিটার বোতল ক্রেতাদের ধরিয়ে দিচ্ছেন। রোজার আগেই তেলের বাজার অস্থির হয়ে ওঠায় সাধারণ মানুষের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে সার্বিক বাজার পরিস্থিতি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি তুলছেন ক্রেতারা। সোমবার বামনার বিভিন্ন বাজার এলাকায় পাইকারি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহ থেকে প্রতিটি দোকানে পাঁচ ও তিন লিটারের সয়াবিন তৈলের বোতল সরবরাহ কম থাকলেও এক ও দুই লিটার বোতলজাত সয়াবিন তৈল রয়েছে। ক্রেতারা একাধিক বোতল নেবেন, তার দামও বিক্রেতারা বেশি চাচ্ছেন। হঠাৎ তৈল নিয়ে বাজারজুড়ে নৈরাজ্য চললেও মনে হয় দেখার কেউ নেই?
ক্রেতা গৃহিণী মনি আকতার জানান, তারা প্রতি মাসে পাঁচ লিটার বোতলের সয়াবিন তৈল কেনেন। কিন্তু সামনে রমজানের কারণে আরও বেশি তৈল কিনতে চান। কিন্তু কোনো দোকানী চাহিদামত বোতল দিচ্ছেন না। দাম নিয়ে তো কোন কথাই নেই। যা নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলেগেছে।
তৈলের একাধিক মহাজন (ডিলার) জানান, তারা কোম্পানির অনুকূলে চাহিদা অনুযায়ী পাঁচ ও তিন লিটারের সয়াবিন তেলের বোতলের জন্য টাকা পাঠিয়েছেন। তার পরেও তারা মাল পাচ্ছেন না। সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে খুচরা বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তৈল সরবরাহ করতে পারছেন না। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে না পারায় বাজারে তৈলের কিছুটা কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি তৈল কম্পানির মহাজন (ডিলার) বলেন, ‘কোম্পানি কেন তাদের চাহিদার বিপরীতে তৈল দিচ্ছে না তা আমরা জানি না। তৈলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার খবরে ক্রেতারাও বেশি করে বোতলজাত তৈল কিনে মজুদ করার কারণেও বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির সয়াবিন তৈলের সরবরাহ কমে যাওয়ায় হঠাৎ করে বাজারে আরো বেশি সংকট দেখা দিয়েছে। ‘
স্থানীয় একাধিক সচেতন নাগরিক আসন্ন রমজানে বাজার তদারকি বাড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান।
প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাসির মোল্লা বলেন, এখানকার বাজারে ভোজ্য তেলের সংকট চলছে। ডিলার ও ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় তৈল মওজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। ক্রেতাদের চোখে ধূলো দিয়ে গায়ের মুল্যের চেয়ে অধিকদামে বিক্রি করা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ অন্যায়। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোকে জরুরিভাবে পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি।
বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিবেক সরকার বলেন, ‘রমজানকে সামনে রেখে বাজার তদারকি বাড়ানো হবে। পরিস্থিতি নিরসনে প্রয়োজনে সাঁড়াশি অভিযানে মাঠে নামা হবে। যারা বাজারে সয়াবিন তৈলের সংকট তৈরি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে সরকার ন্যায্য মুল্যে পন্য ক্রয়ের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে টিসিবির মাধ্যমে পন্য বিক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে।
এইচআর/এমআর