দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসছে মৃত জেলিফিশ

প্রথম পাতা » কুয়াকাটা » দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসছে মৃত জেলিফিশ
বুধবার ● ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


---

কাজী সাঈদ, সাগরকন্যা রিপোর্ট॥
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের সঙ্গে ভেসে আসছে অসংখ্য মরা জেলিফিশ। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের একাধিক পয়েন্টে আটকে পড়ে আছে এ মাছগুলো। রবিবার থেকে বুধবার শেষ বিকেল পর্যন্ত সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য মরা জেলিফিশ বালুতে আটকে থাকতে দেখা গেছে। কোনটি আকারে ছোট, কোনটা বড়। দেখতে অনেকটা অক্টোপাসের মতো। তবে এগুলো কি কারণে মারা যাচ্ছে, এর সঠিক কারণ কেউ বলতে পারছে না।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কুয়াকাটা সৈকতের দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটারের একাধিক পয়েন্টে জোয়ারের পানির সঙ্গে অসংখ্য মরা জেলিফিশ ভেসে এসে আটকা পড়েছে। মরা এ জেলিফিশগুলো উৎসুক পর্যটকরা দেখতে পারছে না দুর্গন্ধের কারণে। বাতাসের বিপরীত দিকে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ দেখছেন। এভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে গোটা সৈকতে দুর্গন্ধ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় জেলেদের কাছে জেলিফিশ সাগরের ‘লোনা’ হিসেবে পরিচিত। গভীর সমুদ্রে জেলেদের জালে এসব জেলিফিশ আটকা পড়ে মারা যেতে পারে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
আগত পর্যটক রায়হান জানান, তিনি জেলিফিশের নাম শুনেছেন, এই প্রথম দেখেছি। এ গুলো দ্রুত সরিয়ে না নিলে পঁচে সৈকতের পরিবেশ দূষিত করবে। জেলে মো.কাওসার হোসেন জানান, গত ৪/৫ বছর আগে তাদের জালে ব্যাপক পরিমান জেলিফিশ ধরা পড়েছিল। তারা জাল থেকে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছে।

এদিকে ফিশারিজ বিভাগের গভেষকদের মতে, জেলিফিশ গভীর সমুদ্রের মাছ। সমুদ্রের পানিতে কোনো বিপর্যয় বা পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলের কাছাকাছি চলে আসাটাই শঙ্কা। জেলিফিশ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। একটি প্রজাতি মিঠাপানিতে পাওয়া যায়। এরা সাধারণত পানির উপর ভাগে ভাসমান অবস্থায় থাকে। গভীর সমুদ্রে হরেকরকম জাত রয়েছে। এদের বিশেষ ধরণের দংশন কোষ আছে। যাকে ইরেজিতে jellyfish (জেলিফিশ) বলে। বহির্বিশ্বে এটার বাজারমূল্য অনেক বেশি। উন্নতমানের হোটেলে উৎকৃষ্টমানের খাবার হিসেবে বিক্রি হয় মাছগুলো। এগুলো স্পর্শ করলে শরীর চুলকায়, এমনকি ঘা হয়ে যেতে পারে। বিশেষ কোষের কামড়ে মানুষ মারাও  যেতে পারে। কুয়াকাটা সৈকতে আটকে মরে যাওয়া জেলিফিশগুলো পচে গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দূষিত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তাই কাঠ বা লোহা দিয়ে তুলে এ মাছগুলো বালুতে পুঁতে ফেলা উচিত বলে পরিবেশবিদরা মত দিয়েছেন।
কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো.কামরুজ্জামান বলেন, আমিও গত কয়েকদিন যাবৎ সৈকতের একাধিক পয়েন্টে অসংখ্য জেলিফিশ বালুতে আটকে পড়ে থাকতে দেখছি। এ মাছগুলো বালুর নিচে চাপা দিলে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াবে না।
কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা জেলেদের বরাত দিয়ে বলেন, ‘গত কয়েক দিন থেকে এসব জেলিফিশ উপকূলের কাছাকাছি এসে জেলেদের জালে আটকা পড়েছে। পরে জাল থেকে জেলেরা ফেলে  দেওয়ায় মরা মাছ কুয়াকাটা সৈকতের বেলাভূমিতে আসতে শুরু করেছে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এ বিষয়ে কোন গবেষণা না থাকায় বিষয়টি সম্পর্কে পরিস্কার কিছু বলা যাচ্ছে না।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আঃ বারেক মোল্লা জানান, মৃত জেলিফিশের কারণে পর্যটকদের যাতে কোন ক্ষতি না হয়, সেজন্য এ গুলো সরিয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, জেলিফিশ বিভিন্ন প্রজাতির। দলবদ্ধভাবে চলাফেরার কারণে সমুদ্রে মৎস্য শিকারীদের জালে ধরা পড়ছে। জেলিফিশ কোনটি ডোরাকাটা আবার কোনটি একেবারে সাদা। এগুলোর শরীরের ৯০ ভাগই জল। জালে একবার আটকে গেলে তা ছাড়ানো সম্ভব হয় না। ফলে বেশিরভাগ সময়ই জেলেদের জাল সমুদ্র বক্ষে কেটে ফেলে দিতে বাধ্য হয়। কেননা, এসব জাল পুনরায় ব্যবহার উপযোগী থাকে না।
এ বিষয়ে কথা হয় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পাপড়ি হাজরা’র সাথে। তিনি, এ জলজ প্রাণীগুলো পচে সৈকতে আটকে থাকতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর চেয়ে বড় কথা হলো মাছগুলো মারা যাচ্ছে কেন তা নিয়ে গবেষণা করা দরকার।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে এ রকমের অসংখ্য জেলিফিশ কুয়াকাটা সৈকতের দিকে ধেয়ে এসেছিল। তখন স্থানীয় প্রশাসন ও জেলেদের যৌথ উদ্যোগে মাছগুলো বালুতে পুঁতে রাখা হয়েছিলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩৬:৫০ ● ৬৫১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ