সাগরকন্যা চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ॥
চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড্ডয়নের পরপরই জরুরি অবতরণ করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফাইট। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হলে ফাইটটি জরুরি অবতরণ করেন পাইলট। রবিবার সন্ধ্যা ছয়টার পর এ ঘটনা ঘটে। যে ব্যক্তি উড়োজাহাজটি জিম্মি করেছিলেন, পরে কমান্ডো অভিযানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে আটক করা হয়। দুই ঘণ্টার নাটকীয়তার পর ওই ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটকের খবর নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় জানা যায়নি।
এর আগে ময়ূরপঙ্খী নামের উড়োজাহাজটি ছিনতাইয়ের চেষ্টার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, আর্মড পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর সদস্যরা উড়োজাহাজের ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে ওই অস্ত্রধারীকে বের করে আনে। ১৪২ জন যাত্রী ও পাঁচজন ক্রু নিয়ে ফাইটটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাচ্ছিল।
ওই উড়োজাহাজের ভেতরে থাকা এক যাত্রীর সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উড়োজাহাজটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাত্রা করে। সেখান থেকে উড়োজাহাজটির দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর উড়োজাহাজটি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়।
সূত্রগুলো জানায়, উড়োজাহাজের ভেতরে অস্ত্রধারীরা অবস্থান করছেন। গুলির শব্দও পাওয়া যায়। এর পরপরই পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর সদস্যরা উড়োজাহাজটি ঘিরে রাখে। যাত্রীদের নিরাপদে বের করে আনা হয়েছে বলে জানান বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মিরাজ। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, উড়োজাহাজটি থেকে যাত্রী ও ক্রুরা বেরিয়ে গেছেন। কথিত অস্ত্রধারী উড়োজাহাজের ভেতরেই ছিলেন। তাঁর কাছে কী ধরনের অস্ত্র আছে কিংবা গোলাবারুদ আছে কিনা, সেটা স্পষ্ট নয়। নতুন উড়োজাহাজটিকে রা করাই প্রধান কাজ। উড়োজাহাজটিকে অত রেখে অস্ত্রধারীকে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।
শেষ খবরে জানা যায়, উদ্ধার কৌশল সফল হয়েছে। কোনো ধরনের য়তি ছাড়াই অস্ত্রধারী একজনকে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। বিমানটিতে থাকা একজন ক্রু জানান, সাড়ে চারটায় কিছু সময় পর ময়ূরপঙ্খী আকাশে প্রায় ১৫ হাজার ফুট ওপরে দিকে উড়ে যাচ্ছিল। তখন উড়োজাহাজের ভেতরে যাত্রীদের আসনে থাকা এক ব্যক্তি উঠে ককপিটের দিকে আসেন। এ সময় ওই ব্যক্তি এক ক্রুর কাছে যান। কাছে গিয়ে তিনি ওই ক্রুকে ধাক্কা দেন এবং সঙ্গে সঙ্গে একটি পিস্তল ও বোমাসদৃশ একটি বস্তু বের করে বলেন, ‘আমি বিমানটি ছিনতাই করব। আমার কাছে পিস্তল ও বোমা আছে। ককপিট না খুললে আমি বিমান উড়িয়ে দেব।’ এর মধ্যে অন্য কেবিন ক্রুরা ককপিটে থাকা পাইলট ও সহকারী পাইলটকে গোপনে সাংকেতিক বার্তা দেন যে, উড়োজাহাজে অস্ত্রধারী আছে, উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা হচ্ছে। ঠিক এ সময় উড়োজাহাজটি চট্টগ্রাম ও ঢাকার মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থান করছিল।
ওই ক্রু বলেন, উড়োজাহাজটি আকাশের ১৫ হাজার ফুটের কিছু ওপরে উড্ডয়ন করছিল। এর মধ্যে পাইলট মো. শফি ও সহকারী পাইলট মো. জাহাঙ্গীর চট্টগ্রামগামী উড়োজাহাজটির ককপিটের দরজা বন্ধ করে দেন এবং কৌশলে জরুরি অবতরণের জন্য চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে বার্তা পাঠান। উড়োজাহাজে থাকা একটি সূত্র জানিয়েছে, ককপিটের দরজা না খোলায় অস্ত্রধারী ব্যক্তিটি চিৎকার করছিলেন। একপর্যায়ে ওই অস্ত্রধারী উড়োজাহাজের ভেতরে ‘বিস্ফোরণের’ মতো ঘটান। ততণে উড়োজাহাজটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তবে ওই অস্ত্রধারী ফাইট স্টুয়ার্ট সাগরকে আটকে রাখে। উড়োজাহাজ অবতরণের পর কৌশলে উড়োজাহাজের ডানার পাশের চারটি ইমারজেন্সি গেট দিয়ে যাত্রীরা নেমে পড়েন।
উড়োজাহাজে থাকা এক যাত্রী জানিয়েছেন, তিনি নেমে আসা পর্যন্ত ক্রু সাগর ছাড়া ককপিটের ভেতরে তখন পর্যন্ত দুজন বৈমানিক ছিলেন। বাংলাদেশ বিমানের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১৬২ আসনের ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজে ইকোনমি কাসে ১৩৩ জন ও বিজনেস কাসে নয়জন যাত্রী ছিলেন। এ ছাড়া পাঁচজন ক্রু, এর মধ্যে দুজন নারী ছিলেন। ককপিটে দুজন পাইলট ছিলেন। উড়োজাহাজটির মডেল বোয়িং ৭৩৭-৮০০। উড়োজাহাজটি ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বহরে যুক্ত করা হয়।
এফএন/কেএন