বাউফল (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালীর বাউফল ও বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে একাধিক অবৈধ ইটেরভাটা। এসব ইটেরভাটায় ব্যবহার হচ্ছে ড্রাম চিমনি। প্রতিনিয়ত দক্ষিণাঞ্চলের বন উজাড় করে ইটেরভাটায় জ্বালানীর জোগান দেয়া হচ্ছে। আর বর্ষা মৌসুমে তেতুলিয়া ও কারখানা নদী তীরবর্তী এলাকার ফসলী জমির মাটি কেটে ইটের ভাটায় নেয়া হচ্ছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অবাধে অনুমোদন ছাড়াই এসব ইটের ভাটা পরিচালনা করলেও প্রশাসনের এ ব্যাপারে কোন মাথাব্যাথা নেই। বরং পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে অবাধে এসব ইটের ভাটা পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মীর মনিরুল ইসলাম। বিএনপির শাসনাআমলে এলাকার দোর্দন্ড প্রতাপশালী এই নেতা নিজের গ্রাম চর রঘুনদ্দিনে গড়ে তোলেন দুইটি ইটেরভাটা। এরপর থেকে বর্ষা মৌসুম এলেই তেঁতুলিয়া ও কারখানা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন ফসলী জমি থেকে মাটি কাটার মহোৎসবে মেতে ওঠেন মীর মনিরের লোকজন। আর শীতকালে বন উজার করে দেদারসে কাঠ পোড়ানো হয় তার ইটেরভাটায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তার একটি ভাটার অনুমোদন নেয়া হলেও অপরটি চলছে অনুমোদন ছাড়াই। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তার দুটি ভাটায় তৈরি ইটের সঠিক মাপও অনুসরন করা হয় না। অবশ্য মীর মনির এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ড্রাম চিমনি আমি ব্যবহার করি না। আর ভারত থেকে কয়লা এনে আমি ইট তৈরি করি। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, দাপুটে বিএনপি নেতা মীর মনিরের এই অবৈধ ব্যবসা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে গত কয়েক বছরে ওই এলাকার আলতাফ মৃধা, মীর মামুন, মাসুদ হাওলাদার, মানিক ম্যানেজার ও মন্নানসহ আরও কয়েক ব্যক্তি অনুমোদনহীন ইটেরভাটা গড়ে তুলেছেন। এসব ইটের ভাটার জন্য বর্ষায় দেদারসে চরাঞ্চল থেকে ফসলী জমির মাটি কাটা হচ্ছে আর শীতকালে কাঠপোড়ানোর মহোৎসব চলছে। সরেজমিন পরিদর্শনকালে জানা যায়, বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের চর রঘুনদ্দিন ও কবাই ইউনিয়নের পূর্ব শিয়ালঘূনি গ্রামে কারখানা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে একাধিক অবৈধ ইটেরভাটা। বরিশালের বাকেরগঞ্জ ও পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায় গড়ে ওঠা এসব ইটের ভাটায় ড্রাম চিমনির ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বনাঞ্চল উজাড় করে ট্রলি ও ট্রলারযোগে কাঠ এনে ইটভাটার জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ড্রাম চিমনির ধোয়ায় বাউফলের কাছিপাড়া, বাকেরগঞ্জের ফরিদপুর ও কবাই ইউনিয়নের পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে। উৎপাদনের পর অধিকাংশ ইট বাউফলের বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করা হচ্ছে। যথাযথ অনুমোদন না নেয়ায় এসব ইটেরভাটা থেকে মোটা অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বেপরোয়াভাবে এসব ইটেরভাটা পরিচালনা করায় প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। বাউফলের কাছিপাড়া আবদুর রশিদ (চুন্নু) মিয়া ডিগ্রী কলেজের সহকারি অধ্যাপক আবু হাসান মীরন বলেন, বর্ষা মৌসুমে দেদারসে মাটি কাটার ফলে কারাখানা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ভাঙণের তীব্রতা বেড়েছে। বন উজাড় হওয়ায় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের রহস্যজনক নিরবতায় আমরা হতাশ। তিনি বলেন, অনুমোদিত ইটের ভাটার ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হলেও তাদের লাঘাম টেনে ধরার উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। বিষয়টি দুঃখজনক। এ ব্যাপারে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আব্দুল হালিম বলেন, খুব শিগগিরই এসব অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এএস/এমআর