ওসমানীনগর (সিলেট) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
একটি উন্মুক্ত জলাশয়কে ঘিরে সিলেটের ওসমানীনগর-বিশ^নাথ উপজেলার দুই গ্রামবাসীর বিরোধ এখন চরম আকার ধারণ করছে। ওসমানীনগরের উমরপুর ইউনিয়নের মান্দারুকা গ্রামের মইডুবি নামীয়ও উন্মুক্ত জলাশয়টি স্বাধীনতার পর থেকে গ্রামবাসীরা সম্মেলিত ভাবে মৎস্য আহরণ করলেও অভিযোগ উঠেছে বিগত ৫বছর ধরে জোরপূর্বক ভাবে ওই জলাশয়টি অস্থায়ী ভাবে বিক্রি করে বা শুষ্ক মৌসুমে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে পানি শুকিয়ে মৎস্য শিকার করে নিচ্ছেন বিশ^নাথ উপজেলার কোনোরাই গ্রামের প্রভাবশালীরা। বিরোধকৃত জলাশয়টির সীমানা নির্ধারনসহ জটিলতা অবসানের বিষয়ে বিগত তিন বছর ধরে মান্দারুকা গ্রামবাসির পক্ষে সিলেট জেলা প্রশাসক ও ওসমানীনগরের ইউএনও বরাবরে বার বার লিখিত অভিযোগ দিয়ে কাজ হচ্ছে না। এতে কোনোরাই গ্রামের সংঘবদ্ধ প্রভাবশালীরা আরও বেপরোয়া হয়ে প্রতিবছর ঊন্মক্ত মইডুবি জলাশয় বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে পূর্ব মান্দারুকা গ্রামের বাসিন্দারা বাধাঁ দেয়ায় কোনারাই গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে মামলা-হামলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিগত ১৬ জানুয়ারী বিষয়টি নিয়ে সংঘাতের আশংঙ্কাসহ স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা কথা উল্লেখ করে ওসমানীনগরের মান্দারুকা গ্রামবাসীর পক্ষে সৈয়দ হাফিজ আলী ওসমানীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও মঙ্গলবার সেচের মাধ্যমে পানি শুকিয়ে জোরপূর্বক মাছ সংগ্রহের চেষ্ঠাসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মান্দারুকা গ্রামের সৈয়দ হাফিজ আলীর বাড়িতে হামলা করে কোনোরাই গ্রামের প্রভাবশালীরা। খবর পেয়ে ওসমানীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজিব দাশ পুরকায়স্থসহ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মইডুবি জলাশয় থেকে কোনোরাই গ্রামবাসীর শ্যালো মেশিন জব্দ করে নিয়ে আসেন এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে।
এলাকার প্রবীন ব্যাক্তিবর্গসহ স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন,বাপ-দাদার আমল থেকে ওই মইডুবি জলাশয়টি উন্মুক্ত হিসাবে ওসমানীনগরের মান্দারুকা ও বিশ^নাথে কোনোরাই গ্রামের বাসিন্দারা সম্মেলিতভাবে মৎস্য আহরণ করে আসছেন। বিগত ১০ বছর ধরে মান্দারুকা গ্রামবাসীকে বঞ্চিত করে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে অন্যদের কাছে বিক্রি করে যাচ্ছেন কোনোরাই গ্রামের প্রভাবাশালীরা। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে একাধিক সালিশ বৈঠক হলেও কোনোরাই গ্রামের প্রভাবশালীরা জোরপূর্বক অবৈধভাবে উন্মুক্ত জলাশয় দখল থেকে বিরত না থাকায় গ্রামের পক্ষ থেকে সীমানা নির্ধারনসহ প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলে ওসমানীনগর উপজেলা প্রশাসন এভাবে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করেনি।ফলে পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যেকোনো সময় উপজেলার দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের সৃষ্টিসহ নানা অঘটন ঘটার আশংঙ্কা বিরাজ করছে।
জানা যায়,ওসমানীগর উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের মান্দারুকা গ্রামের অদূরে মান্দারুকা মৌজার ১২৫৬,১২৫৭,১২,৫৮,১৯২১,১৯৯১,১৯৯২,২০২৯,২৩৪৭ দাগে এবং ইছবপুর মৌজার ১,১৫,২২ দাগে বিশ^নাথ ও ওসমানীনগর উপজেলার সীমান্তবর্তী স্থানে অবস্থিত মইডুবি ঊন্মুক্ত জলাশয় থেকে গ্রামবাসীরা সম্মেলিত ভাবে মৎস আহরণসহ জলাশয়ের পানি কৃষি কাজে ব্যবহার করে আসলেও বিগত কয়েক বছর ধরে বিশ^নাথ উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের কোনারাই গ্রামের প্রভাবশালীরা জোর পূর্বক ঊন্মক্ত জলাশয়টি দখলসহ অস্থায়ী ইজারা মাধ্যমে বিক্রি করে টাকা আদায় করছে আসছে। এ বিষয়ে ২০২০ সালের শেষ দিকে মান্দারুকা গ্রামবাসীর পক্ষে ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাররে লিখিত অভিযোগ প্রদান করে প্রতিকার না পাওয়ায় ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী সিলেট জেলা প্রশাসক কাছে আবারও লিখিত অভিযোগ প্রদান করলেও প্রশাসনের পক্ষ সীমানা নির্ধারনসহ জটিলতা অবসানের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। এতে এলাকার জনসাধারণকে বঞ্চিত করে মইডুবি ঊন্মুক্ত জলাশয়টি প্রতিবছরই অবৈধ্য ভাবে ইজারা দিয়ে ইজারাদারদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করার পাশাপাশি শুকোনো মৌসুমে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে জলাশয়ের পানি শুকিয়ে মৎস্য নিধন অব্যাহত রেখেছে।এতে মান্দারুকা গ্রামবাসী কোনো প্রকার বাধাঁ আপত্তি করলে তারা বিভিন্ন ভাবে হয়রানীর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
মান্দারুকা গ্রামের হাজি আরশ আলী, সৈয়দ হাফিজ আলী,দুলাল মিয়া ও সামছুদ্দিনসহ অনেকেই জানান, এতদাঅঞ্চলের সাধারণ বাসিন্দাদের মৎস্য অহরণের জন্য মান্দারুকা মইডুবি জলাশয়টি সরকারিভাবে ঊন্মুক্ত করে দেয়া হলেও কোনারাই গ্রামের প্রভাবশালীদের তান্ডবে বিগত ১০ বছর ধরে আমরা গ্রামবাসি বঞ্চিত হচ্ছি। মৎস্য নিধন আইনের তোয়াক্কা না তারা প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে পানি শুকিয়ে অবাধে মৎস্য শিকার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব নিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করায় কোনারাই গ্রামের হেলাল আহমদ,জায়েদ আহমদ,জামির আলী ও সুহেল আহমদের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে মঙ্গলবার জোর পূর্বক মৎস্য নিধনের পাশাপাশি গ্রামবাসীর উপর হামলা করছে।
বিশ^নাথের দেউকলস ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খায়রুল আমিন আজাদ বলেন,মান্দারুকা ও কোনারাই গ্রামবাসীর মধ্যে একে অন্যের প্রতি খুবই বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক রয়েছে। সীমানা নির্ধারনসহ মইডুবি জলাশয় নিয়ে বর্তমানে যেসব জটিলতা দেখা দিয়েছে আমরা তা নিরসনের চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম মাঈন উদ্দিন বলেন,অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। শান্তি শৃঙ্খলার বজায় রাখার জন্য স্থানীয়দের আহব্বানের পাশাপাশি অপ্রতিকর পরিস্থিতি এড়াতে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওসমানীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজিব দাশ পুরকায়স্থ বলেন,সরেজমিনে গিয়ে জলাশয়ের পানি শুকিয়ে মৎস্য শিকারের সত্যতা পাওয়ায় ব্যাবহৃত শ্যালো মেশিন জব্দ করা হয়েছে।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা বলেন,অভিযোগের তদন্তের পাশাপাশি মইডুবি জলমহালের সীমানা নির্ধারনের জেলা প্রশাসক স্যারের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।তবে হাওর বা জলাশয়ের পানি শুকিয়ে মৎস্য শিকার সম্পন্ন বেআইনী।সীমানা নির্ধারনসহ অন্যকোনো জটিলতা থাকুক বা না থাকুক কোনো অবস্থায়ই জলাশয় শুকিয়ে মাছ শিকার চেষ্টা করা হলেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেএ/এমআর