আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনার আমতলী উপজেলায় গ্রামাঞ্চলে তরমুজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। কৃষক পরিবার ঘরে বসে নেই। নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজে নেমে পরেছে। একটু যেন ফুরসুত নেই। গত বছর তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ায় এ বছর কৃষকরা তরমুজ চাষে বেশী আগ্রহী হচ্ছে। কিন্তু সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম বেশী থাকায় দিশেহারা কৃষক।
আমতলী কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার আঠারোগাছিয়া, হলদিয়া, সদর ইউনিয়ন, চাওড়া, কুকুয়া ও গুলিশাখালী ইউনিয়নে এ বছর ২ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষাবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছর ছিল ১ হাজার ৯’শ ৯০ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৫’শ ১০ হেক্টর জমিতে বেশী তরমুজ চাষ হবে আশা করছেন উপজেলা কুষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম। গত বছর তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ায় এ বছর কৃষকরা বেশী তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন। আমন ধান কাটা শেষ হতে না হতেই তরমুজ চাষিরা জমি চাষাবাদ করে বীজ বপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদিকে এ বছর সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম গত বছরের তুলনায় বেশী। দাম বেশী থাকায় কৃষকদের হিমশীম খেতে হচ্ছে। ৫০ কেজির এক বস্তা টিএসপি সার এক হাজার ৩’শ থেকে এক হাজার ৫’শ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বস্তা প্রতি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশী দামে সার কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। সরকারী ভাবে ৫০ কেজির এক বস্তা টিএসপি সারের দাম এক হাজার ১’শ টাকা। কিন্তু তরমুজ চাষে কৃষকরা বেশী আগ্রহী হওয়ায় সুযোগে সার ব্যবসায়ীরা ডিন্ডিকেট গড়ে বেশী দামে সার বিক্রি করছে এমন অভিযোগ কৃষকদের। অপর দিকে বাজারে এক কৌটা (১০০ গ্রাম) বিঘ ফ্যামিলি ৩০০০ টাকা, জাগুয়া ৩২০০ টাকা ও এশিয়ান বীজ ৩১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর একই বীজের দাম ছিল ২৫০০-২৭০০ টাকা।
সোমবার চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা, চন্দ্রা, হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ রাওঘা, কুকুয়ার কৃষ্ণ নগর, আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী, গুলিশাখালী গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা মাঠে কাজ করছে। মাঠের পর মাঠ চাষাবাদ করে তরমুজ বীজ বপনের জন্য গর্ত তৈরী করছে। এ কাজ করতে ঘরের নারী ও শিশুরাও বসে নেই। তারাও পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গাজীপুর বন্দর, কুকুয়া, আঠারোগাছিয়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন বাজারে বেশী দামে সার বিক্রি করছে সার ব্যবসয়ীরা।
পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের বাহাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, এ বছর ২৬ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। বীজ ও সারের দাম অনেক বেশী থাকায় গত বছরের তুলনায় এ বছর খরচ বেশী হবে। তিনি আরও বলেন, গত বছর এক কৌটা বিঘ ফ্যামিলি বীজ ক্রয় করেছি দুই হাজার ৭’শ টাকায় এ বছর ওই পরিমান বীজ কিনেছি ৩ হাজার টাকায়। গত বছর এক বস্তা টিএসটি সার কিনেছি ১১’শ টাকায় এ বছর ওই সার কিনতে হচ্ছে এক হাজার ৫’শ টাকায়।
একই গ্রামের সোহেল রানা বলেন, সার ও বীজের দাম অনেক বেশী। সার বীজ কিনতে হিমশীম খেতে হচ্ছে। দ্রুত সার ও বীজের দাম কমানোর দাবী জানান তিনি।
মহিষকাটা গ্রামের রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, ২৭ একর জমিতে তরমুজ চাষ করছি। এখনো চাষাবাদ চলছে। তিনি আরো বলেন, গত বছর ২০ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। ওই বছর তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ায় এ বছর বেশী চাষ করছি।
আমতলী উপজেলা বিসিআইসি ডিলার সমিতির সভাপতি মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, সরকারী দামে সার বিক্রি করা হচ্ছে। তবে গ্রামাঞ্চলে বেশী দামে বিক্রি হতে পারে। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম বলেন, গত বছর তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ায় এ বছর কৃষকরা বেশী তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তরমুজ চাষিদের কোন প্রনোদনা দিতে পারছি না। এরপরও এ বছর ৫ টি প্রদর্শনী করেছি। তিনি আরো বলেন, কোন ডিলার বেশী দামে সার বিক্রি করে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর