ঢাকা সাগরকন্যা অফিস ॥
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, আমাদের সঙ্গে মিয়ানমারের খুব সুসম্পর্ক। এবারও আমাদের আশা ছিল, তারা কথা রাখবে। কিন্তু এখনো তারা তাদের কথা ইমপ্লিমেন্ট করেনি। মিয়ানমারকেও বিশ্বাস করাতে হবে, রোহিঙ্গা সংকট যদি অনেক দিন বলবৎ থাকে, তাহলে তাদের জন্যও তিকর হতে পারে। রবিবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) আয়োজিত ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির বিতর্ক অনুষ্ঠানে ‘রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক গ্র্যান্ড ফাইনাল বিতর্ক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন এ কে আবদুল মোমেন।
বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার সহযোগিতা করছে না জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই বিষয়টি সাহসিকতার সঙ্গে সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োজন উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সরকার এ বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান পদপে গ্রহণ করেনি। বরং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকার যথেষ্ট সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে, যা সারাবিশ্বে ইতিহাস হয়ে থাকবে। এরই মধ্যে রাশিয়া ও চীন তাদের আগের অবস্থান থেকে অনেকটাই সরে এসেছে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার মাধ্যমে এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বক্তারা। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির বিতর্ক অনুষ্ঠানের গ্র্যান্ড ফাইনালে অংশ নেয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি।
এদিকে, রবিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে মানুষের দুর্যোগজনিত স্থানচ্যুতি বা উদ্বাস্তু বিষয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইন্টার্নেশনাল অর্গানিজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) এবং প্ল্যাটফর্ম অন ডিজাস্টার ডিসপ্লেসমেন্টের (পিডিডি) সহায়তায় ‘অ্যানুয়াল থিমেটিক মিটিং অফ দা প্লাটফর্ম অন ডিজাস্টার ডিসপ্লেসমেন্ট’ শীর্ষক দিনব্যাপী এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের মতো শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে এক রোল মডেল। তবে এই রোহিঙ্গাদের জন্যই আমাদের বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে। পরিবেশ ও প্রকৃতির উপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ অনেক বেশি দতা অর্জন করেছে। আর এ ধরনের সংকট আমাদেরকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম হয়েও বাংলাদেশ আশানুরূপ বৈদেশিক অর্থ সহায়তা পাচ্ছে না বলেও দাবি করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যদি এক মিটার বেড়ে যায়। তাহলে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ জমি তলিয়ে যাবে। এ ধরনের ঝুঁকির মধ্যে থেকেও আমরা সেভাবে বৈদেশিক অর্থ সহায়তা পাচ্ছি না। যখন এই পরিস্থিতি আমাদের সামনে আসবে তখন বাংলাদেশের উৎপাদন মতা ১৪ শতাংশে নেমে আসবে। বাংলাদেশের মতো এমন আক্রান্ত দেশগুলোর জন্য প্রতিবছর ১০০ থেকে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা দেওয়ার কথা কিন্তু আমরা সেগুলো কিছুই পাচ্ছি না শুধু কথাবার্তাই হচ্ছে। তাই পাবলিক এওয়ারনেস, গ্লোবাল এওয়ারনেস তৈরি করতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে আমরা এ সেমিনারের আয়োজন করেছি। অনুষ্ঠান শেষে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন জানান, কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কবে নাগাদ ভাসানচরে স্থানান্তরিত করা হবে তার সময়সূচি এখনো নির্ধারণ করা যায়নি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুল রহমান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমরা বেশ ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে পারছি। তবে রোহিঙ্গা সংকটের মতো মানবসৃষ্ট দুর্যোগ আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোরকে সঙ্গে নিয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন কাইমেট চেঞ্জ’র ডেপুটি এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি ও ভাইস সরমাদ, আইওএম’র পরিচালক (গ্লোবাল কমপ্যাক্ট ফর মাইগ্রেশন) মাইকেল কেইন সলোমন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি ইনিক বোরদিন, বাংলাদেশ জার্মানির ডেপুটি হেড অফ মিশন মাইকেল স্কালথেসিস এবং বাংলাদেশের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব শাহ কামাল। বাংলাদেশসহ জার্মানি, ফিজি, কোস্টারিকা, ফ্রান্স, মেক্সিকো এবং সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৩০ জন প্রতিনিধি এ সেমিনারে অংশ নিচ্ছেন।
এফএন/কেএস
