ঝালকাঠীর লঞ্চ ট্রাজেডি-বামনায় মৃত্যু-১, নিখোজ-১, আহত-৪১

প্রথম পাতা » বরগুনা » ঝালকাঠীর লঞ্চ ট্রাজেডি-বামনায় মৃত্যু-১, নিখোজ-১, আহত-৪১
শনিবার ● ২৫ ডিসেম্বর ২০২১


ঝালকাঠীর

বামনা(বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা অভিযান-১০ লঞ্চে ঝালকাঠীর সুগন্ধ্যা নদীতে এসে রাত ৩টার দিকে অগ্নিকান্ডের দূর্ঘটনায় বামনার প্রায় অর্ধশতাদিক যাত্রীর মধ্যে ১জন নিহত, ১জন নিখোজ রয়েছে এবং ৪১জন আহত হয়েছে। আহতরা ঝালকাঠী-বরিশালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
উপজেলার লক্ষীপুরা গ্রামের নিহত স্বপ্নীল হাওলাদারের বাবা সঞ্জীব হাওলাদার জানান, আমি আমার স্ত্রী লক্ষীরানী শিশু পুত্র প্রত্যয় ও নিহত স্বপ্নীল ঢাকা থেকে লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ফ্লোরের যাত্রী ছিলাম। অগ্নিকান্ডের কিছুক্ষণ আগে স্বপ্নীল বাথরুমে যায় এর মধ্যে আগুন লঞ্চে ছড়িয়ে পড়লে আমি আমার শিশু পুত্র ও স্ত্রীকে নিয়ে নদীতে ঝাপ দিয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় কিনারায় উঠি। পরে স্বপ্নীলকে অনেক খোজাখুজি করে ২৪ তারিখ সন্ধ্যায় ভাসমান অবস্থায় ওর পোড়া লাশ পাই। এদিকে গোলাঘাটা গ্রামের ঐ লঞ্চের যাত্রী হামিদ কারজারীর এখনও কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।
মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁেচ আসা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যাত্রীরা জানান, ঢাকায় চিকিৎসা শেষে অভিযান ১০ লঞ্চে স্বামী গোলাম রহমানকে নিয়ে ৩১২ নম্বর কেবিনে ফিরছিলেন ষাটউর্দ্ধো গৃহবধূ মমতাজ বেগম। তিনি বলেন আগুন লঞ্চটির প্রায় দুই তৃতীয়াংশ স্থানে পৌছলে তারা দুজনে দৌড়ে কেবিন থেকে বেড় হয়ে সিড়িঁর কাছে গিয়ে দেখেন গেট বন্ধ। অনেক ধাক্কাধাক্কি করেও তারা গেট খুলতে না পেরে তিন তলার রেলিংয়ে মমতাজের শাড়ি বেঁধে  স্বামী গোলাম রহমান তাকে কোন মতে ২ তলায় নামায়। পরে সে নিজেও ওই শাড়ী বেয়ে দ্বিতীয় তলায় নামেন। বৃদ্ধ ও অসুস্থ্য স্ত্রীকে দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে জলে ফেলে দিয়ে নিজেও লাফ দিয়ে স্ত্রীকে ধরে কোন মতে তীরে ওঠেন। এতে স্ত্রী মমতাজ বেগমের কোমড়ে  প্রচন্ড আঘাত পায়। স্থানীয়রা তাকে গরম কাপড় দিলে তারা দুজনেই গ্রামের বাড়ী বামনায় ফিরে আসেন। তারা বর্তমানে বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শুধু মমতাজ বেগমই নয় লঞ্চের অগ্নিকান্ড থেকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছেন বামনা উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী নাজমুল হুদার মা নাসরিন বেগম(৬৫) ও নাতি মেহেদী হাসান। তারা ৩১৭ নম্বর কেবিনে ছিলেন। রাত ৩টার দিকে নাসরিন বেগম লঞ্চে পোড়া গন্ধ টের পেয়ে দুজনে কেবিন থেকে বেড় হয়ে দেখেন আগুনের লেলিহান শিখা। বৃদ্ধ নারী নাতিকে নিয়ে দিকবেদিক ছুটতে থাকেন। ইতিমধ্যে লঞ্চের সব লাইট বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে লঞ্চটির সমস্ত বডি গরম হয়ে যায়। তিনি উপায় না পেয়ে তিন তলা থেকে জীবনের মায়া ত্যাগ করে নাতীকে নিয়ে নিচে ঝাপ দেয়। এর পরে কিভাবে তীরে উঠেছে সে ঘটনা তিনি মনে করতে পারছেন না। তিনিও বর্তমানে বামনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
আগুনের উৎপত্তিস্থল স্পষ্ট দেখেছেন বামনা উপজেলার ব্যবসায়ি গোবিন্দ সাহা। তিনি তখন লঞ্চটির নিচ তলায় সামনের দিকে শুয়ে ছিলেন। হঠাৎ তিনি ইঞ্জিন রুমে আগুন দেখতে পান। তিনি তাৎক্ষনিক দৌড়ে ৩ তলায় সুকানির কাছে গিয়ে  লঞ্চের আগুনের বিষয়টি বলেন। তিনি তাকে লঞ্চটি তীরে ঘাট দিতে অনুরোধ করেন। পরে তিনি আবার নিচে চলে আসেন। এমন সময় লঞ্চটির প্রায় অর্ধেক পরিমান আগুন ছড়িয়ে পড়ে। লঞ্চটির ইঞ্জীন বন্ধ হওয়ায় তীরে ভীড়লেও ভাটায় লঞ্চটিকে মাঝ নদীর দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো। তিনি তখন কোন মতে ঝাঁপ দিয়ে নদীতে পড়েন। পরে দেখতে পান লঞ্চের শেষকৃত্য।
এ রকম বিভিষিকাময় আগুনের পোড়া যাত্রীরা বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সংবাদদাতাকে তাদের বেঁেচ থাকার কাহিনী জানান। বিভিন্ন যাত্রীরা জানান ঢাকা বরগুনা যাতায়াতের একমাত্র বাহন হিসেবে ছিলো লঞ্চ। কিন্তু বরগুনার লাইনে কখনই উন্নতমানের লঞ্চ চলাচল করেনি। স্বজনদের দাবী যদি উন্নতমানের লঞ্চ চলতো তাহলে মনে হয় এ রকম দূর্ঘটনা হতো না।

এইচআর/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৬:২৭ ● ২৩২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ