আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
জলবায়ূর প্রভাবে আমনের মৌসুম শুরুতে অনাবৃষ্টি ও অতিবর্ষণে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে কৃষকরা আমনের বাম্পার ফলন পেয়েছেন। বাজারে ধানের দাম বেশী থাকায় খুশি কৃষকরা। দুই উপজেলায় এক লক্ষ ৪৮ হাজার মেট্রিকটন ধার উৎপাদনের লক্ষমাত্রা উপজেলা কৃষি বিভাগের। ভালো ফলন হওয়ায় ওই লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করেন কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম।
জানাগেছে, আমতলী ও তালতলীসহ উপকুলীয় অঞ্চলের মাঠের পরে মাঠে এখন আমন ধান রাতে শিশিরে ভেজা সুর্য্যাদ্বয়ের সাথে সাথে ধানের গোছা অপরূপ সবুজের সমহারে কৃষককে আহবান করছে। এচিত্র চিরাচরিত রূপসী বাংলার অপরূপ দৃশ্য। এ দৃশ্য দেখে সকল মানুষের হৃদয় ছূয়ে যায়। শ্যামল সবুজ এ বাংলার চিত্র কতইনা সুন্দর। সেই বাংলার অপরূপ পরিবেশের উপর জলবায়ুর পরিবর্তনের ছোবলে তছনছ হয়ে গেছে। জলবায়ুর প্রভাবে আমনের মৌসুমে অনাবৃষ্টিতে কৃষক চাষাবাদ করতে পারেনি। এরপর শ্রবন মাসের অতিবর্ষণের ফলে আমনের বীজতলা পচে যায়। কৃষক প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে ফের বীজতলা তৈরি করে। সেই বীজতলা দিয়ে চারা করে আমন ক্ষেতে বপন করে। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে শফল কৃষকরা। এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে পুরো দমে চলছে ধান কাটা। বীজতলা শুরুতে কৃষকের মাঝে হতাশা থাকলেও বাম্পার ফলনে তারা খুশি। সঠিক সময়ে সরকারী সহায়তা তারা ঘুরে দাড়িয়েছে।
আমতলী কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, আমতলী ও তালতলী উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা রয়েছে। এ বছর দুই উপজেলার ৩৯ হজার ৪’শ ৭০ হেক্টর জমিতে আমণের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আমতলীতে ২৩ হাজার ৪৬০ হেক্টর এবং তালতলীতে ১৬ হাজার ১০ হেক্টর জমি। আমনের বাম্পার ফলন হওয়ায় হেক্টর প্রতি ৩.৭৫ মেট্রিকটন হিসেবে এক লক্ষ ৪৮ হাজার ১২ মেট্রিকটন আমন উৎপাদন হবে বলে ধারনা করছে কৃষি বিভাগ। এদিকে বাজারে আমন ধানের দাম ভলো। প্রতিমণ ইরি ধান ৮’শ ২০ টাকা এবং গুটি স্বর্না ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমতলী-তালতলীর উৎপাদিত ধান দিনাজপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া ও মাদারিপুর রপ্তানী হচ্ছে।
চাওড়া কাউনিয়া গ্রামের জুয়েল মৃধা বলেন, এ বছর আমনের এতো ভাল ফলন হবে বুঝতে পারিনি। যেভাবে প্রতিকুল পরিবেশের মধ্যে কৃষককে জমি চাষাবাদ করতে হয়েছে।
মহিষকাটা গ্রামের মঞ্জু মিয়া বলেন, এক একর জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে।
তালতলীর লেমুয়া গ্রামের কৃষক ইসহাক হাওলাদার বলেন, শুরুতে আমন ধান নিয়ে যা ভাবছি তা নেই। এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে।
উত্তর রাওঘা গ্রামের কৃষক বশির উদ্দিন বাদল বলেন, এ বছর তিন একর জমিতে আমন চাষে খরচ করতে ২৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করি ভালোই লাভবান হবো।
শারিকখালী গ্রামের বাচ্চু শরীফ বলেন, দুই একর জমিতে চাষাবাদে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধান পাব আনুমানিক ৭০ মণ।
পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, পাচ একর জমিতে আমনের ধান চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। ইরি ধান ৮’শ ২০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতিকুল পরিবেশের মধ্যেও এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর আমনের লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছে। আশাকরি দুই উপজেলার এক লক্ষ ৪৮ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদিত হবে। বাজারে ধানের দামও ভালো। এতে কৃষকরা বেশ লাভবান হবে।
এমএইচকে/এমআর