গৌরনদীতে বোমা বিস্ফোরণে আহত হারুনের মৃত্যু!
প্রথম পাতা »
বরিশাল »
গৌরনদীতে বোমা বিস্ফোরণে আহত হারুনের মৃত্যু!
গৌরনদী (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরিশালের গৌরনদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ মুন্সীর মালিকানাধীন কটকস্থল দক্ষিণ মাদ্রা ফারিয়া গার্ডেনের (পার্কে) পরিত্যক্ত টিনের ঘরে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে তিনজন আহত হয়। আহতদের মধ্যে বোমার কারিগর হারুন হাওলাদার (৪৫) মারা গেছে। দুইদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গতকাল রোববার দিবাগত রাত (গতকাল সোমবার ভোররাত) আড়াইটার দিকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার (হারুন) মৃত্যু হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে হারুনের লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। বিষয়টি গৌরনদী থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন নিশ্চিত করেছেন। নিহত হারুন উপজেলার বেঁজগাতি গ্রামের আ. বারেক হাওলাদারের ছেলে।
নিহত হারুনের সহোদর ছোট ভাই ঢাকার রাজমিস্ত্রি সালাউদ্দিন হাওলাদার জানান, তার বড় ভাই হারুন হাওলাদার ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে গত বুধবার বিকালে বেজগাতি গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে বের হয়। বোমায় তার ভাই হারুন হাওলাদারের দুই হাতের প্রায় কুনুই পর্যন্ত উড়ে ও মুখ মডল ঝলসে যায়। এরপর বোমা তৈরির সাথে জড়িত ৩/৪ জনে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হারুনকে শুক্রবার দিবাগত রাত (শনিবার ভোররাত) তিনটার দিাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপতালে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে শনিবার সকালে তার ভাবি (হারুনের স্ত্রী) ও ভাতিজা (হারুনের ছেলে) বরিশাল হাসপাতালে যায়। অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তাররা উন্নত চিকিৎসার জন্য হারুনকে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট হাসপাতালে রেফার্ড করেন। মুমূর্ষু অবস্থায় হারুনকে শনিবার বাদমাগরিব শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার দিবাগত রাত (সোমবার ভোররাতে) আড়াইটার দিকে হারুন মারা যায়। সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে হারুনের লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ফরহাদ মুন্সীর মালিকানাধীন কটকস্থল- দক্ষিণ মাদ্রা ফারিয়া গার্ডেনের (পার্কে) একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘরের ভেতর শুক্রবার দিবাগত (৩ ডিসেম্বর) রাতে যুবলীগ কর্মী মো. রায়হান ফকির, মো. কাওছারের নেতৃত্বে বোমা তৈরি করছিল। বোমা তৈরির সময় অসাবধানতাবশত ওইদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে একটি বোমা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে বোমা তৈরির কারিগর হারুন হাওলাদার (৪০)সহ ৩ জন গুরুতর আহত হয়েছে। এ সময় বোমা বিস্ফোরণে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠলে মানুষের মাঝে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বোমা বিস্ফোরণে বোমার কারিগর হারুনের দুই হাতের প্রায় কুনুই পর্যন্ত উড়ে গেছে ও মুখ মন্ডল ঝলসে গেছে। বোমার আঘাতে পার্কের ওই পরিত্যক্ত টিনের ঘরের বেড়া ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাতে ঘটনাস্থল শনাক্ত করতে না পারে এ জন্য ঘটনার সাথে জড়িতরা তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থল ধুঁয়ে মুছে ঘরের মেঝে বালু’র প্রলেপ দিয়ে রেখেছে। এরপর রংয়ের পুরোনো কয়েকটি গ্যালন ফেলে রাখে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গৌরনদী থানার এসআই মো. কামাল হোসেন জানান, উপজেলার কটকস্থল দক্ষিণ মাদ্রা ফারিয়া গার্ডেনের (পার্কে) পরিত্যক্ত টিনের ঘরে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে আহত হওয়ার ঘটনায় থানার এসআই ইমাম হোসেন বাদি হয়ে ১০ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩/৪ জনকে আসামি করে রোববার দুপুরে থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে। এ মামলায় পার্কের পরিচ্ছœতা কর্মী আবদুর রহমান মীরকে গ্রেফতার দেখিয়ে রোববার বিকালে বরিশাল অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালতের বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরিত বোমার মার্বেল, ছোট কয়েকটি লোহা, কচটেপ ও জর্দার কৌটার মাথার অংশ বিশেষ আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়েছে। মামলার বাকি আসামিদের গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে তদন্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান।
বিকেএস/এমআর
বাংলাদেশ সময়: ১৮:০৩:৫৬ ●
২৩৩ বার পঠিত
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)