গণতন্ত্রের সঙ্গে চকবাজারের অগ্নিকান্ডের সম্পর্ক নেই: তথ্যমন্ত্রী

প্রথম পাতা » রাজনীতি » গণতন্ত্রের সঙ্গে চকবাজারের অগ্নিকান্ডের সম্পর্ক নেই: তথ্যমন্ত্রী
শনিবার ● ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার বাসায় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ

চট্টগ্রাম সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমালোচনা করে বলেছেন, দেশের গণতন্ত্রের সঙ্গে ঢাকার চকবাজারের অগ্নিকান্ডের ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। গণতন্ত্র নেই বিধায় চকবাজারে আগুন লেগেছে, ফখরুল সাহেবের এসব বক্তব্য দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করে।
শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার বাসায় কবি আবদুর রউফ ও মনজিল মুরাদ লাভলুর দুটি কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বুধবার রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ১৯টি ফতারি শনাক্তের জন্য ৩১ স্বজনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহতদের দেখতে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। এ সময় তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, সরকারের মন্ত্রীরা অনেক কথা বলছেন সবাই। কিন্তু তাঁরা ঠিক যে কাজগুলো করা দরকার সেই কাজগুলো করছেন না। একটা জিনিস আমরা লক্ষ করছি যে, দায়িত্বহীনতা এবং এটা এত বেড়ে গেছে কারণ হচ্ছে আপনাদের অ্যাকাউন্টিবিলিটি নাই। কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নাই। একটার পর একটা এ ধরনের গণতন্ত্রহীনতা সে অবস্থাকে একিউজ করে তুলছে।
এর জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেন, ইদানীং দেখা যাচ্ছে, ফখরুল সাহেব প্রচুর অবান্তর কথা বলছেন। গণতন্ত্র নাই বিধায় চকবাজারে আগুন লেগেছে, এটি কী রকম দায়িত্বহীন কথা, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। হাছান মাহমুদ আরো বলেন, এটির মাধ্যমে ফখরুল সাহেব নিজেই প্রকারান্তরে বলেছেন, এই অগ্নিকা-ের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে। কারণ গণতন্ত্র নাই বিধায় তারা মানুষের উপর পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার কথা বলে ৫০০ এর বেশি মানুষকে তারা পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে হত্যা করেছে, সাড়ে তিন হাজার মানুষকে আগুনে ঝলসে দিয়েছে। চকবাজারের আগুনের সাথে গণতন্ত্রের কী সম্পর্ক আমি জানি না। তবে এই কথার মাধ্যমে এটিই ব্যাখ্যা দেওয়া যায়, তাহলে কি পেট্রলবোমার মতো এটির সঙ্গেও তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আমি ফখরুল সাহেবকে বলবো, এসব অবান্তর কথা না বলে পাশের দেশগুলোকে দেখে শিক্ষাগ্রহণ করুন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, একসময় লাইব্রেরিতে গিয়ে মানুষের পড়ার প্রতি ছিল ঝোঁক। কিন্তু স্মার্টফোন সেই অভ্যাস কেড়ে নিয়েছে। বিল গেটস তার সন্তানদের বয়স ১৬ বছর হওয়ার আগে স্মার্টফোন দেননি। এই ফোনের অপব্যবহার সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।
সাংবাদিক আজাদ তালুকদারের সভাপতিত্বে সকাল ১১টায় তথ্যমন্ত্রীর নগরের বাসভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর সেকান্দর চৌধুরী, আগ্রাবাদ মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. আনোয়ারা আলম প্রমুখ। তথ্যমন্ত্রী বলেন, কবিতা মনের ভাব প্রকাশ করার একটি মাধ্যম। কবিতা মনের কথা বলে, সমাজের কথা বলে। কবিতা মানুষকে পরিশীলিত হবার শিক্ষা দেয়, প্রতিবাদী হতে উদ্বুদ্ধ করে। সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখে কবিতা। তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের এই সময়ে কবিতা লেখার প্রতি আগ্রহ কমে আসছে। তিনি বলেন, আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগেও কাগজে ছোটদের পাতা থাকতো। শিক্ষার্থীরা কবিতা লিখতো। সে কবিতা ছাপা হলে দেখতাম তাদের বাঁধভাঙা উল্লাস। সেটি এখন আর নেই। কাগজে এখন ছোটদের পাতা তেমন থাকে না, কবিতাও লেখা হয় না।
শৈশবের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমিও ছোটবেলায় কবিতা লিখতাম। আমার অনেক কবিতা চট্টগ্রামের বিভিন্ন কাগজে ছাপা হয়েছে। আমাদের স্কুলের বার্ষিকী সংখ্যায়ও আমার কবিতা ছাপা হয়েছে। স্কুলে যখন কোনও প্রতিযোগিতা হতো, তার পুরস্কার দেয়া হতো বই। সে বই এনে বাবাকে দেখাতাম, বাবা খুশি হতেন। আমার স্কুলের শিক্ষার কারণেই আজ এ জায়গায় আসতে পেরেছি। ড. হাছান মাহমুদ আক্ষেপ করে বলেন, রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার পর এখন আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠে না। তবে অভিভাবকদের প্রতি আবেদন থাকবে, আপনারা সন্তানদের কবিতা পড়তে, সাহিত্য পাঠে উদ্বুদ্ধ করুন। স্মার্টফোন দেয়ার পরিবর্তে বই তুলে দিন। তাহলে আমাদের সন্তানদের যথাযথ মানসিক বিকাশ ঘটবে। এই চর্চা তাদের সাহিত্যপ্রেমী, সংস্কৃতিপ্রেমী হিসেবে গড়ে তুলবে। প্রকৃত বাঙালি হওয়ার জন্যে, বাঙালিত্ব বজায় রাখার জন্যে পাঠাভ্যাসের বিকল্প নেই।
তথ্যমন্ত্রী কবি আবদুর রউফ এর প্রশংসা করে বলেন, ছাত্রজীবন থেকে তিনি সাহিত্যপ্রেমী ছিলেন। শিক্ষকতায় নিজের অর্জিত জ্ঞান বিলিয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়িতে লাইব্রেরি দেখেছি। সেখানে অনেক কমিউনিস্ট নেতার যাতায়াত ছিল। আমি আশা করবো, তার হাত দিয়ে আরও বই প্রকাশিত হবে। মনজিল মুরাদ লাভলুর কাব্যগ্রন্থ সময়োপযোগি উল্লেখ করে তার লেখনীর ভূয়সী প্রশংসা করেন ড. হাছান মাহমুদ।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪৯:৩৯ ● ৪৮৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ