কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
খাসজমি বন্দোবস্ত দেয়ার নামে সরকারি খাল-বিল জলাশয় বরাদ্দ দেয়ার কারণে কৃষিকাজে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। এভাবে শত শত বন্দোবস্ত রয়েছে যা এখনও বাস্তবে খাল কিংবা জলাশয় বিদ্যমান রয়েছে। বাইছে পানির প্রবাহ। বাদ পড়েনি বন্ঞ্চল পর্যন্ত। এসব অনিয়মতান্ত্রিক বন্দোবস্ত কেস বাতিল করলেও ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারসহ এক শ্রেণির কর্মচারীদের গাফিলতির কারণে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়না। ফলে উদ্ধার হয়না সরকারের খাস জমি। অপরদিকে লাভবান হচ্ছেন খাল-বিল দখলদাররা। পরিবেশ প্রতিবেশও হুমকির কবলে পতিত হচ্ছে। সরেজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে এসব তথ্য মিলেছে।
ইউপি মেম্বার মোঃ মাসুদ রানা জানান, খালটিতে এখনও কোমর সমান পানি রয়েছে। দুই গ্রামের কৃষকের পানি নিষ্কাশনের উপায় এই খালটি। অথচ ২৬৩ কে/২০০৫-২০০৬ নম্বর কেসের মাধ্যমে তেগাছিয়া মৌজার ওই খালটি জনৈক আঃ রহিম হাওলাদারকে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। রহিম হাওলাদার এখন বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ চরমভাবে বাঁধাগ্রস্ত করছে। মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের আজিমদ্দিন গ্রামে এ খালটির অবস্থান। এলাকার কৃষকরা বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেন ২০১৯ সালে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলাপাড়া ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার বিমল চন্দ্র দাস সরেজমিনে তদন্ত করেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, বন্দোবস্ত গ্রহীতাকে খালের জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উক্ত খালটির গোড়ায় কালভার্ট আছে। খালে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আছে, কিন্তু এলাকার লোকজনকে বন্দোবস্ত গ্রহীতা মাছ ধরতে দেন না। গরু-ছাগল গোসল করাতে পারছে না। এর প্রেক্ষিতে কলাপাড়া উপজেলা কৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এর সভায় ওই বন্দোবস্ত কেসটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু আজ অবধি এর কোন অগ্রগতি নেই। একই অবস্থা ৫২৫ খে/১৯৮৯-১৯৯০ বন্দোবস্ত কেসের। সুলতান হাওলাদার ও জাহানারা বেগম দম্পতিকে টিয়াখালী মৌজার খাস জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভূমি প্রশাসনের নির্দেশে সার্ভেয়ার আনিছুর রহমান তদন্ত করে তার প্রতিবেদনে উল্লে করেছেন, ওই জমি দীর্ঘ বছর পর্যন্ত মোঃ আমজেদ খা চাষাবাদ করে আসছেন। বন্দোবস্ত গ্রহীতার দখলে নেই। এ বরাদ্দও বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু এর কোন অগ্রগতি নেই। ভূমি অফিসের এমন দীর্ঘসূত্রীতার কারণে সরকারি খাল-বিল বেদখল হয়ে গেছে। পৌরশহরের চিঙ্গরিয়ার খালটির বন্দোবস্ত দেয়ার বিষয়টি কলাপাড়ায় এখন আলোচিত হয়ে আছে। ফলে কৃষি কাজে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আবার কখনও অনিয়মতান্ত্রিক বরাদ্দ দেয়া বন্দোবস্ত কেস বাতিল করা হলেও সরকারের খাস জমি উদ্ধার করা হয় না। উল্টো জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে দখলদারদের নামে খতিয়ান খুলে দেয়া হয়। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের টুঙ্গিবাড়িয়া মৌজার খাস খতিয়ানের ৩৫১১ও ৩৫২৯ নম্বর দাগের এক একর ৬০ শতক জমি আবদুল মালেক হাওলাদারকে বরাদ্দ দেয়া হয়। যার বন্দোবস্ত কেস নম্বর ১৮৭-কে/১৯৮৬-১৯৮৭। ওই জমিতে পাখিমারা বাজারের মসজিদ ও মন্দির রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ী নুরে এলাহী। তিনি জানান, মেয়াদ উত্তীর্ণের আগে আবদুল মালেক ওই জমি বিক্রি করার অভিযোগে তাঁর বন্দোবস্ত কেস বাতিল করা হয়। ২০০৮ সালে জেলা কৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৮ আগস্টের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কলাপাড়া ভূমি অফিস এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উল্টো বন্দোবস্ত গ্রহীতাকে ৪৯৭ নম্বর খতিয়ান খুলে দিয়েছে। কুমিরমারা গ্রামের সবজি চাষী জাকির গাজী জানালেন, যেসব খালকে কৃষি জমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে তা বাতিল করা জরুরি। নইলে কৃষিকাজে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা হবে। ইতোমধ্যে একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এমনসব অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে একদিকে কৃষিকাজে ব্যবহার করা খাল বিল জলাশয়সহ সরকারের খাস জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে একের দখলে থাকা খাস জমি অন্যকে বন্দোবস্ত দেয়ায় মামলা মোকদ্দমাসহ গ্রামীণ বিরোধ বাড়ছে। শুধু তাই নয়, ভূমিহীন মানুষকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চরমভাবে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রকৃত ভূমিহীনরা বঞ্চিত হচ্ছে। কলাপাড়ায় এমন অনিয়ম আর দুর্নীতির এন্তার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলাপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জগৎবন্ধু মন্ডল জানান, বাতিল হওয়া বন্দোবস্ত কেসসহ বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে তার কাছে জানালে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন। এছাড়া সরকারের খাস জমিসহ খাল-বিল জলাশয় উদ্ধার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এমইউএম/এমআর