মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) অফিস॥
দলীয় প্রার্থী কিংবা প্রতীকের বিরোধিতা করার দায়ে দল থেকে বহিষ্কার করার পরে তা আবার প্রত্যাহার করার সুযোগ পেয়ে বার বার দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যাচ্ছে মাঠ পর্যায়ের এক শ্রেণির নেতারা। আর এ কারণে সরকারে থাকা সংগঠন আওয়ামী লীগকে তৃণমূলের নির্বাচনে বার বার খেসারত দিতে হয়। এবারেও এর ব্যত্যয় ঘটবেনা বলে মনে করছেন সাধারণ নেতা-কর্মীরা।
সাগরপারের জনপদ নৌকার দূর্গ খ্যাত কলাপাড়ায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মুখে মুখে এখন এসব শোনা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব উদ্যোগে কলাপাড়া এখন বিস্ময়কর উন্নয়নের জনপদে পরিণত হয়েছে। নির্মাণ হয়েছে পায়রা বন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রসহ একাধিক বিদ্যুত প্লান্ট। নির্মণাধীন রয়েছে শের-ই-বাংলা নৌঘাটি। পাঁচটি দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে পৌর কিংবা ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি হওয়ার আকাঙ্খা নেতাদের মধ্যে প্রবলভাবে কাজ করছে। চলমান তিন ইউপিতে তৃণমূলের বাছাইতে সরকারি দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন অন্তত ২৭ জন। ইউনিয়ন কিংবা উপজেলা পর্যায়ের দলের নেতারা দ্বিধাবিভক্ত থাকায় তৃনমূল পর্যায়ের যার যার অনুসারী নেতা-কর্মীদের নির্বাচনে প্রার্থী করতে উৎসাহ দিয়ে থাকেন। আবার দলীয় মনোনয়ন না পেলে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করেন। যেমন গেল উপজেলা নির্বাচনকালে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা এস এম রাকিবুল আহসান। কিন্তু তার বিরুদ্ধচারণ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন সৈয়দ আক্তারুজ্জামান কোক্কা। ওই নির্বাচনে টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান শিমু তার বাবা আক্তারুজ্জামান এর পক্ষে নির্বাচন করেন। তখন যুবলীগ নেতা সৈয়দ মশিউর রহমান শিমুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। একই কারণে চাকামইয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাকামইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হুমায়ুন কবির কেরামত হাওলাদারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ফের এইবারের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে এ দুই জনকে আওয়ামীলীগের তৃণমুল পর্যায়ের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এর ফলে দলের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ নেতা-কর্মীরা। এর ফলে এবারেও ফের দলীয় মনোনয়ন না পেলে কেউ কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নিবেন বলেও মনে করছেন সাধারণ নেতা-কর্মীরা। আর দলের সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না থাকায় দলে যেমন হাইব্রিড ঢুকে যাচ্ছে, তেমনি দলীয় প্রার্থীরাও পরাজিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র পদে দলের প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। পরাজিত হয়েছে মহীপুর, লালুয়া, ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদের নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। দলে ভেড়ানো এবং বহিষ্কার প্রক্রিয়ার এই খেলা এখন কলাপাড়ায় আওয়ামী লীগের জন্য ভবিষ্যৎ অশনিসংকেত হয়ে পড়েছে। এর থেকে বেরিয়ে না আাসতে পারলে আগামী দিনে দলের জন্য আরও কঠিন বাস্তবতা অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন সাধারণ নেতা-কর্মীরা।
কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম বাবুল খান এ প্রসঙ্গে বলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগ পরিচালিত হয়ে আসছে জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনায়। এখানে সমন্বয় থাকা দরকার। সর্বোপরি দলীয় প্রধান কন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা যথাযথ ভাবে প্রতিপালন করতে হবে, তাইলেই তৃণমূলের এ সমস্যা থাকবে না। বর্তমান প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীও সোজা সাপটা কথা, সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার জরীপে যেসব প্রার্থী এগিয়ে রয়েছে। জনমতে শীর্ষে রয়েছে। তাদেরকে একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হোক। কারণ তৃণমূলের বাছাইতেও সঠিক সিদ্ধান্ত প্রতিফলিত হয়না। এখানেও কাউন্সিলে লেনদেন হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য কলাপাড়ায় তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন কে কেন্দ্র করে তৃণমূলের বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুরু হয়েছে দলীয় কোন্দল। যে কারণে দলের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড় করানো প্রয়োজন। নইলে নিশ্চিত বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে।
এমইউএম/এমআর