নাজিরপুর(পিরোজপুর)সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
এক সময়ে বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জে ডোবা-নালায় এবং খালে বিলে, আমাদের জাতীয় ফুল শাপলার সমারোহ ছিল দেখার মতো। বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়ের নিচু জমিতে এমনিতেই জন্মাত প্রচুর পরিমাণে শাপলা-শালুক ও ড্যাপ নামের ফুল। দেশের উত্তরঞ্চলের বিভিন্ন খাল বিল জলাশয় থেকে প্রায় বিলুপ্তির পথে আমাদের জাতীয় শাপলা ফুল।
বর্ষা মওসুমের শুরুতে এ ফুল ফোটে। খাল-বিল-জলাশয় ও নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় শাপলা। আবহমান কাল থেকে শাপলা মানুষের খাদ্য তালিকায় সবজি হিসেবে অন্তরভুক্ত ছিল। অনেকেই এই সব তাদের খাদ্যের তালিকায় রাখত। শিশুরা তো বটেই সব বয়সের মানুষ রঙ-বেরঙের শাপলার বাহারি রুপ দেখে মুগ্ধ হতেন। এ সময় শাপলা ভরা বিলের মনমাতানো সৌন্দর্যে চোখের পলক যেনো এদিক সেদিক হতো না। বর্তমানে গ্রাম-বাংলায় বিভিন্ন খালে বিলে অতিরিক্ত পুকুর খনন, কৃষি জমিতে স্থাপনা নির্মাণ, অতি মাত্রায় নিচু জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে শাপলা ফুল।
কথা বলছিলাম পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার মালিখালী ইউনিয়নের চাতর গ্রামের ৭০ বছর বয়সের এক চাচা আমির হোসেন মোল্লার সাথে তিনি বলেন, একসময় আমরা যখন অভাব অনটনে পরতাম তখন ড্যাপের (শাপলার ফল) ভিতরের যে বিচি গুলো থাকতো সে গুলো ভাতের মতো রান্না করে খেতাম খুবি ভালো লাগতো, শুধু তাই নয় শাপলার ফল (ড্যাপ) দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খৈ তৈরি করেও খেতাম। এবং বাজারে নিয়ে বিক্রিও করতাম। শাপলা ফুলের মাটির নিচের মূল অংশকে শালুক বল হয়। বর্তমান দেশে বাড়তি জনগণের চাপের কারণে আবাদি জমি ভরাট করে বাড়ি, পুকুর, মাছের ঘের বানানোর ফলে বিলের পরিমাণ কমে গেছে। যার ফলে শাপলা জন্মানোর জায়গাও কমে আসছে। বর্ষার শুরুতে সকালে বিভিন্ন স্থানে শাপলার বাহারী রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। এসব দৃশ্য চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না। অনেকে আবার শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতো আবার বাজারে বিক্রিও করতো। চাঁদনি রাতে বিল, ঝিল বা জলাশয়ে ফুলটি যখন অনেক গুলো ফুটে থাকতো, তখন সেখানে এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হতো দেখার মতো একটি দৃশ্য ছিল।
জাতীয় ফুল শাপলা সাধারণত আবদ্ধ অগভীর জলাশয়, খালে-বিলে জন্মে থাকে। গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে অহরহ দেখা যেত জলে ভাসা ফুলটি। তবে এখন অযন্ত্র আর অবহেলায় জাতীয় ফুল শাপলা এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে।
এএএইচ/এমআর