অতীতে অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেককে কারাগারে দিন কাটাতে হয়েছে। অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে ধরা পড়ার পর অনেককেই দেশে ফিরে আসতে হয়েছে কপর্দকশূন্য অবস্থায়। তার পরও অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়া বন্ধ করা যায়নি। অসাধু কিছু জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করে থাকে। সম্প্রতি অভিযোগ পাওয়া গেছে, ভিয়েতনামে অবৈধভাবে মানব পাচার করা হয়েছে। ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ বাংলাদেশ থেকে ভিয়েতনামে মানবপাচারের তথ্য তুলে ধরেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। মানবপাচারের শিকার দুই বাংলাদেশি ও পাচারকারী প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের তথ্য তুলে ধরে তিনি তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘আর কত নিরীহ মানুষ মিথ্যা কাজের প্রলোভনে বিদেশে পাচারের শিকার হবে।’ রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ জানিয়েছেন, এই দুই বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও সব অর্থ হারিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করেছে দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য। ভিয়েতনাম সরকারের সঙ্গে বহু দেন-দরবার করে ও জরিমানা দিয়ে তাদের ‘এক্সিট ভিসা’ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের ‘ট্রাভেল পারমিট’ দিয়েছে। রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, ভিয়েতনামে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন দিয়েছে ঢাকারই একটি প্রতিষ্ঠান। ‘ভিয়েতনামে চাকরিসহ ডিপ্লোমা’ শীর্ষক বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল একটি জাতীয় দৈনিকে; যেখানে ১৫ দিনে ভিসা ও শতভাগ চাকরির নিশ্চয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে প্রতিষ্ঠানটি এই অভিযোগ নাকচ করে বলেছে, তারা ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে শুধু ছাত্র পাঠায়। মানবপাচারের সঙ্গে তারা জড়িত নয়।
বিদেশে বাংলাদেশের জনশক্তির চাহিদা রয়েছে। এই শ্রমশক্তি দেশের জন্য ইতিবাচক ভাবমূর্তিও তৈরি করতে পেরেছে। জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও অর্জিত হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থানের অভাব আছে। উপযুক্ত শ্রমশক্তি বিদেশে পাঠাতে পারলে দেশের জন্যই তা মঙ্গলজনক। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দেশের বাইরে জনশক্তি রপ্তানি হয়। কিন্তু বিদেশে অবৈধভাবে লোক পাঠানোর ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তিই শুধু নয়, বাজারও নষ্ট হয়। নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করে সেখানে জনশক্তি রপ্তানি করা গেলে তাতে বাংলাদেশই লাভবান হবে। কিন্তু ভিয়েতনামের ঘটনাটি দেশের জন্য নেতিবাচক। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত দুই ভুক্তভোগী সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছেন, তা তদন্ত করে দেখা দরকার। যারা এ ধরনের কাজ করে, সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।