সাগরকন্যা ডেস্ক॥
পুরান ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২১ জনের লাশ শনাক্ত করা যায়নি। লাশ শনাক্ত করার প্রক্রিয়া হিসেবে নিহত লোকজনের স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন টিম নমুনা সংগ্রহ করছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে নমুনা দিতে আসেন। বেলা ১১টা থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে লাশের সন্ধানে আসা স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ১৫টি মৃতদেহের জন্য ২০ জন স্বজন এসে তাঁদের ডিএনএ নমুনা দিয়ে গেছেন। সিআইডির সহকারী ডিএনএ অ্যানালিস্ট নুসরাত ইয়াসমিন এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, নিয়মিত মৃতদেহের নমুনা দিয়ে শনাক্ত করা হলেও অগ্নিদগ্ধদের ক্ষেত্রে তা সময়সাপেক্ষ। যাঁরা ডিএনএ নমুনা দিতে এসেছেন, তাঁদের রক্ত ও মুখের ভেতর থেকে কোষ সংগ্রহ করা হচ্ছে। মৃতদেহ থেকে হাড় ও দাঁতের নমুনা নেওয়া হয়েছে। মৃতদেহ শনাক্ত করতে এক থেকে ৬ মাস সময় লাগবে। আগামীকাল (শনিবার) পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের বুথ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এরপর সিআইডিতে যোগাযোগ করতে হবে। মৃতদেহের নমুনা দেওয়ার ক্ষেত্রে মা-বাবা বা স্বামী, স্ত্রী বা সন্তানকে আসার অনুরোধ করেছেন সিআইডির সহকারী ডিএনএ অ্যানালিস্ট। তাঁদের কাউকে পাওয়া না গেলে ভাই বা বোন আসতে পারেন। মর্গের সামনে ঢাকা জেলা প্রশাসনের তথ্যকেন্দ্র থেকে জানা গেছে, চারজনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে। ১৫ জনের লাশ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে, তিনজনের লাশ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং মিটফোর্ড হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এসব লাশের নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে।
বার্ন ইউনিটের ৯ জনও শঙ্কামুক্ত নয়: চকবাজারে চুড়িহাট্টায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন নয়জনের কারও অবস্থাই ভালো নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের এখানে নয় জন রোগী আছে। তাদের একজনও আশঙ্কামুক্ত না। আমরা সবাইকে আইসিইউতে ট্রান্সফারের চিন্তা করছি। অলরেডি আমরা পাঁচজনকে ট্রান্সফার করেছি, আর চারজন আছে। আইসিইউতে স্থান সংকটের কারণে তাদের এখনও স্থানান্তর করা যায়নি জানিয়ে সামন্ত লাল বলেন, আইসিইউতে অনেক মুমূর্ষু রোগী আছে। যে কয়জনকে শিফট করা যাবে, তাদেরকে শিফট করে আমরা এই রোগীদের প্রাধান্য দেব। রোগীদের অবস্থা সম্পর্কে এই চিকিৎসক বলেন, বার্ন ইউনিটে প্রথম ৪৮ ঘণ্টায় কিছুই বলা যায় না, কেউ ঝুঁকিমুক্ত না। কেমিকেল বার্ন কোনো সময় সুপারফিশিয়াল বার্ন হয় না, ডিপ বার্ন হয়। এই রোগীদের সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে সোহাগের (২৫) শরীরের ৬০ শতাংশ, রেজাউলের (২১) শরীরের ৫১ শতাংশ, জাকিরের (৩৫) শরীরের ৩৫ শতাংশ, মোজাফফরের (৩২) শরীরের ৩০ শতাংশ এবং আনোয়ারের (৫৫) শরীরের ২৮ শতাংশ পুড়েছে। আর ওয়ার্ডে থাকা হেলালের (১৮) শরীরের ১৬ শতাংশ, সেলিমের (৪৪) শরীরের ১৪ শতাংশ, মাহমুদুলের (৫২) শরীরের ১৩ শতাংশ এবং সালাহউদ্দিনের (৪৫) শরীরের ১০ শতাংশ পুড়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান। বুধবার রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ের কাছে একটি পিকআপের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর পাঁচটি ভবনে আগুন ধরে যায়। ওই ভবন এবং আশপাশের দোকানে থাকা রাসায়নিক আর প্লাস্টিক-পারফিউমের গুদাম আগুনকে ভয়াবহ মাত্রা দেয়। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টার চেষ্টায় সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে, কিন্তু ততক্ষণে চুড়িহাট্টা মোড় পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। ঘটনাস্থল থেকে ৬৭ জনের পোড়া লাশ মর্গে পাঠান উদ্ধারকর্মীরা, নয়জনকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। নিহত ৬৭ জনের মধ্যে ৪৬ জনের মরদেহ শনাক্ত করার পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।
এফএন/এনইউবি