কুয়াকায় বিনে নোটিশে বনবিভাগের উচ্ছেদ অভিযান!

প্রথম পাতা » কুয়াকাটা » কুয়াকায় বিনে নোটিশে বনবিভাগের উচ্ছেদ অভিযান!
শনিবার ● ৩০ অক্টোবর ২০২১


কুয়াকায় বিনে নোটিশে বনবিভাগের উচ্ছেদ অভিযান!

কুয়াকাটা সাগরকন্যা অফিস॥

নোটিশ ছাড়াই অর্তকিত ভাংচুর চালিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে পটুয়াখালীর গঙ্গামতি সৈকতে বনবিভাগের জমিতে বসবাস করা ২২টি জেলে পরিবারকে। এসময় এসব পরিবারের অস্থায়ী বসতঘর ব্যবহার অনুপযোগী করে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। তুলে নিয়ে গেছে সুপেয় পানি পানের একমাত্র টিউবয়েলটি। ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে রান্নার উনুন। ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে একটি পাঞ্জেখানা মসজিদ কাম মক্তব।
উচ্ছেদের ভিডিও ধারন করতে গেলে করা হয়েছে মারধর। মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে  দেয়া হয়েছে একাধিক মামলায় জড়ানোর হুমকি। উপেক্ষা করা হয়েছে সংশ্লিস্ট ইউপি চেয়ারম্যানসহ সদস্যের অনুরোধ। সাগরকন্যাকে জানানো হলে একাধিক মামলায় জড়ানোরও হুমকী দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থরাসহ এলাকাবাসী এসব অভিযোগ তুলে ধরে দাবী করেন, সংশ্লিস্ট বিট কর্মকর্তা বিরাগভাজন হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে।

ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের লোকজন জানান, সাগরে মৎস্য আহরন, প্রক্রিয়াজাত করন, বাজারজাতকরন সুবিধায় গঙ্গামতি সৈকতে বনবিভাগের জমিতে অস্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করে ২২টি জেলে পরিবার বসবাস শুরু করে। সংশ্লিস্ট বনবিভাগের কর্তাদের মৌখিক অনুমতি নিয়ে ২৭ বছর পূর্বে এসব পরিবার বসবাস শুরু করে। ক্ষতিসাধন ছাড়াই বনাঞ্চলের সম্পদ রক্ষায় ভ’মিকা রেখে আসছেন। বনবিভাগের বিভিন্ন সময়ের নির্দেশনাও পালন করে আসছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, প্রতি বছর ঘর প্রতি ২ হাজার টাকা, শুটকী প্রক্রিয়াজাত চাংঙ প্রতি এক হাজার টাকাসহ নৌকা তৈরি কিংবা মেরামতের জন্য ৫’শ করে টাকা করে দিতেন সংশ্লিস্ট বিট কর্মকর্তাসহ
বন প্রহরীদের। তিন মাস পূর্বে বর্তমান বিট কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে তার উপস্থিতিতে বনপ্রহীর হাতে ১২ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আগস্ট মাসের শেষের দিকে কোন দাপ্তরিক কিংবা মৌখিক নোটিশ ছাড়াই উচ্ছেদ অভিযানে নামে বনবিভাগ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সকাল ৮টায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক নিয়ে বনবিভাগের লোকজন ২২টি পরিবারের বসত ঘর ভাঙ্গতে শুরু করে। আতংক ছড়িয়ে চালানো হয় ভাংচুরের তান্ডব। এসময় বেশ কয়েকজন বনপ্রহরী হতের আগ্নেয়অস্র প্রদর্শন করে ভয় দেখিয়ে বেশকয়েকজনকে লাঠিপেটাও করেন। ভাংচুরের ঘটনা ভিডিও ধারনকালে শাহ-জালাল (১২) নামে এক শিশুর মোইল কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। জেলে সাইফুল (২২) বলেন, আমার ৭ মাসের শিশু সন্তানটি ঘরে ঘুমন্ত ছিল। তাকে নিরাপদে সরিয়ে আনার সুযোগ দেয়া হয়নি। জেলে জাহাঙ্গীর আলম (২৭) বলেন, খাবার খেতে ছিলাম। এ অবস্থায় ঘরখানা ভেঙ্গে ফেলা হল। মালামাল সরিয়ে নেয়ার জন্য আধা ঘন্টা সময় চাইলেও না দিয়ে অশালীন ভাষায় গালাগালি করা হয়েছে। জেলে আ. রশিদ (৩৮) ও শাহাবুদ্দিন প্যাদা (৫৮) বলেন, ৩৫জনের নামে পৃথক পৃথকভাবে একটি করে মামলা দেয়া হয়েছে। গঙ্গামতি বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন নিজে প্রতিদিন দু’ফা নানা ধরনের হুমকী দিচ্ছেন। যাদের ছাপড়া ঘর এখনো রয়ে গেছে তাদের ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার হুমকী দিচ্ছেন। জেলে শাহাবুদ্দিন হাওলাদার (৫৫) বলেন, ২৭ বছর ধরে অস্থায়ী ছাপড়া ঘর তুলে সাগরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছি। হঠাৎ উচ্ছেদের ফলে নারী-শিশু-বয়স্কসহ বর্তমানে অনেকের আশ্রয় মিলেছে বেরিবাধের ঢালে। অবরোধের কারনে সাগরে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় পার করতে হচ্ছে মানবেতর জীবন।  জেলে মোহাম্মদ হোসেন (৩০), মো. ফারুক (৩৩) বলেন, এ বছর মৌসুমে ইলিশ মাছ না পাওয়ায় প্রতিটি জেলে পরিবার ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা মহাজনী দাদন ঋনে জর্জরিত। এ অবস্থায় হঠাৎ উচ্ছেদে সবাই দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

ধুলাসর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আ. জলিল আকন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অস্বচ্ছল, ভ’মিহীন ২২টি জেলে পরিবারকে চৈত্র পর্যন্ত থাকার সময় দেয়ার জন্য বিট কর্মকর্তাকে অনুরোধ করলেও তিনি কথা রাখেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গঙ্গামতি বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে আগাম নোটিশ কিংবা সময়ক্ষেপনের সুযোগ নেই। নতুন বাগান সৃজন করতেই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ  করা হয়েছে।

মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশব্যাপী চলমান অবৈধ দখল উচ্ছেদের অংশ হিসাবে মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে গঙ্গমতি বিট অঞ্চলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। দখলদারদের নামে মামলা দেয়া হচ্ছে।


জেআর/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৮:২৬:২৪ ● ২৮৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ