আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
অবরোধ শেষে তিন দিনেও পায়রা নদীতে রুপালী ইলিশের দেখা নেই। খালী হাতে ফিরছে জেলেরা। ইলিশ না পাওয়ায় হতাশ তারা। জেলেদের জালে ইলিশ ধরা না পরায় তারা পরিবার পরিজন নিয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছে। দ্রুত সরকারী সহায়তা দাবী করেছেন জেলেরা। ইলিশ গবেষক ড. মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, অক্টোবর মাসের শেষ ভাগে এবং পুরো নভেম্বর মাসে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সাথে সাথে নদীতে ইলিশ কমে যায়। ওই কারনে পায়রা নদীতে ইলিশ কমে যেতে পারে।
জানাগেছে, বিগত ২৫ অক্টোবর মধ্যরাতে ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। ওইদিন মধ্য রাত থেকেই উপকুলীয় ১৪ হাজার ৬’শ ৮৯ জন জেলে নদীতে ইলিশ শিকারে নেমে পড়েছেন। জেলেরা আশায় বুক বেঁধেছিল অবরোধ শেষে নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালী ইলিশ ধরা পরবে। কিন্তু জেলেদের সেই স্বপ্ন ফিফে হয়ে গেছে। অবরোধ শেষের তিন দিনেও পায়রা নদীতে ইলিশের দেখা নেই। জেলেরা নদী থেকে খালী হতে ফিরে আসছে। ইলিশ না পাওয়ায় তারা পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্ট ও হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান জেলেরা। জেলেরা দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। সারা বছর মাছ শিকার করেই চলে তাদের সংসার জীবন। নদী ও সাগরে ইলিশ ধরা পড়লে ভালো চলে তাদের জীবনকাল। আর মাছ ধরা না পড়লে উনুনে পাতিল উঠে না বলে জানান জেলে ছত্তার।
উপকুলীয় অঞ্চলের গভীর সাগরে, সাগরের কিনারে এবং সাগরের শাখা প্রশাখা নদীতে তিন শ্রেনীর জেলে মাছ শিকার করেন। ইলিশের ভরা মৌসুম আষাঢ়, শ্রাবন, ভাদ্র ও আশ্বিন মাস। এ চার মাসে জেলেরা মাছ শিকার করে সারা বছরের হিসেব চুকিয়ে নেয়। ইতিমধ্যে ইলিশ মৌসুম শেষ হয়েছে। ছিটে খাটে দু’একটি যা ইলিশ পড়ছে তা দিয়ে সংসার চলে না বলে জানান জেলেরা। এদিকে একেতো নদীতে ইলিশ নেই, তার উপর পায়রা নদীর প্রবেশ দ্বার সাগর মোহনায় ডুবোচর। ওই ডুবো চরের কারনে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে ইলিশ উল্টো পথে ফিরে যাচ্ছে। ফলে সাগর মোহনা দিয়ে তেমন ইলিশ পায়রা নদীতে প্রবেশ করছে না। এতেও পায়রা নদীতে ইলিশ শিকারী জেলেদের জালে তেমন ইলিশ ধরা পরছে না।
বুধবার খোজ নিয়ে জানাগেছে, জেলেরা নদীতে জাল ফেললেও তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। দুই একটি যা ধরা পড়ছে তা জাটকা ইলিশ।
পায়রা নদীতে ইলিশ শিকারী জেলে ছত্তার,লাল মিয়া, মোস্তফা সিকদার ও জাহিদ মোল্লা বলেন, অবরোধ শেষে জেলেরা আশা করেছিল নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশের দেখা মিলবে কিন্তু নদীতে কোন ইলিশ নেই। খালী হাতেই ফিরে আসছে জেলেরা। তারা আরো বলেন নদীতে ইলিশ না থাকায় জেলেরা পরিবার পরিজন নিয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে। তারা সরকারীভাবে সহায়তার দাবী জানিয়েছেন।
নয়া বেঙ্গলী গ্রামের জেলে শহীদুল ইসলাম ও জুয়েল মিয়া বলেন, অবরোধ শেষে দুইদিন নদীতে জাল ফেলেছি। মাত্র একটি জাটকা ইলিশ পেয়েছি। তারা আরো বলেন, ইলিশ না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে আছি।
আড়ৎ মালিক মোঃ জলিল ফরাজী বলেন, অবরোধে ইলিশ গভীর সাগরে চলে গেছে। তাই পায়রা নদীতে তেমন ইলিশ নেই। দু’একজন জেলেদের জালে দুই একজন জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়লেও তারা দিয়ে তাদের সংসার চলে না। নদীতে ইলিশ না থাকায় জেলেরা অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছে।
তালতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও নদীতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারনে পায়রা নদীতে জেলেদের জালে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। তিনি আরো বলেন, জেলেদের জালে কিছু ইলিশ ধরা পরলেও তা অধিকাংশই জাটকা ইলিশ।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, অক্টোবর মাসের শেষ ভাগে এবং পুরো নভেম্বর মাসে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় নদীতে ইলিশ কমে যায়। এছাড়া নব্যতা সংঙ্কটসহ নানাবিধ কারনে নদীতে ইলিশ কমে যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, ইলিশ দলবদ্ধভাবে চলাচলা করে। অবরোধের কারনে সাগর ও নদীতে ইলিশ অবাধ বিচরন করেছে। পায়রা নদীতে ইলিশ ধরা না পড়লেও কোথাও না কোথাও ইলিশ ধরা পড়ছে।
এমএইচকে/এমআর