চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত অন্তত ৭০

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত অন্তত ৭০
শুক্রবার ● ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত অন্তত ৭০

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

পুরান ঢাকার চকবাজারে চার তলা একটি বাড়িসহ কয়েকটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৬৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে তবে ধারণা করা হচ্ছে -অন্তত ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। ১৫ ঘণ্টার চেষ্টায় তা পুরোপুরি নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু ততক্ষণে এলাকাটি পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সকালে মোট ৭০টি বডি ব্যাগ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পাঠানোর কথা জানানো হলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ ৬৭টি লাশ পাওয়ার কথা সাংবাদিকদের জানান।
সংখ্যার গড়মিলের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক তারেক হাসান ভূইয়ার ভাষ্য, তাদের হিসাবে লাশ ৭০টি। তবে কয়েকটা ব্যাগে খ- খ- ডেডবডি ছিল। সম্পূর্ণ ডেডবডি হয়ত ৬৭টি হতে পারে। কয়েকটি লাশ এতটাই পুড়েছে যে চেনার উপায় নেই। আর ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, আমাদের কাছে ফুল বডি এসেছে মোট ৬৭টি। তবে আলাদা ব্যাগে কিছু খ-িত দেহাবশেষ আছে। সেগুলো এই মরদেহগুলোরই কি না তা আমরা পরীক্ষা করে দেখব। আপাতত সবগুলো ডেডবডির স্যাম্পল রেখে দিচ্ছি। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেলে জায়গা না হওয়ায় শনাক্ত না হওয়া কয়েকটি মরদেহ অন্যান্য মেডিকেলের হিমঘরে রাখা হচ্ছে।
এসব মরদেহের ডিএনএ নমুনা রেখে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ভবনগুলো থেকে ৭০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেই সাথে আহতের মধ্যে ১১ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন বলে ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্তব্যরত কর্মকর্তা রাসেল সিকদার বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে সংবাদমাধ্যমকে জানান।
মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে যখন আগুন পুরোপুরি নেভানো যায়নি তখন ৪১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়, আর ৬৭জনের মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আনা হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট। এছাড়া, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করতে এবং ওই এলাকার আবহাওয়া ঠা-া রাখতে বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার থেকে পানি ও রাসায়নিক দ্রব্য ছিটানো হয়, যোগ করেন তিনি। রাসেল সিকদার জানান, উদ্ধার অভিযান গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। তবে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে মোতায়েন থাকে।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের আরেক কর্মকর্তা মাহফুজ রিভান জানান, সব মরদেহ ময়নাতদন্ত করার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, আগুনে দগ্ধদের মধ্যে ১৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া ২১ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, তদন্তের পর অগ্নিকা-ের কারণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার তদন্ত করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বুধবার রাতে জানান, রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে চুরিহাট্টা এলাকায় একটি চারতলা ভবনের নিচতলায় রাসায়নিকের গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে তা মুহূর্তেই পাশের চারটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদরদপ্তর সূত্র জানায়, তাদের ৩৭টি ইউনিট রাত ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরের উপ-পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) দীলিপ কুমার বলেন, রাত ২টা ৫৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও অন্য ভবনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ায় তা পুরোপুরি নেভাতে সময় লেগেছে।
স্থানীয়রা জানান, চকবাজার এলাকায় ‘ওয়াহেদ ম্যানসন’ নামে একটি ভবন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ভবনটিতে একটি মার্কেট ও একটি রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম ছিল। ওই ভবনটির তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় প্রায় ৪০ পরিবারের ৮০ জন সদস্য বসবাস করতেন। পরে আগুন পাশের একটি ছয়তলা ভবন, একটি রেস্টুরেন্ট, একটি কমিউনিটি সেন্টার ও আরেকটি ভবনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় ১২৪ জন নিহত হয়েছিলেন।
৪৬ জনের মরদেহ হস্তান্তর: শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত অগ্নিকা-ে নিহত ৪৬ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুরান ঢাকার চকবাজারে রাসায়নিকের গুদাম থেকে সৃষ্ট ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪৬ জনের পরিচয় শনাক্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪৬ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সিইডি’র (মিডিয়া) অতিরিক্ত এসপি শারমীন জানান জানান, নিহতদের মধ্যে যাদের মরদেহ শনাক্ত করা যায়নি তাদের ডিএনএ নমুনা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার কাজ আজ (গতকাল শুক্রবার) থেকে শুরু করা হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ময়নাতদন্তের সময় শনাক্ত না হওয়া মরদেহের ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণ করে রেখে দেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শোক: পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে হতাহতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সকালে এক শোক বার্তায় তিনি এ মর্মান্তিক ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। আহতদের আশু সুস্থতাও কামনা করেন তিনি। রাষ্ট্রপতি এ দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সবার প্রতি আহ্বানও জানান।
এদিকে, পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে হতাহতের সহায়তা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী অগ্নিকা-ে প্রাণহানিতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। প্রেস সচিব বলেন, আগুনে আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এবং নিহতদের পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বর্তমানে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা এইচ এম এরশাদও এই অগ্নিকা-ে ব্যাপক প্রাণহানিতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ অগ্নিদগ্ধদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি অগ্নিকা-ে নিহত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৪:৫১ ● ৪২২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ