দশমিনা (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
ভারী বর্ষণ ও বন্যায় শুকনো খড় পচে নষ্ট হওয়ায় পটুয়খালীর দশমিনায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে গবাদি পশু নিয়ে কৃষক ও ক্ষুদ্র খামারিরা বিপাকে পড়েছেন।
খামারিরা জানান, তেতুঁলিয়া ও বুড়াগেীরাঙ্গ নদীবেষ্টিত উপজেলার প্রায় প্রতিটি পরিবার গবাদি পশু পালন করে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আবার অনেকেই গবাদি পশুর ছোট ছোট খামার গড়ে তুলেছেন। এসব পশুর খাদ্যের জন্য ধান মাড়াই শেষে ধানগাছ শুকিয়ে খড়ের গাদা করে মজুদ রাখেন, যা সারা বছর গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চলতি বছর জুন মাসের শেষ থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ভারী বর্ষণ ও থেমে থেমে কয়েক দফা বন্যায় চাষিদের খড়ের গাদা পানিতে ডুবে পচে নষ্ট হয়েছে। ফলে নদী তীরবর্তী নি¤œাঞ্চলের প্রায় সব পরিবারের সঞ্চিত খড় নষ্ট হওয়ায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে, গো-খাদ্য হিসেবে খড়ের চাহিদা বাড়ায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে খড় ক্রায় করে নিচ্ছেন। তারা পাশ্ববর্তী উপজেলা থেকে খড়ের গাদা কিনে ছোট ছোট পুঁটলি তৈরি করে নিচ্ছেন । কম পুঁজির খামারি বা কৃষকরা এসব পুঁটলি কিনে সামান্য পরিমাণে খাবার হিসেবে দিয়ে গরুগুলোকে কোনো রকমে বাঁচিয়ে রাখছেন। বয়স্ক একটি গরুর জন্য দৈনিক খড় লাগে একশ’ টাকার এবং দানাদার খাদ্যে ব্যয় হয় আরও একশ’ টাকা। সবমিলে গরু প্রতি দৈনিক দুশ’ টাকা খরচ হচ্ছে। তবে সংকটের কারণে পরিমাণ মতো খাদ্য না পেয়ে অনেক গরু হাড্ডিসার হয়ে গেছে। ফলে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা। কিছুদিন আগে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া লাম্পিং স্কিন রোগের চিকিৎসা করতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারিরা। এরই মধ্যে খাদ্যের সংকটে পড়ে তারা আরও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
অন্যদিকে, ভুষি, চালের গুড়াসহ বিভিন্ন দানাদার গো-খাদ্যের দামও লাগামহীন ভাবে বেড়ে চলেছে। প্রতি বস্তা ভুষি ১৫/১৬শ’ টাকা থেকে বেড়ে ১৭/১৮শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধানের গুঁড়া (৫০ কেজি) প্রতি বস্তা ৪শ’ টাকা থেকে বেড়ে ৫শ’ টাকা বিক্রি হচ্ছে। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে অনেক হোটেল, রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় দুধের চাহিদা অনেকাংশে কমে গেছে। ফলে দুগ্ধ খামারগুলো অর্থ সংকটে পড়েছে। একদিকে দুধের দাম কম এবং অন্যদিকে গো-খাদ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। খাদ্য কম থাকায় দুধের উৎপাদনও কমেছে। লোকসানের আশঙ্কায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন জেলার খামারিরা।
উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিন দাসপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র খামারি মো. মজিদ হাওলাদার, সংকর শীল, ইউনুছ তালুকাদও, শহিদুল ইসলামসহ আর অনেকে জানান, গো-খাদ্য নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। খামার ধরে রাখতে চরা দামে খড় কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বন্যা ও নদী ভাঙনে দিশেহারা এসব খামারি পরিবার নিজেদের খাদ্য যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় গো-খাদ্য কেনা তাদের জন্য অনেকটাই অসম্ভব। কেউ কেউ চরা সুদে দাদন ব্যবসায়ীর কাছে ঋণ নিয়ে খামার ঠিক রাখছেন। অনেকেই খাদ্যের যোগান দিতে না পেরে পোষা গরুগুলো বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা আরও জানান, সারা বছরের জন্য গো-খাদ্য হিসেবে সঞ্চিত রাখা হতো শুকনো খড়। এ বছর অতিবর্ষণ ও বন্যার কারণে খড় পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘ঘন ঘন বৃষ্টি ও বন্যার কারণে খামারিদের সঞ্চিত খড়ের গাদা পচে নষ্ট হওয়ায় গরুর শুকনো খাদ্যেও একটু সংকট দেখা দিয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের সরবরাহ করা চারায় লাগানো কাঁচা ঘাস ও মাঠের আইল থেকে কাঁচা ঘাস সংগ্রহ করতে খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে আমন ধান ঘরে আসলেই এ সংকট কেটে যাবে। ’###
এসবি/এমআর