ছাতক (সুনামগঞ্জ) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
সুনামগঞ্জের ছাতকে লাফার্জ সুরমা হোলসিম বাংলাদেশ( লাফার্জ এর সুপারক্রীট সিমেন্ট) কারখানার ২৩ পরিবহন শ্রমিকের পক্ষে উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকা সত্যেও হারনুর রশিদের প্রতারণার কারণে বেতন ভাতা পাচ্ছেনা পরিবহন শ্রমিকরা। এর নৈপত্তে ছাতকের অনিবন্ধিত ঠিকাদারী প্রতিষ্টান এইচ আর এন্টারপ্রাজ। এইচ আর এন্টারপ্রাইজের মালিক হারুনুর রশিদ ২৩পরিবহন শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেখান ২০১২ সালে কিন্তু শ্রমিকরা লাফার্জে কাজ করে আসছে ২০০৬ সাল থেকে। শ্রমিকদের দাবী লাফার্জের সাথে আতাত করে অর্থলুভে হারুনুর রশিদ সরযন্ত্রমুলভাবে যুক্তি করেছেন তারা এইচ আর এন্টারপ্রাইজের নিয়োগ প্রাপ্ত নয়। এবিষয়ে লাফার্জের পক্ষে দালালী না করার জন্য হারুনুর রশিদকে লিগ্যাল নোটিশ ও পাটানো হয়। বেতন ভাতার পাওনা থেকে ২৩ জন পরিবহন শ্রমিক বঞ্চিত হয়েছেন এইচ আর এন্টারপ্রাইজের প্রতারণার দায়ে। এইচ আর এন্টারপ্রাইজের মালিক হারুনুর রশিদের প্রতারনার শিকার ২৩জন পরিবহন শ্রমিককে মামলা প্রত্যাহার হুমকীও দেন তিনি। এ ঘটনায় প্রতারক হারুনুর রশিদের নামে খালেদ মিয়া বাদী হয়ে থানায় সাধারন ডায়েরী করেন। পরিবহন শ্রমিকরা তাদের চাকুরীর নিয়োগপত্র বাস্তবায়ন করার দাবী জানিয়ে আসলেও তাদের দাবীর এ বিষয়টি আমলে নেয়নি লাফার্জ কতৃপক্ষ।
জানা যায়, গত ২০১৩ সালের ৯ডিসেম্বর নিজেদের অধিকার বাস্তবায়নের দাবীতে চট্টগ্রাম ২য় শ্রম আদালতে ২৩টি মামলা (নং৩০ থেকে ৫২) (আইআর) দায়ের করেন এসব পরিবহন শ্রমিকরা। এ মামলার পর ২০১৪ সালে কোন কারণ না দেখিয়ে আদালতের কাছে বিচার চাওয়া ২৩ পরিবহন শ্রমিককে একযোগে হারুন রশিদের কুপরামশর্শে ছাটাই করে দেয় লাফার্জ কতৃপক্ষ। পাশাপাশি কোম্পানির পক্ষ থেকে আদালতে মামলা খারিজের আবেদন করেন। শুনানী শেষে আদালত ২০১৪ সালের ১০ মার্চ শ্রমিকদের মামলার বিপরীতে লাফার্জের মামলা খারিজের আবেদনটি নামঞ্জুর করেন। কিন্তু আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ আবারও ঢাকা শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল মামলা (নং৭২ থেকে ৯৪) দায়ের করে। আপিল চলাকালীন অবস্থায় আদালত ২০১৪ সালের ১০ এপ্রিল আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের সকল সুযোগ- সুবিধা বহাল রাখার আদেশ প্রদান করেন আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধেও লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট (লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ) কোম্পানী হাইকোর্ট বিভাগে ২০১৪ সালে একটি রিট মামলা (নং৩৫৩৯) দায়ের করে। কিন্তু আপিল ট্রাইব্যুনালে শুনাণী শেষে পরিবহন শ্রমিকদেরকে সুযোগ-সুবিধা দেয়ার জন্য নিম্ন আদালতের দেয়া রায় বহাল রাখেন ট্রাইব্যুনাল। তবুও আদালতের এসব রায় কে তোয়াক্কা করেনি লাফার্জ সিমেন্ট কোম্পানীর কতৃপক্ষ। শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা না দেয়ার পক্ষেই তারা তাদের ইচ্ছে অনুযায়ি সিদ্ধান্ত নিতে থাকে। সর্বশেষ আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধেও আবারও এই কোম্পানী ২০১৪ সালেই হাইকোর্ট বিভাগে আরও একটি রিট মামলা (নং- ৮৬৭২ থেকে ৮৬৯৪)দায়ের করে। এই রিট মামলায় ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ রুল ডিসচার্জ করে ও ভেগেট করে মূল মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশসহ লাফার্জের করা ২০১৪ সালের রিট মামলা(নং৩৫৩৯) ননপ্রসিকিউশন হেতুতে ডিসচার্জ করে দেন আদালত।
পরে পুনরায় মুল মামলা চালুসহ শ্রমিকরা তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য চট্টগ্রাম ২য় শ্রম আদালতে আবেদন করলে ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট লাফার্জ হোলসিম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা ২৩ পরিবহন শ্রমিককে বেতনভাতা প্রদানসহ চাকুরীতে যোগদানের আদেশ প্রদান করেন। শ্রমিকদের ন্যায্য পাওয়া না দিয়ে এই কোম্পানী আবারও ২০১৮ সালে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আরও একটি রিট মামলা (নং৮৩১) দায়ের করে। পাশাপাশি শ্রমিকরাও তাদের অধিকার পেতে রীট মামলাটি স্থগিত আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল মামলা(নং১১৭৩) দায়ের করে। শুনানী শেষে আদালত ২০১৪ সালের ১১ মার্চ পরিবহন শ্রমিকদের সকল সুবিধা বহাল রাখার আদেশ প্রদান করেন। এরপর লাফার্জ একই কোর্টে আদেশ নর্টিফিকেশন চেয়ে আবেদন করলে তা গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২০ মে মহামান্য প্রধান বিচারপতির কোর্টের ফুল ব্রাঞ্চ শ্রমিকদের পক্ষে চেম্বার জজ এর আদেশ বহাল রাখেন। কিন্তু এ আদেশকেও তোয়াক্কা করছেনা। ছাতকে লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট(লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ) কারখানা কর্তৃপক্ষ।
আদালত অবমাননা করে পরিবহন শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা না দেয়ার পক্ষেই অটল লাফার্জ। তখন পর্যন্ত চাকুরীতে ফিরতে না পারায় চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন ২৩জন পরিবহন শ্রমিক। তাদের অধিকার বাস্তবায়নে আদালতের আদেশ মেনে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মালিক- শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ। লাফার্জ পরিবহন শ্রমিক সংগ্রাম কমিঠির সাধারন সম্পাদক শাহজাহান আলীসহ অন্যান্যরা বলেন আমরা কোম্পানীর বেশকিছু গাড়ি চালাতাম, তারা আমাদেরকে চাকুরি দিয়েছে অনেকদিন, কিন্তু চাকুরি নামমাত্র, কোন নিয়োগপত্র দিতে নারাজ তারা, আমরা আমাদের অধিকার চেয়েছি, কিন্তু তারা আরও উল্টো পরিবহন শ্রমিকদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে থাকে, এক সময়ে আমাদেরকে চাকুরি থেকে দালাল হারুন রশীদের কুপরামশে অমানবিকভাবে ছাটাই করে দেয়, আমরা আদালতের কাছে বিচার চেয়েছি, আদালত বার বার আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে, কিন্তু লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানা বা ঠিকাদারি প্রতিষ্টান এইচ আর এন্টারপ্রাইজের মালিক হারুনুর রশিদ আদালতের নির্দেশ মানছেন না। মামলা নিষ্পতি না হওয়া পর্যন্ত আমরা যদি হারুনের শ্রমিক হয়ে থাকি তাহলে হারুন বেতন ভাতা পরিশোধ করবে আমরা হারুন চিনিনা আদালতের নির্দেশে তাকে আমরা মামলায় পক্ষভুক্ত করেছি।তার এই প্রতারনার কারণে তারা আজ অধিকার বঞ্চিত।এখন তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করার নানা চাপ সৃষ্টি করেছে।এ বিষয়েও সিলেট মেট্রোপলিটন আদালতে প্রতারনার মামলা করেছি মামলাটি পিবিআই ইনভেস্টিগেশন করছেন।
এএমএল/এমআর