বরগুনা সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন না করায় প্রতিবাদ করলে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে একজনকে। ঘটনাটি ঘটেছে, ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২ টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার ১০ নং নলটোনা ইউনিয়নের গর্জন বুনিয়া বাজারে।
জানা যায়, গর্জন বুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন না করায় ওই স্কুলের সাবেক সভাপতি, বর্তমান সহ-সভাপতি ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ হারুন-অর-রশিদ পঞ্চায়েত জিজ্ঞাসা করলে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তারের স্বামী এজাজ হোসেন মঞ্জু ও তার ভাসুর মনির মিয়া মিলে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে হারুন-আর- রশিদকে। পরে স্থানীয়রা বরগুনা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন তাকে।
হাসপাতালের বেডে হারুন অর রশিদ বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সারাদেশে যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয়। কিন্তু আমাদের এই সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিবসটি পালন করা হয়নি।কেন পালন করা হয়নি জানতে চাইলে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের স্বামী ও ভাসুর মিলে আমাকে মারধর করে। আমি দীর্ঘদিন যাবত এই স্কুলের সভাপতি ছিলাম এবং বর্তমানের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। বিষয়টি নিয়ে বর্তমান স্কুল কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান খান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর বিশ্বাসকে আলোচনা করলে তাদের সামনেই আমার উপরে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়।যারা আমাদের মাতৃ ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে তাদের জন্য আমরা এইটুকু সম্মান দেখাতে পারব না। আর এর প্রতিবাদ করতে গেলেই আমাদেরও জীবন দিতে হবে। তাহলে কোথায় দেশ স্বাধীন হলো। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
এ ব্যাপারে গর্জন বুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আ: মন্নান খান বলেন, স্কুলে যখন মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়নি ঘটনাটি শুনে সাথে সাথে আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদককে নিয়ে স্কুলে যাই। গিয়ে স্কুল তালাবদ্ধ দেখতে পাই এবং কোনরকম ভাষা দিবস পালন করা হয়নি। সভাপতি হিসেবে আমি আসলেই লজ্জিত, কলঙ্কিত করেছে ভাষা সৈনিকদেরকে সামান্যতম শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি।এরই প্রতিবাদ করলে উল্টো এই স্কুলের সহ-সভাপতিকে মারধর করে এমনকি আমাকেও হুমকি দেয়। যাতে বিষয়টি নিয়ে আমি সামনে বাড়াবাড়ি না করি।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর বিশ্বাস বলেন, স্কুলে মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়নি এমন তথ্যের ভিত্তিতে আমি ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাথে সাথেই স্কুলে যাই। কিন্তু স্কুলে গিয়ে তালাবদ্ধ দেখতে পেয়েছি।স্থানিয়দের কাছে শুনেছি প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার হাই স্কুলের সাথে র্য্যালীতে অংশ নিয়ে একটি ছবি তুলেই বাড়িতে চলে গেছে। তার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন অনুষ্ঠান এমনকি স্কুলের অনান্য শিক্ষকরাও উপস্থিত ছিল না। এই ঘটনার প্রতিবাদ করাতেই স্কুলের সহ-সভাপতি হারুন-অর-রশীদকে আমাদের সামনেই প্রধান শিক্ষকের স্বামী ও ভাসুর মারধর করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এর কঠিন বিচার হওয়া উচিত এরা হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি।
১০ নং নলটোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, মাতৃভাষার জন্য যারা শহীদ হয়েছে তাদেরকে একটু শ্রদ্ধা জানাতে পারবে না সে কেমন শিক্ষক। সে কেমন করে জাতি গড়বে? আর তার কাছ থেকে আমাদের বাচ্চারা কি শিখবে? যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে প্রধান শিক্ষকের স্বামী এবং ভাসুর আসলে দুঃখজনক আমি নিজে হারুন-আর- রশিদকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে দেখতে গিয়েছি। এর একটা সুষ্ঠু বিচার হওয়া উচিত ।না হলে এরা সামনে আরো পার পেয়ে যাবে। আমার মনে হয় এরা ভাষা শহীদদের পক্ষে নয়। বিপক্ষের একটি অপশক্তি। বিষয়টি তদন্ত করে উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যারা রয়েছেন তারা ব্যবস্থা নিবেন এই আশা রাখি।
এ বিষয়ে গর্জন বুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার মোঠ ফোনে বলেন, আমি অনুষ্ঠান করেছি। আমার কাছে ছবি তোলা আছে। এদের সাথে আমার পূর্ব শত্রুতা রয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আরিফুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি আমি সাথে সাথেই শুনেছি ওই স্কুলে সভাপতি আমাকে জানিয়েছে। স্কুলে নাকি মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়নি। তদন্ত চলছে সত্যতা পেলে আমি প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। যে ঘটনাটি ঘটেছে আসলেই দুঃখজনক।
হারুন-আর- রশিদের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কর্তব্যরত ডাক্তার শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রেরণ করেছে।
এ ব্যাপারে বরগুনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আবির মোহাম্মদ জানান, আমার কাছে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এখনো মামলা হয়নি। তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে।