ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. মিজানুর রহমানের অনিয়ম, দুর্নীতি, গ্রাহকের সংরক্ষণকৃত আলু চুরি, স্বেচ্ছাচারিতা, ব্যাংক ঋণ ও অর্থ আত্মসাতের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান চৌধুরী।
রবিবার (৩ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় ফুলবাড়ী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) ইকবাল কবীর বাধন ও পিএস আজগর আলী।
লিখিত বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. মিজানুর রহমান দীর্ঘ ২১ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের এমডি’র পদে আসীন থেকে চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য পরিচালকদের সঙ্গে কোন প্রকার পরামর্শ কিংবা আলোচনা ছাড়াই নিজ খেয়ালখুশি মতো অনিয়ম, দুর্নীতি, গ্রাহকদের সংরক্ষণকৃত আলু চুরি করে বিক্রি, ভুয়া রেজুলেশন, পরিচালকদের স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক ঋণ ও আর্থ আত্মসাত করায় প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে দেউলিয়া হতে বসেছে। এতে করে পরিচালকরাও সহায় সম্বল হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়ে পড়েছেন। ২১ বছর এমডি’র পদে আসীন থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের কোন প্রকার আয় ব্যায়ের হিসাব দেননি পরিচালকদেরকে। এমডির স্বেচ্ছাচারিতাসহ অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে পরিচালক এমএ কুদ্দুস ইতোপূর্বে তার শেয়ারের অংশ তুলে নিয়ে প্রতিষ্ঠান ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। চলতি বছরে কোল্ড স্টোরেজটি বাৎসরিক ৯৪ লাখ টাকায় ভাড়া দিয়ে চেয়ারম্যানসহ পরিচালকদের ফাঁকি দিয়ে পুরো টাকাই ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে গ্রহণ করে তা আত্মসাত করেছেন এমডি। একইভাবে চেয়ারম্যানসহ পরিচালকদের লভ্যাংশের টাকা না দিয়ে গত তিন বছরে এমডি প্রায় ৫ কোটি টাকা একাই আত্মসাত করেছেন। তার স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির কারণে ইতোমধ্যে অর্থঋণ আদালতে চেয়ারম্যান, এমডিসহ পরিচালকদের নামে ৩৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা দাবী করে মামলা করেছে ব্যাংক। মামলার রায় হলে চেয়ারম্যানসহ পরিচালকরা সর্বস্ব হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসবেন। শতাধিক গ্রাহক ও ব্যক্তিকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এমডি। এতে করে পাওনাদারেরা সময়ে অসময়ে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বিভিন্নভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। একইভাবে গ্রাহকদের সংরক্ষিত আলু চুরি করে গোপনে বিক্রির অভিযোগে এমডিসহ ৮ জনের নামে ফুলবাড়ী থানায় আলু চুরির মামলা করেন গ্রাহকরা। যা আদালতে বিচারাধিন রয়েছে। পবিত্র হজ্বে পাঠানোর কথা বলে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন ওই এমডি। এদিকে চেক জালিয়াতি করে ৯৭ লাখ টাকা আত্মসাত করায় আদালতে মামলা করেছে ফুলবাড়ী শাখা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। একইভাবে রংপুরে চেক জালিয়াতির কারণে আদালত ডা. মিজানুর রহমানকে এক বছর কারাদণ্ডসহ ১০ লাখ টাকা পরিশোধের আদেশ দিয়েছেন। ভয়ভীতিসহ প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়ায় ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান থানায় নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরী করেছেন। অপরদিকে চেয়ারম্যানের পিএ ইকবাল কবীর বাধনকে তার পাওনা টাকা বাবদ ৩৫ লাখ টাকার চেক প্রদান করেন এমডি। কিন্তু চেকটি ব্যাংক ডিজঅর্নার হওয়ায় ইকবাল কবীর বাধন টাকা আদায়ে এমডিকে উকিল নোটিশ পাঠানোর কারণে এমডি মিজানুর রহমান থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে ইকবাল কবীর বাধনকে গ্রেপ্তার করান।
প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান চৌধুরী প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. মিজানুর রহমানকে তার মুঠোফোনে ০১৭১১ ***০৬৬ কল করা হলেও ফোনের রিং বাজলেও তিনি ফোন গ্রহণ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এএইচসি/এমআর