আমতলীতে অধ্যক্ষের জালসনদ তদন্তে কমিটি গঠন

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে অধ্যক্ষের জালসনদ তদন্তে কমিটি গঠন
শনিবার ● ২ অক্টোবর ২০২১


আমতলীতে অধ্যক্ষের জালসনদ তদন্তে কমিটি গঠন

সাগরকন্যা ডেস্ক রিপোর্ট॥

আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজ অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়া ও সাবেক সভাপতি মোসাঃ মাকসুদা আক্তার জোসনার সনদ জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তদন্ত কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্র পরিচালক ড. অলক কুমার সাহা আগামী মঙ্গলবার কলেজ পরিদর্শন করার কথা রয়েছে। এদিকে তদন্ত কর্মকর্তার প্রেরিত কলেজ পরিদর্শনের চিঠিতে সনদ যাচাইয়ের বিষয়টি বাদ দেয়ায় ধু¤্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের চিঠির মর্মানুসারে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। অভিযোগ ওঠেছে,  জাল সার্টিফিকেটধারী পদত্যাগী অধ্যক্ষ ফোরকান মিয়া  তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এমন অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
জানাগেছে, ১৯৯৯ সালে মোঃ ফোরকান মিয়া বিএ (পাস)’র জাল সার্টিফিকেটে আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজে ইসলামী শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক পদে চাকুরী নেন। ২০১০ সালে তিনি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ওই কলেজের অধ্যক্ষ পদে আসীন হন। অধ্যক্ষ পদে আসীন হওয়ার তিন বছরের মাথায় ২০১৩ সালে দুর্ণীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও সার্টিফিকেট জালিয়াতির অভিযোগে কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। সাময়িক বরখাস্তের পরেই ডিগ্রী পাসের জাল সার্টিফিকেটের তথ্য বেরিয়ে আসে।  সার্টিফিকেট জালিয়াতির তথ্য ফাঁসের পর তিনি স্বেচ্ছায় অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের ৮বছর পরে এ বছর ৮জুলাই ফরোয়াডিং জালিয়াতি করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ফোরকান মিয়া এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে মোসাঃ মাকসুদা আক্তার জোসনার নাম প্রস্তাব করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তথ্য যাচাই বাছাই না করেই কলেজের এডহক কটিমির সভাপতি বরগুনা জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে মোসাঃ মাকসুদা আক্তার জোসনাকে সভাপতি করে কমিটি দেন। ওই এডহক কমিটি বিধি বর্হিভুত ভাবে মোঃ ফোরকান মিয়াকে কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেন। কমিটির মেয়াদ গত ১৫ আগষ্ট শেষ হয়।  কমিটির মেয়াদ শেষে ফোরকান মিয়া পুনরায় এডহক কমিটির জন্য মোসাঃ মাকসুদা আক্তার জোসনাকে সভাপতি চেয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মোসাঃ মাকসুদা আক্তার জোসনার বিএসএস পাশের সার্টিফিকেট যার রোল নং-৭০২৯৭০, রেজি নং-০৯৬৬৩৫৫ এবং পাশের সন-২০০৪ যাচাই করেন। তার সার্টিফিকেট যাচাই করে সঠিক পাওয়া যায়নি বলে কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা তার এক চিঠিতে উল্লেখ করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পদত্যাগী অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়া ও সভাপতি মাকসুদা আক্তার জোসনার সনদ যাচাই ও কলেজের সার্বিক বিষয় তদন্ত করতে কমিটি গঠন করেন।  জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা বিগত ১৫সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এডহক কমিটির সভাপতি ও অধ্যক্ষের সার্টিফিকেট যাচাই এবং কলেজের সার্বিক অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিয়ের জন্য ড. অলক কুমার সাহা পরিচালক বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। ওই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মাকসুদা আক্তার জোসনার বিএসএস পাশের সনদটি সঠিক পাওয়া যায়নি। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের তদন্ত কর্মকর্তা বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্র পরিচালক ড. অলক কুমার সাহা ৫ অক্টোবর সরেজমিনে কলেজ পরিদর্শনে এক চিঠি দেন। ওই চিঠিতে সাবেক সভাপতি মোসাঃ মাকসুদা আক্তার জোসনা ও অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়ার সনদ যাচাই বাছায়ের বিষয়টি উল্লেখ না করে কলেজের প্রশাসনিক, একাডেমিক,  অবকাঠোমো ও আর্থিক তদন্তের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তার এমন চিঠি নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে ধু¤্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ ওঠেছে জাল সাাির্টফিকেটধারী পদত্যাগী অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়া তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় তদন্ত কর্মকর্তার চিঠিতে সভাপতি ও অধ্যক্ষের সার্টিফিকেট জালিয়াতির বিষয়টি উল্লেখ নেই।  এদিকে ২০১৭ সালে বকুলনেছা মহিলা কলেজের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিদর্শনের প্রতিবেদন দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক রাকিবুল হাসান স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে প্রাক্তন অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়া চাকুরী নেয়ার সময় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে ইসুকৃত ১৯৯২ সালের বিএ পাশের সার্টিফিকেট জমা দেন। ওই সার্টিফিকেটটি জাল। সাটিফিকেটের বিষয়ে আদালতে মামলা হয়ে তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ওই সনদটি অস্বীকার করে প্রিমিয়িাম ইউনিভার্সিটির একটি বিএ পাশের সনদ আদালতে প্রদর্শন করেন। যাচাই বাছাই শেষে ওই সনদও জাল বলে তারা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।  একই সালে প্রতিবেদনে তারা আরো উল্লেখ করেছেন যেহেতু তার সনদ জাল সেহেতু তার নিয়োগ বিধি সম্মত নয়।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ মজিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন,  পদত্যাগকৃত অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়ার বিএ পাশের সনদ জাল। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের চিঠিতে ওই জাল সনদের তদন্তের নির্দেশ থাকলেও তদন্ত কর্মকর্তা বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্র পরিচালক ড. অলক কুমার সাহা চিঠিতে তার সার্টিফিকেট যাচাইয়ের কথা উল্লেখ করেনি। তদন্ত কর্মকর্তার  এমন চিঠিতে আমি হতবাক। এতে জাল সনদধারী ফোরকানের সনদের তদন্ত এড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের চিঠির মর্মানুসারে তদন্তের দাবী জানিয়েছেন তিনি।
জাল সার্টিফিকেটধারী পদত্যাগী অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়া তদন্ত কাজে প্রবাহিত করার কথা অস্বীকার করে বলেন, কলেজের সকল শিক্ষক কর্মচারীর সাটিফিকেটসহ সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করতে পরিচালক চিঠি দিয়েছেন।
পরিচালক বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্র, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ড. অলক কুমার সাহা বলেন, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের পত্রানুসারে তদন্ত করবো। তিনি আরো বলেন, আগামী কালই আমার দেয়া চিঠি সংশোধন করে দেয়ার হবে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪৩:৩৬ ● ২৮৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ