চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
চরফ্যাশন উপজেলার গ্রামীন উন্নয়ন প্রত্যয় চরাঞ্চলীয় এলাকার সুপারির উৎপাদন কমেছে। এই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় আম্পান, ইয়াসের প্রভাবে লবনাক্ততা বৃদ্ধি পেয়ে উৎপাদান হ্রাস পেয়েছে বলে সুপারী খামারীগণ জানিয়েছেন। তবে মূলভাল থাকায় দৈনিক বাণিজ্যে কোটি টাকার লেনদেন হয় ।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, ইলিশ, মহিষের দধি, নারিকেল ও সুপারির জন্য প্রসিদ্ধ চরফ্যাশন। তবে কয়েকটি কারণে দিনদিন গ্রামীন অর্থকরী ইলিশ, নারকেল ও সুপারির ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় আশানুরূপ সুপারি উৎপাদন না হলেও বিভিন্ন হাটবাজারে সুপারি ক্রয়-বিক্রয় জমে উঠেছে। দামও বেড়েছে এক ‘বি’কাচা সুপারিতে (৩২০টি) ৫শ‘ থেকে ৬শ‘ টাকা। প্রাকৃতিক দূর্যোগ আম্পান ও ইয়াসের প্রভাবে লবনাক্ত পানি প্রবেশ করায় অনেক চরাঞ্চলীয় এলাকায় সুপারি গাছ মরে যাওয়া ও নদী ভাঙনে হাজার হাজার হেক্টর বন নষ্ট এবং বনাঞ্চল উজাড় করে বাড়িঘরসহ মার্কেট নির্মাণের ফলে সুপারি উৎপাদন কমছে বলেও জানান সচেতন মহল। তবে গুরুত্বপূর্ণ এ অর্থকরী ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হাছনাইন বলেন, এ অঞ্চলের বাগানের সুপারি গাছে সার ও মাটি দিয়ে যত্ম নেয়া হলে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। চরফ্যাশন উপজেলার গ্রামীন হাটবাজারের পাইকারি সুপারি আড়ৎগুলোতে দেখা যায়, সুপারি কেনা-বেঁচার চিত্র। আড়ৎ থেকে খুচরা বাজারে বিক্রয় হচ্ছে কাচা সুপারি। প্রতি এক ‘বি’সুপারি আকার ভেদে বিক্রয় হচ্ছে ৫শ থেকে ৭শ টাকায়। এছাড়াও শুকনো (টাডি সুপারি) খুচরা বাজারে সাড়ে ৫শ থেকে সাড়ে ৭ টাকায় কেজিতে বিক্রয় হয় বলেও জানান একাধিক খুচরা ব্যবসায়ী।
গ্রামগঞ্জের সুপারি বাজারগুলোতে ক্রেতা বিক্রেতার সমাগম চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন গ্রাম থেকে গৃহস্থ ও বেপারীরা রিকশা, সাইকেল ভ্যান ও নসিমন এবং ট্রাকে করে বস্তায়, বস্তায় কাচা সুপারি নিয়ে আসছেন বড়, বড় আড়ৎ গুলোতে। পাইকাররা সুপারী ক্রয় করে ভাড়া নেয়া খোলামাঠে অথবা গুদাম ঘরে স্তুপ করে রাখছেন এসব সুপারি। এ সুপারী কয়েক শতাধিক শ্রমীক মিলে বাছাই শেষে গণনা করে বস্তাবন্ধি করা হচ্ছে। চরফ্যাশনের এ সুপারি বাজার ও আড়ৎগুলোতে বছরে প্রায় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার সুপারি ক্রয় বিক্রয় হয় বলেজানান আড়ৎ মালিকগণ।
উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন বাজারে হাটের দিন প্রায় শতাধিকের বেশি পাইকার সুপারি ক্রয় করেন। বাজারের সুপারি ব্যবসায়ীদের সহযোগীতার জন্য শ্রমিকরা কাজ করে প্রতিদিন দেড় থেকে ২হাজার টাকা প্রডাকশনে কামাই করেন। সুপারি বাছাই ও গণনা শেষে বস্তা তৈরী করায় নিয়োজিত শ্রমিক জামাল বলেন, সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা বা ১১টা পর্যন্ত বাছাই ও গণনা এবং বস্তা ভরে দৈনিক দেড় থেকে ২হাজার টাকা উপার্জন করি। এ কাজ করেই সারাবছর সংসার চালাই আমরা।
এ সুপারি জেলা উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিং ও রংপুরসহ দেশের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা গুলোতে রপ্তানি করা হয়।
চরফ্যাশনে প্রতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৩হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ১২হাজার ২৫০ টন শুকনো সুপারি উৎপাদিত হয়ে থাকে। বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী অধির সিংহ বলেন, আমাদের আড়তে দৈনিক ৫শ ‘বি’সুপারি বিক্রয়ের জন্য গৃহস্থ ও বেপারীরা নিয়ে আসেন। আর চরফ্যাশন সদর বাজারে গৃহস্থ বা বেপারীরা প্রদিন ২শ বস্তা বা ২ হাজার‘বি’ (প্রতি‘বি’ ৩২০টি) সুপারি নিয়ে আসে বিক্রয়ের জন্য। তিনি আরও বলেন, আমরা এক ‘বি’কাচা সুপারি আকার ভেদে ৬শ টাকা পর্যন্ত পাইকারিতে ক্রয় করি। এছাড়াও শুকনো সুপারি কেজি ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকায় ক্রয় করে ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকায় কেজি প্রতি খুচরা বিক্রি করা হয়।
উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়নের ফরিদাবাগ গ্রামের আলী হোসেন বলেন, আমাদের একসময় ৩একর জমির সুপারি বাগান ছিলো। তবে আগের মতো সুপারি পাওয়া যাচ্ছে না। গত তিন চার বছরে ভোলার উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড় সিডর থেকে আইলা, আম্পান, বুলবুল ও ইয়াসের প্রভাবে আমাদের বাগানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি মাটিতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি ও খাল জলাশয় ভরাটের জন্য জলাবদ্ধতা সৃষ্টির ফলে মাটির শক্তি হ্রাস এবং ঝড়-বাতাসে সুপারির মঞ্জুরি বা ফুল ঝরে যাওয়ায় সুপারি উৎপাদন কমে গেছে।
এই এলাকার আরও একাধীক বাগান মালিক বলেন, ভোলার মধ্যে আমাদেও উপজেলায় প্রচুর সুপারি উৎপাদন হয়। যা দেশের উত্তরাঞ্চলে রপ্তানি করা হচ্ছে। এ অঞ্চলে কয়েক হাজার পরিবার ও কৃষক সুপারির সঙ্গে জরিত রয়েছে।
সুপারি উৎপাদন অব্যহত রাখতে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার জন্যেও দাবী করেন বাগান মালিক ও কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হাসনাইন বলেন, চরফ্যাশনে ৩থেকে সাড়ে ৩হাজার হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। এসব এলাকায় প্রতি হেক্টরে ৩ থেকে সাড়ে ৩টন শুকনো সুপারি উৎপাদন হচ্ছে। এই এলাকায় আমারা নতুন হাইব্রিড ও বারোমাসি জাতের সুপারির চারা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি।
এএইচ/এমআর