ছাতক (সুনামগঞ্জ) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
সুনামগঞ্জের ছাতকে জায়গা-সম্পত্তির বিরোধকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। জোরপূর্বক প্রতিপক্ষের জমি দখলের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে নিজেদের একটি সিএনজি অটো-রিকশা ভাঙচুর করে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ১৬ সেপ্টেম্বর উপজেলার দক্ষিন খুরমা ইউনিয়নের ছেগাপাড়া ও দরারপাড় (শাপলাগঞ্জ বাজার) এলাকায় এ পৃথক ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, দক্ষিন খুরমা ইউনিয়নের ছেগাপাড়া গ্রামের মৃত ছন্দু মিয়ার ছেলে আবদুল কুদ্দুছ ও আবদুছ ছোবহানদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে একই গ্রামের মৃত তবারক আলীর ছেলে রহিদ আলী গংদের সাথে। পক্ষ-প্রতিপক্ষ সম্পর্কে তারা একে অপরের মামা-ভাগনা। সম্প্রতি এসব জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে তাৎক্ষনিক বিরোধ নিস্পত্তি হলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও সেই বিরোধ মাথা ছাড়া দিয়ে উঠে। এতে শঙ্কিত রয়েছেন প্রবাসী আবদুল কুদ্দুছের পরিবারসহ গ্রামের মানুষ। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির পাশে ক্রয়কৃত জমিতে ধানের ছাড়া রোপন করছিলেন মামা আবদুস ছোবহান পক্ষ। রোপন করা শেষ পর্যায়ে জমি জবর-দখলের জন্য দেশীও অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে জড়ো হয় ভাগনা রহিদ আলী পক্ষের লোকজন। এসময় স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় রহিদ আলী পক্ষরাই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এর কিছু সময় পর দরারপাড় (শাপলাগঞ্জ) বাজারে একটি নম্বরবিহীন সিএনজি অটো-রিকশা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দরারপাড় (শাপলাগঞ্জ বাজারে) জন-সম্মুখে ভাগনা রহিদ আলীর চাচাতো ভাই দরারপাড় গ্রামের মছদ্দর আলী ও তার ছেলে শাহিন মিয়া নিজেদের নম্বরবিহীন সিএনজি অটো-রিকশাটি ভাঙচুর করেছে মামা পক্ষকে ফাঁসানোর জন্য।
এসময় স্থানীয় লোকজন তাদের বাঁধা দিলে গাড়িটি বাজার থেকে প্রায় দুইশ’ গজ দূরে দরারপাড় মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় পাকা রাস্তায় রেখে চলে যায়। এলাকার মুরব্বি নুর ইসলাম, আবদুল মছব্বির, তেরাব আলী, রাজিব মিয়াসহ স্থানীয় লোকজনরা জানান, মামা-ভাগনাদের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠক বসেছে এবং নিস্পত্তিও হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে তাদের নিজের জমিতে ধানের চারা রোপন করা অবস্থায় প্রতিপক্ষরা বাঁধা দিয়েছিল। তখন গ্রামের মুরব্বিদের মধ্যস্থতায় তাৎক্ষনিক সংঘাত-সংঘর্ষ থেকে রক্ষা হয়েছে। পরবর্তীতে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৪শ’ গজ দূরে গ্রামের শাপলাগঞ্জ বাজার এলাকায় নিজের সিএনজি অটো-রিকশাটি ভেঙ্গেছে মছদ্দর আলী ও তার ছেলে। গাড়িটি বাজার থেকে আরও প্রায় দুইশ’ গজ দূরে নিয়ে রেখেছে গাড়ির মালিক। বিষয়টি রহস্যজনক বলে তাদের ধারণা। এসব বিষয় নিয়ে গ্রামের লোকজন শঙ্কিত আছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত রহিদ আলী জানান, তাদের জমিতে ধানের চারা রোপন করেছিলেন আবদুস ছোবহান গংরা। খবর পেয়ে তারা রোপনে বাঁধা দিয়েছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জায়গাটুকু তারা বিক্রি করেন নাই। যদি দলীল তারা দেখায় এটি জাল দলীল হবে। তাদের কাছ থেকে টাকাও তারা নেন নি।
মছদ্দর আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ। বৃহস্পতিবার সকালে তাদের সিএনজি অটো রিকশা যোগে তাকে ডাক্তারে নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তায় দু’পক্ষের মারামারি হচ্ছিল। এসময় তার গাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করেছে। তবে কারা ভেঙ্গেছে তিনি দেখেন নি। বিষয়টি তিনি তাদের শ্রমিক নেতাদের অবহিত করে রেখেছেন। তিনিও দীর্ঘদিন শ্রমিক ছিলেন।
প্রবাসী আবদুল কুদ্দুছের ভাই আবদুস ছোবহান জানান, ভাগিনা মখজুল আলী ও রহিদ আলী তাদের ভাইকে ইরান থেকে ইতালী পাঠানোর জন্য আমার কাছ থেকে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা হাওলাত নেয়। এই টাকা ফেরত চাইলে সে আমার কাছে আরো ২ লাখ টাকা চায়। না দিলে তাদের কাছ থেকে ২০০৫ সালে ২৩০৫ নং দলীলমূলে ক্রয়কৃত জমি দখলের হুমকী দেয়। এরই জের ধরে আজ আমার কেনা জমিতে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে জমি দখলের করতে আসে। পরে জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে জন সম্মুখে নিজেদের একটি সিএনজি অটো-রিকশা ষড়যন্ত্রমূলক ভাঙচুর করে তাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহেল আহমদ জানান, জমিতে ধানের চারা রোপনে প্রতিপক্ষরা বাঁধা দিয়েছে এবং নিজেরাই সিএনজি অটো-রিকশাটি ভাঙচুর করেছে বলে স্থানীয় লোকজনের মুখে শুনেছেন।
এএমএল/এমআর