কলাপাড়া সাগরকন্যা অফিস॥
কলাপাড়া চৌরাস্তায় অবস্থিত দেশি উন্নত জাতের ভেড়া প্রজনন খামার। পৌর শহরের পার্শ্ববর্তী টিয়াখালী ইউপির রজপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় এক একর জমির উপর অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানটি। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পি কে এস এফ)-এর সহযোগিতায় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নে ২০২০ সালের ১সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে এ প্রজনন খামারটি। ১নভেম্বর ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে ৩০ নভেম্বর ২০২০ সাল এ তিন বছর পর্যন্ত চলে প্রকল্পের কাজ। লার্নিং অ্যান্ড ইনোভেশন ফাউন্ড টু টেস্ট নিউ আইডিয়াস(এল আই এফ টি) নামের প্রকল্পটি দেশি উন্নতজাত এবং সংকর জাতের ভেড়া পালন ও সংরক্ষণ এবং পারিবারিক প্রজনন ও প্রদর্শনী খামার করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করার লক্ষে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রকল্পের শুরুতে নীলগঞ্জ এবং টিয়াখালী ইউপির খামারিদের নিয়ে কাজ করে প্রকল্পটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৫ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত একটি লম্বাশেড তৈরি করে ভিতরে কয়েকটি চেম্বার করে ভেড়া পালন করছে। বাকি ৮৫ শতক জমিতে আলাদা প্লট করে নেপিয়ার এবং জার্মান ঘাস চাষ করা হচ্ছে। ৩০টি মা ভেড়া, ৪টি পাঠা এবং ২টি বাচ্চা নিয়ে শুরু করা খামারে বর্তমানে ৭৫টি মা ভেড়া দেখা গেছে। খামার পরিচালকের তথ্যমতে, প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটা এবং দুপুর আড়াইটায় দানাদার খাবার দেয়া হয়। ভূট্টা, ভূষি, খৈড়, রাইচ পালিশ, সয়ামিল, ডিবি, সিসিপি এবং লবণ আনুপাতিক হারে মিশ্রিত করে দানাদার খাবার প্রস্তুত করা হয়। এছাড়াও মেশিনের সাহায্যে শুকনো খড় এবং কাঁচা ঘাস কেটে দিনে তিনবার দেয়া হয়। ৬ মাস অন্তর পিপিআর এবং তিন মাস পরপর কৃমিনাশক খাওয়ানো হয়।
প্রকল্প কর্মকর্তাতের তথ্য সূত্রে জানা যায়, শুরুর দিকে কলাপাড়ার ৭ জন কৃষক ১০০টি ভেড়া পালন করতো। এই প্রকল্পের সহায়তা এবং উৎসাহ উদ্দিপনায় বর্তমানে এ এলাকায় ১৭০ জন কৃষকের প্রায় তিন হাজার ভেড়া পালন করছেন। দেশি ভেড়া এবং গাড়ল বছরে দুই বার বাচ্চা প্রদান করে। প্রতিবারে দেশি ভেড়া ২-৩টি এবং গাড়ল ১-২ টি বাচ্চা দেয়।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের লস্করপুর গ্রামের সিদ্দিক, নবীপুরের নাসির এবং টিয়াখালী ইউপির ইসমাইল এবং মামুন হাওলাদার সাগরকন্যােকে জানায়, কলাপাড়ায় ভেড়া পালন সম্পর্কে মানুষ জানতোনা। টিয়াখালী প্রজনন খামারের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা পেয়ে ভেড়া পালন করে আমরা স্বাবলম্বী হয়েছি। যা দেখে এলাকার অনেকেই এখন ভেড়া পালনে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
খামার পরিচালক ওয়েভ ফাউন্ডেশনের লিফট কর্মসূচির পি,ও, প্যারাভেট মো: মনিরুল ইসলাম রিয়াজ এ প্রতিবেদককে বলেন, ভেড়ার মাংস খুবই সুস্বাদু হওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া ভেড়ার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় রোদ এবং বৃষ্টিতে কোন সমস্যা হয়না। তবে প্রানিসম্পদ অফিস থেকে বিভিন্ন মতামত ও পরামর্শ পাই কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী টিকা পাওয়া যায়না।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপজেলা ইউনিট ম্যানেজার মো: মিরাজ হোসেন গনমাধ্যমকে জানায়, নুতন উদ্দোক্তাদের জন্য এখান থেকে ফ্রী প্রশিক্ষণ, টিকা এবং চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এছাড়াও ভেড়া পালনে ব্যাবস্থাপনা, ঘাসের কাটিং এবং ভালো জাতের ভেড়া সরবরাহ করে নুতন উদ্দোক্তাদের ৬ মাসের গ্রেস পিরিয়ডে ঋণ সহায়তা প্রদান করা হয়।
কলাপাড়া প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের লাইভস্টক ফিল্ড এসিস্ট্যান্ট আরিফুর রহমান মিরাজ এ প্রতিনিধিকে বলেন, কলাপাড়ার একমাত্র ভেড়া প্রজনন খামারটি এ অঞ্চলের ভেড়া খামারিদের জন্য সহায়ক ভুমিকা পালন করছে এবং প্রানিসম্পদ অফিস থেকে কর্মকর্তারা গিয়ে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ এবং চিকিৎসাসেবা প্রদান করে থাকেন এ প্রকল্পে।
কলাপাড়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো: হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানায়, দারিদ্র্য বিমোচনে ভেড়া পালন খুবই লাভজনক। রজপাড়ার দেশি উন্নত জাতের ভেড়া প্রজনন খামারে প্রাণীসম্পদ অফিস থেকে সবসময় পরামর্শসহ সকল ধরনের সহায়তা প্রদানের ব্যাবস্থা করা হবে।