বাবুগঞ্জ(বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বাবুগঞ্জ বাজারের বেহাল দশা। গত ২২বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বাজারটিতে। এখানে নেই সঠিক কোন ব্যবস্থাপণা। যে যার ইচ্ছে মতো আসছে যাচ্ছে ব্যাবসা চালাচ্ছে। নেই পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা। নেই বর্জ রাখার কোন নিদৃষ্ট স্থান। প্রধান সড়কটির পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত ভাঙ্গাচুরা এবং খানাখন্দে ভড়া। এতটা সংকীর্ণ যে দুটো ভ্যান পাশাপাশি যেতেও যথেষ্ট সমস্যার সৃষ্ঠি হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। পথচারীদের কিংবা ক্রেতাদের বাজারে প্রবেশ করাটাই কষ্টসাধ্য।
উপজেলার সবচেয়ে বড় ও প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী বাজার এটি। বাজারের প্রধান সড়ক এবং সবকটি ছোট ছোট অলিগলি দেখলে মনে হবে কতযুগ যেন এখানে উন্নয়ন কিংবা সংস্কারের উদ্যোগ নেই। বর্তমানে বাজারে প্রায় ৪ শতাধীক ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা স্টিল ব্রীজ এলাকাকেও সংযুক্ত করেছে। বাজার ঘিরে রয়েছে তিনটি আবাসিক এলাকা যেখানে কয়েক শত পরিবার বসবাস করে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে বাজারবাসীদের অকল্পনীয় ভোগান্তীতে পড়তে হয়। পায়ে জুতা নিয়ে কাদা না মেখে ঘরে ফেরার উপায় থাকে না। এ ব্যপারে যেন কোন মহলেরই মাথাব্যথা নেই। দিনে দিনে বাজার আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে কিন্তু রাস্তাঘাটের উন্নতির কোন বালাই নেই। ক্রেতা বিক্রেতারা সবাই সর্বদা আতঙ্কে থাকেন যদি বাজারের মধ্যে অগ্নিকান্ড ঘটে তাহলে চরম বিপর্যয় ঘটবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। রাস্তা সংকির্ণতার কারণে বাজারে ফায়ার সর্ভিসের সবচেয়ে ছোট গাড়িটাও প্রবেশ করতে পারবে না ।
ব্যবসায়িরা জানায়, বাজারের মূল তিনটি সমস্যা হলো সংকির্ন রাস্তা, নেই পানি নিস্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংকট এবং বর্জ রাখার স্থায়ী কোন স্থান। ১৯৯৮ সালে ততকালিন সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির আমলে প্রধান সড়কটি পাকা হয়েছিল তার পর নাম মাত্র সংস্কার ছাড়া আর উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বাবুগঞ্জ বাজার সংশ্লিষ্ট শতবর্ষি আঃ আব্দুল মজিদ বেপারী বলেন, ১৮০০শতকে বর্তমান বাবুগঞ্জে অস্থায়ী কয়েকটি দোকান বসতো। তখন মূল বাজার ছিল ক্ষুদ্রকাঠী এলাকায় নবাবগঞ্জ নামে। বাজার স্থানান্ত্রীত করা নিয়ে তৎকালিন নাবাব এবং স্থানীয় বাবুদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী বন্ধুক যুদ্ধ হয়। যে যুদ্ধে কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছিল। ওই যুদ্ধে বাবুরা জয়লাভ করে এবং ১৯০৮সালে বাবুদের নামে স্থায়ী বাজার স্থাপিত হয় যার নাম করন করা হয় বাবুগঞ্জ। তখন বাজারে জমিদাতা ছিলেন বসন্ত গোলদার, তাহের উদ্দিন বেপারী এবং মেয়াজান সিকদার(মুন্সি) গং। বাবুরা বিক্রমপুর সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বণিকদের আমন্ত্রন করে থাকাসহ ব্যবসা করার সকল প্রকার সূযোগ সুবিধা দিয়ে বাজারটি চালু করে। বাজার কমিটির আহবায়ক ফকরুল আলম খান বলেন, বাজারটির আলোচনা, সামাবেশ কিংবা কোন অনুষ্ঠানের জন্য আটচালা স্থানটি পূঃণ সংস্কার একান্ত প্রয়োজন। আমার জানা মতে বাজারের রাস্তাঘাটসহ উন্নয়নের জন্য ১ কোটি ৮৭লক্ষ টাকা এবং পানি সরবরাহর জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। দীর্ঘ দিন পার হলেও অজ্ঞ্যাত কারনে এখনও কোন প্রকার কাজই শুরু হয়নি। উপজেলা প্রকৌশলী মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য বরাদ্দ হয়েছে। শিঘ্রই কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। বাবুগঞ্জ বাজারের উন্নয়ন ও সংস্কাররের ব্যাপারে বরিশাল-৩ আসনের সাংসদ গোলাম কিবরিয়া টিপুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী বাজারটি সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে বরাদ্দ হয়েছে। কি কারনে কাজ শুরু হচ্ছে না বিষয়টি নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো।
এএ/এমআর