ছাতক (সুনামগঞ্জ) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
সুনামগঞ্জের ছাতক পৌরসভার নারী কাউন্সিলর তাসলিমা জান্নাত কাকলীর বিরুদ্ধে ক্ষমতাবলে এলাকায় চাঁদাবাজী, প্রতিবাদ করলে মারপিট, প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি পৌরসভার ৪, ৫ও৬ নং ওয়ার্ডের বর্তমান মহিলা কাউন্সিলর। প্রায় আড়াই বছর ক্ষমতাবলে এলাকায় চাঁদাবাজী করে, সংগঠনের নামে-বেনামে ভূয়া রশিদ দিয়ে প্রায় ৬২ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে আতœসাত করার অভিযোগ উঠেছে নারী কাউন্সিলর ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। সুনামগঞ্জ জেলা সিএনজি চালিত হিউম্যান হুইলার অটো সিএনজি ও ড্রাইভার্স শ্রমিক ইউনিয়ন ছাতক শিববাড়ির উপ-কমিটির ভুয়া উপদেষ্টা সেজে শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় আড়াই শতাধিক শ্রমিকের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন তিনি।
জানাযায়, সুনামগঞ্জ জেলা সিএনজি চালিত হিউম্যান হুইলার অটো সিএনজি ও ড্রাইভার্স শ্রমিক ইউনিয়ন উপ-কমিটির (রেজিষ্টার নং-১৯২৬) এ সংগঠনে কাকলী নিজে নিজেই প্রধান উপদেষ্টা সেজে দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে ক্ষমতাবলে তার সহযোগীদের নিয়ে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নামে-বেনামে ভূয়া রশিদ দিয়ে চাঁদাবাজী করছেন। এ সংগঠনে দীর্ঘ দিন ধরে নির্বাচিত কোন কমিটি না থাকায় কাকলী প্রধান উপদেষ্টা সেজে শিববাড়ী ষ্ট্যান্ডে ক্ষমতার অপব্যবহার করে, শ্রম আইন বহির্ভূতভাবে তার স্বজনদের অন্তর্ভূক্ত করে একটি পকেট কমিটি তার বাসায় বসে অনুমোদন করেছেন। যে কমিটিতে ষ্ট্যান্ডের কোন পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে রাখা হয়নি। বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী সড়ক পরিবহন শ্রমিক বা অনুমোদিত শ্রমিক ইউনিয়ন ব্যতিত পরিবহন শ্রমিকের কোন জনপ্রতিনিধির কমিটি অনুমোদন দেয়ার বিধান নেই। অবৈধ এ কমিটির লোকজন পরিবহন শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রতি টিপে ৫০-১০০ টাকা করে প্রতিদিন ৭-৮হাজার হলে, মাসে প্রায় ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা শ্রমিকদের কাছ থেকে উত্তোলন করলে, বছরে প্রায় ২৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আদায় করছেন।
শ্রমিকদের এসব টাকার কোন হিসাব ও তারা দিচ্ছে না। অবৈধ কমিটিকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে পরিবহন শ্রমিকদের উপর নেমে আসে শারীরিক নির্যাতন। বর্তমানে ষ্ট্যান্ডে শ্রমিকদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। এ নিয়ে যেকোন সময় চাদাবাজীর ঘটনা নিয়ে সংঘষের আশংকা বিরাজ করছে। চাঁদা না দিলে শ্রমিকদের উপর হামলা করেন। এলাকাটিতে যেন নারী কাউন্সিলর ও তার সহযোগীদের রামরাজত্ব চলছে।
সুনামগঞ্জ জেলা সিএনজি চালিত হিউম্যান হুইলার অটো সিএনজি ও ড্রাইভার্স শ্রমিক ইউনিয়ন উপ-কমিটির (রেজিষ্টার নং-১৯২৬) শিববাড়ি শাখার সংগঠনের পক্ষে রাসেল আহমদ, এমরান আহমদ, দবির মিয়া, চাদ মিয়াসহ আড়াই শতাধিক স্বাক্ষরিত শ্রমিকরা বাদী হয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নিবাহী কর্মকতা, শ্রম অধিদপ্তর, ছাতক পৌর মেয়র ও ছাতক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। নারী কাউন্সিলর কাকলীর নামেই চলে চাঁদাবাজী এবং তার সহযোগী তার ভাই খোকন ও মামা আজিম উদ্দিন ও আজিজুর রহমান বাদশা শিববাড়ি সিএনজি ষ্ট্যান্ডে অবৈধভাবে চাঁদাবাজীর আন্ডারগ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, নারী কাউন্সিল কাকলীর ও তার ভাই খোকন ও মামার বিরুদ্ধেই আছে বিস্তর অভিযোগ। বিভিন্ন শ্রমিক অঙ্গ সংগঠনের নেতা পরিচয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন তারা। বলা হচ্ছে, একেবারে শূন্য থেকে তারা স্থানীয় অনেকের চোখের সামনেই বিপুল বিত্তবৈভবের মালিকও হয়েছেন।
এ ব্যাপারে নারী কাউন্সিলর তাসলিমা জান্নাত কাকলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তার স্বামী মাছুম আহমদ তার স্ত্রী নামাজে বলে মোবাইল ফোন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান অভিযোগ প্রাপ্তির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তদন্তপুর্বক আইনানুগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নারী কাউন্সিলর কাকলীর বিরুদ্ধে গত ১৮ আগস্ট তার কাছে ইজিবাইক চালক আতিকুল মিয়া, নূরুল হোসেন ও বিরাজ আলী একটি লিখিত অভিযোগ করেন। গত ২২ আগস্ট অনুষ্ঠিত পৌর পরিষদের বিশেষ সভায় বিষয়টি উত্থাপন করে উপস্থিত কাউন্সিলরদের সম্মতিতে এ নারী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু চাঁদাবাজি বন্ধ না হওয়ায় ২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত পরিষদের অপর এক সভায় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন পৌর পরিষদ। এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় এনে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান নির্যাতিত পরিবহন শ্রমিকরা।
এএমএল/এমআর