ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ঘুষ-দুর্র্ণীতির তদন্ত নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন!

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ঘুষ-দুর্র্ণীতির তদন্ত নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন!
মঙ্গলবার ● ৩১ আগস্ট ২০২১


ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ঘুষ-দুর্র্ণীতির তদন্ত নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন!

ছাতক (সুনামগঞ্জ) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

ছাতক বিদ্যুৎ অফিসে বাইরে পাজারো গাড়ি রেখে উপর তলায় দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা দরজা বন্ধ করে নির্বাহী প্রকৌশলী রুমে বসে এসব কিসের তদন্ত হচ্ছে? এটা সঠিক তদন্ত হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে অফিস কর্মকর্তা, কমচারী ও স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কোটি টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির দুর্নীতি তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে না গিয়েই তারা অফিসে এসি রুমে বসে ৫/৬ জন ব্যক্তির জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে কোটি টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে প্রচেষ্টা চালায় তদন্ত কমিটি। নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আল মামুনসহ ১৪জনের বিরুদ্ধে ঘুষ কেলেঙ্কারি, মিটার চুরিরসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আল মামুন সরদার নেতৃত্বে বিদ্যুৎ বিভাগের উধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে ধরণা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অভ্যন্তরে চরম অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বহীনতা, ঘুষ গ্রহণ, জালিয়াতি, প্রতারণা ও সীমাহীন দুর্নীতি, মিটার চুরি, নতুন লাইন সংস্কারের নামে দালাল চত্রেুর মাধ্যমেই নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন সর্দার ও সহ-প্রকৌশলী আবুল হোসেনসহ ১৪জনের বিরুদ্ধে ২৯ আগষ্ট সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিতরণ বিভাগের অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী কক্ষে বসে এলাকার কয়েক জন চিহ্নিত দালালকে অফিসে ডেকে এনে দরজা বন্ধ করে গোপনে তাদের কাছ থেকে জবানবন্দি লিপিবন্ধ করেন তদন্ত কমিটি।

সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিতরণ বিভাগের বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল রাজ্জাক, প্রশাসন বিভাগের রুহুল আমিন, সহকারি প্রকৌশলী জুয়েল রানাসহ ৩ সদস্য একটি তদন্ত টিম কাজ শুরু করেছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে সেবামূলক এ প্রতিষ্ঠানটি এখন ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত হাজার হাজার গ্রাহক চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। এসব দুর্নীতি অনিয়ম ঘুষ কেলেঙ্কারি দেখার কেউ নেই। ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নসহ প্রায় ২২ হাজার গ্রাহক রয়েছে। ছাতক শহরে শতাধিক স্টোন ক্রাসিং মিল, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট লি., ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী লি., নিটল পাল্প অ্যান্ড পেপারমিল লি., আকিজ বেভারেজ ফুড লি. আকিজ প্লাস্টিক লিমিটেডসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা রয়েছে। বিশেষ করে স্টোন ক্রাসিং মিলে ট্রান্সফর্মার নষ্ট হলে এটি পরিবর্তনের নামে আদায় করা হয় দেড় থেকে দু’লক্ষ টাকা। বৃহৎ এলাকায় আবাসিকও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের প্রতিবছর প্রায় অর্ধশতাধিক ট্রান্সফর্মার বিকল হলে পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে প্রতিটি ট্রান্সফর্মার বদলের নামে হাতিয়ে নেয়া হয় বছরে প্রায় তিন কোটি টাকা। আবাসিক এলাকার ট্রান্সফর্মার বিকল হলে আব্দুল্লাহ আল মামুন সর্দারের প্রধান সহযোগী আবুল হোসেনের মাধ্যমে গ্রাহকদের অফিসে ডেকে আনা হয় এবং ঢাকা থেকে এটি পরিবর্তন করতে কয়েকমাস সময়ের কথা বলা হয়।

উপজেলার নোয়ারাই এলাকার রংপুর, একটি ক্রাসিং মেশিনের ট্রান্সফর্মার পরিবর্তনের জন্যে ১৫-২০ লক্ষ টাকা সংযোগে নামে হাতিয়ে নেন নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন সর্দারও আবুল হোসেন। এছাড়া নোয়ারাই ইউনিয়নের টিলাগাঁও গ্রামে এসটি ২২খুটা ও এলটি ৩০ খুটায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের কান্দাগাঁও গ্রামের ৩কি.মি. বিদ্যুতের নতুন সংযোগে ২৫ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়। তার ক্ষমতার খুটির জোর থাকায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। মিটার রিডারদের এলাকায় না দিয়ে গ্রাহকদের নামে তিনি মনগড়া বিল দিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ২৯ মে রাত ১১টায় ছাতক বিদ্যুৎ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল হোসেন ৪২টি সরকারি মিটার চুরি করে নেয়ার সময় ধরা পড়েন। কার্যালয়ের স্টোর রোম থেকে আবুল হোসেন মিটারগুলো নিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় অফিসের লাইনম্যান সিকন্দর আলী প্রধান ও মনজুর আলীসহ অন্যান্যরা দেখে মিটারসহ তাকে আটক করেন। পরে এ ঘটনাটি অফিস জুড়ে জানাজানি হলে ৪২ টি মিটার অফিসের একটি কক্ষে রাখা হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। এ ব্যাপারে একজন লাইনম্যান বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ছাতক বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে পৃথক লিখিত অভিযোগ করা হয়।

এ নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন সর্দার সচল মিটারকে অচল দেখিয়ে ওই গ্রাহকের নামে ফিক্সড বিল দেয়া শুরু করে আসছে। কয়েকমাস মোটা অংকের টাকার ফিক্সড বিল দেয়ার পর মিটার পরিবর্তন করে বিভিন্ন গ্রাহকের বিল দেয়া পুরানো হাজার হাজার ইউনিটের টাকা হজম করছেন দুনীতিবাজরা। এদিকে ৩০ বছরের পুরানো ঝুকিঁপুর্ণ বিদ্যুৎ লাইনের সংস্কার করছেন বলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠে নিবাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।

অনেক ক্ষেত্রেই নিরাপদ খাম্বার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশের খুটি, সুপারি ও কদম গাছ। ফলে ঝুঁকির মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন ১৩টি ইউনিয়নের ২২ হাজার গ্রাহক। এসব বিদ্যুৎ লাইনের পুরাতন লাইন ঝড় বৃষ্টিতে পড়ে শিক্ষক, শিশু, যুবক, কৃষক, মাঝিসহ অনেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

এ ব্যাপারে উপ-সহকারি প্রকৌশলী আবুল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। অবশেষে মিটার সরানোর এ ঘটনাটি তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে স্বীকার করেছেন।

ছাতক বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন সরর্দার তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ৪২টি মিটার সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন উপ-সহকারি প্রকৌশলী আবুল হোসেন।

এ ব্যাপারে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিতরন বিভাগের তদন্ত কমিটি সদস্য সহকারি প্রকৌশলী জুয়েল রানা জানান, ১৪জনের বিরুদ্ধে দুনীতি-অনিয়ম ঘুষ কেলেংকারি তদন্ত শুরু হয়েছে। ১৪জন ব্যক্তির মধ্যে ৫/৬জনকে অফিসে এনে তাদের জবাববন্ধি লিপিবন্ধ করে তদন্ত কাজ শুরু করেন। অফিসে না মাঠে গিয়ে তদন্ত করছেন এসব প্রশ্ন করার সঙ্গে তিনি মোবাইল ফোন কেটে দেন।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ করছেন গ্রাহকরা।


এএমএল/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:৪৪:৫৬ ● ৫৯৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ