জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ-ছাতকে ইন্সপেক্টর সাজ্জাদ’র বিরুদ্ধে ঘূষ-দূর্ণীতির অভিযোগ

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ-ছাতকে ইন্সপেক্টর সাজ্জাদ’র বিরুদ্ধে ঘূষ-দূর্ণীতির অভিযোগ
মঙ্গলবার ● ৩১ আগস্ট ২০২১


ছাতকে ইন্সপেক্টর সাজ্জাদ’র বিরুদ্ধে ঘূষ-দূর্ণীতির অভিযোগ

ছাতক (সুনামগঞ্জ) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সাজ্জাদুর রহমানের বিরুদ্ধে অশোভন আচরণ, ক্ষমতার দাপট, মামলা রেকর্ডের নামে ঘুষ দাবীর অভিযোগ উঠেছে। গত ২৫ আগষ্ট সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার বরাবরে জাউয়াবাজারের ব্যবসায়ী মোজাক্কির আহমেদ বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় জেলা জুড়ে চলছে ব্যাপক তোলপাড়!

জানা যায়, জাউয়াবাজারের জাউয়া মৌজার এসএ ৩৭নং দাগের ০২.২৫ শতক ভূমিতে থাকা দোকান কোটাটি দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার বাগেরকোনা গ্রামের রওশন খান সাগর ও ছাতক থানার ছাতারপই গ্রামের আব্দুল জলিলের মালিকানাধীন। আব্দুল জলিলের মৃত্যুর পর তাঁর প্রবাসী উত্তরাধিকারীদের পক্ষে কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালন করছেন ছাতারপই গ্রামের মৃত আইন উদ্দিনের ছেলে মোজাক্কির আহমেদ।
বর্ণিত দোকানকোটার পূর্বাংশ নিয়ে রওশন খান সাগরের দায়েরকৃত বিবিধ মামলা ১৯৮/১২ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চলমান রয়েছে।

গত ১১ সেপ্টেম্বর ও ১২ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে আদালতের ৩ ও ১২নং নির্দেশ অনুযায়ী ছাতক উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) গত ১৪ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে দোকানটির পুর্বাংশ ক্রোকবদ্ধ করতঃ সিলগালা করে জাউয়াবাজার ইউপি চেয়ারম্যান এবং বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির জিম্মায় দেন। তবে দোকানকোটার পশ্চিমাংশ মামলা বহির্ভৃত এবং তথায় ভাড়াটিয়া রয়েছে।

গত ২২ জুলাই বিকালে এসিল্যান্ড-এর সিলগালা করা বন্ধ দোকানকোটার পূর্বাংশের তালা উপড়ে জবরদস্তিমূলক ভেঙ্গে প্রবেশের চেষ্টা চালায় এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ হীরক ও মুক্তাদিরসহ আরো ২/৩জন সন্ত্রাসী। কিন্তু দোকানকোটার তালা ভাঙতে ব্যর্থ হয়ে মামলা বহির্ভৃত পশ্চিমাংশ দিয়ে জোরপূর্বক ঢুকে দোকানকোটার মধ্যখানের টিনের বেড়া ভেঙ্গে সিলগালা করা অংশে প্রবেশের চেষ্টা করলে পশ্চিমাংশের ভাড়াটিয়াসহ উপস্থিত লোকজন বাঁধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হিরক ও মুক্তাদিরের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসীরা তাদের অবৈধ প্রবেশে বাঁধা দেয়ার ঘটনায় বাধাকারী ব্যক্তিবর্গকে মারপিট শুরু করে। আক্রান্তদের হৈ-হল্লায় আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা ভাড়াটিয়া ও মিস্ত্রিসহ ঘটনার স্বাক্ষীদের হত্যার হুমকী দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত ২৩ জুলাই রওশন খান বাদী হয়ে ছাতক থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলে ও অজ্ঞাত কারণে অভিযোগটি অদ্যাবধির রেকর্ডভূক্ত করা হয়নি।

এদিকে, গত ২৭ জুলাই উক্ত দোকানকোটার মামলা বহিভূত নিষ্কণ্ঠক পশ্চিমাংশের টিনের চাল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত টিন পরিবর্তনের জন্য মিস্ত্রিদের কাজে লাগান। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উক্ত হিরক ও মুক্তাদিরের নেতৃত্বে ৪/৫ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল দোকানকোটার মেরামত কাজে বাঁধা দেন। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা রওশন খানের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে, অন্যথায় কাজ বন্ধ রাখতে বলে। সন্ত্রাসীদের কথা উপেক্ষা করে কাজ চালু রাখলে রওশন খান, মোজাক্কির আহমেদসহ, ভাড়াটিয়া, মিস্ত্রি ও স্বাক্ষীদের হত্যার হুমকী দিলে প্রাণের ভয়ে মিস্ত্রিরা কাজ বন্ধ করে চলে যায়।

এমতাবস্থায় রওশন খান স্থানীয় জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে গিয়ে ইনচার্জ সাজ্জাদুর রহমানকে ঘটনা অবগত করেন। কিছুক্ষণ পর ইন্সপেক্টর সাজ্জাদুর রহমান জাউয়াবাজারের পরিবহন সেক্টরের চিহ্নিত চাঁদাবাজ রেজা মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পুলিশ সেখানে গিয়ে কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই রেজা মিয়ার সাথে শলা-পরামর্শ করে দোকানকোটার মধ্যস্থলের পার্টিশন ৩ ফুট সরানো হয় বলে জনৈক মোহাম্মদ আলীকে দিয়ে এসিল্যান্ড অফিসে অভিযোগ করান।

একই সাথে সন্ত্রাসীদের অভিযোগে রওশন খানের ভাড়াটিয়াকে অন্যায়ভাবে আটক করে আদালতে চালানের আগেই বিধিবহির্ভৃত ভাবে রিমান্ডের মতো অমানবিক ভাবে নির্যাতন করে পুলিশ। যে কারণে ওই ভাড়াটিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিকে মোহাম্মদ আলীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই এসিল্যান্ড ও সরকারি সার্ভেয়ারের সরেজমিন তদন্তপূর্বক ঘটনা প্রমাণিত হয়নি।

পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে ইন্সপেক্টর সাজ্জাদুর রহমানের এহেন কর্মকান্ডে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে জাউয়াবাজারে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ)’র নতুন সংস্থা তৈরী করে অবৈধ ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচলের অনুমতি প্রদান, বেআইনি কার্যকলাপের প্রতিবাদ করায় পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্টকে অন্যায়ভাবে তাদের হাতে নাজেহাল করে। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে পরিবহন সেক্টর, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জবরদস্তিমুলক চাঁদাবাজিসহ খুন, হত্যাপ্রচেষ্টা, অবৈধ দখলবাজি, মাদক, চাঁদাবাজি, জুয়ার আসর বসানো, জুয়া খেলাসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদের অবৈধ টাকা একটি অংশ নিয়মিত মাসোয়ারা হিসেবে যাচ্ছে ইন্সপেক্টর সাজ্জাদুর রহমানের পকেটে। সম্প্রতি দেশের বহুল জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন দৈনিকে এদের অপকর্মের বিবরণ প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ পেয়েছে। এদিকে, রওশন খান সাগর তাঁর অভিযোগটি রেকর্ডভুক্ত করার জন্য ইন্সপেক্টর সাজ্জাদুর রহমানকে অনুরোধ জানালে তিনি বাদীর কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। বাদি ঘুষ দিতে রাজী না হওয়ায় ফাঁড়ি ইনচার্জ বাদীকে থানায় গিয়ে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। বাধ্য হয়ে রওশন খান ছাতক থানায় অভিযোগ দিতে গেলে ডিউটি অফিসারের পরামর্শে ওসি শেখ নাজিম উদ্দিনও ফাঁড়ি ইনচার্জের অনুরূপ বাদির নিকট ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই সিলেট রেঞ্জের ডিআইজিসহ পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবগত করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশের জাউয়াবাজার তদন্তকেন্দ্রে নামাজের কক্ষ, আধুনিক টয়লেট এবং বিভিন্ন রকমের ফার্নিচারসহ তৈজষ সামগ্রী ক্রয়ের নামে ইন্সপেক্টর সাজ্জাদুর রহমান যুক্তরাজ্য প্রবাসীসহ উপরোক্ত চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের নিকট থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে নিজের পকেট ভারী করছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
বাদী মোজাক্কির আহমদের জাউয়াবাজার পুলিশ ফাড়ি ইনচার্জ সাজ্জাদুর রহমান ও ছাতক থানার ওসি শেখ নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাঁদের অপসারণের দাবী করেন।

এ ব্যাপারে জাউয়াবাজার তদন্ত ফাড়ি ইনচাজ ইন্সপেক্টর সাজ্জাদুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব অনিয়ম-দুনীতির সঙ্গে তিনি জড়িত নয় বলে দাবী করেন।

এ ব্যাপারে থানার ওসি শেখ নাজিম উদ্দিন বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। বাদীর কাছে ঘুষ চাইয়ার প্রশ্ন আসে না।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলার এডিশনার পুলিশ সুপার আবু সাঈদ সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগ প্রাপ্তির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এএমএল/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:২০:০৭ ● ৪৯৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ