আমতলী সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
কিশোর গ্যাং লিডার সন্ত্রাসী নাঈম ইসলামকে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে পটুয়াখালী র্যাব-৮ সদস্যরা। সোমবার রাতে আমতলী উপজেলা পরিষদের সামনে একটি সড়ক থেকে চাঁদাবাজীর সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি দেশীয় অস্ত্র ও নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার পুলিশ তাকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করেছে। আদালতের বিচারক মোঃ সাকিব হোসেন তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সন্ত্রাসী নাঈমের গ্রেফতারের খবরে আমতলী ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্থি ফিরে এসেছে।
জানাগেছে, উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম টুকুর ছেলে মোঃ নাঈম ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তিনি আমতলীতে কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান হিসেবে এলাকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছে। মাদক, চোরা কারবারী, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নাঈম। তার কর্মকান্ডে এলাকার মানুষ জড়িত। তার বিরুদ্ধে চাদাবাজী, মাদক, ছিনতাই ও নারী নির্যাতনসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারনে নাঈম একাধিকবার হাজতবাস করেছে। কিন্তু তিনি নিবৃত হয়নি। গত ২১ আগষ্ট গুলিশাখালী ইউনিয়নের খেকুয়ানী গ্রামের মুন্সি ব্রিকস’ এর মালিক মোঃ বদিউল আলম বাদল মুন্সির কাছে ৫ লক্ষ টাকা দাবী করেন এমন অভিযোগ ব্রিকস মালিকের। কিন্তু ব্রিকস মালিক তার দাবীকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এক পর্যায় কিশোর গ্যাং লিডার সন্ত্রাসী নাঈম তাকে জীবন নাশ এবং স্ত্রী কন্যা তুলে নেয়ার হুমকি দেয়। জীবন ও পরিবার রক্ষায় তিনি সন্ত্রাসী নাঈমকে ২০ হাজার টাকা দেয়। কিন্তু তাতেও নাঈম তুষ্ট হয়নি। নিরুপায় হয়ে বাদল মুন্সি পটুয়াখালী র্যাব-৮ ক্যাম্পে অভিযোগ দেন। সোমবার রাত পৌনে নয়টার দিকে সন্ত্রাসী নাঈম বাদল মুন্সিকে তুলে আনতে তার আমতলী উপজেলা পরিষদের সামনের বাসায় যান। ওই সময় বাদল মুন্সি সন্ত্রাসী নাঈমকে পুনরায় ২০ হাজার টাকা দেন। তারপরও নাঈম তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র (ছুরি) দিয়ে আঘাত করে। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের হস্তক্ষেপে অল্পের জন্য রক্ষা পায় বাদল। নিরুপায় হয়ে বাদল মুন্সি র্যাব-৮ সদস্যদের খবর দেয়। তাৎক্ষনিক র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার শরীর তল্লাশী করে একটি দেশীয় অন্ত্র (ধারালো ছুরি) এবং নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করে। চাঁদা দাবীর ঘটনায় ওইদিন রাতে ব্রিকস মালিক মোঃ বদিউল আলম বাদল মুন্সি বাদী হয়ে নাঈম ইসলাম এবং তার সহযোগী সোলায়মান মিয়াকে আসামী করে আমতলী থানায় মামলা করেন। র্যাব সদস্যরা ওই রাতেই তাকে আমতলী থানায় হস্তান্তর করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ তাকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করেছে। আদালতের বিচারক মোঃ সাকিব হোসেন তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। নাঈমের বিরুদ্ধে আমতলী পৌর শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাসোয়ারা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাকে চাঁদা না দিলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ারও অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, কিশোর গ্যাং লিডার নাঈম মানেই ভয়ঙ্কর। তাকে চাঁদা না দিয়ে ব্যবসা করা যায় না। তার বিরুদ্ধে আমতলী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন রাত হলেই নাঈম ফায়ার সার্ভিস এলাকা, তালুকদার বাজার সড়ক ও পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই করে থাকে। নাঈম কথিত ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তার কর্মকান্ডে আমতলীবাসী অতিষ্ঠ। সন্ত্রাসী নাঈমের গ্রেফতারের খবরে আমতলী ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্থি ফিরে এসেছে।
মামলার বাদী বদিউল আলম বাদল মুন্সি বলেন, কিশোর গ্যাং লিডার সন্ত্রাসী নাঈম বেশ কয়েকদিন ধরে আমার কাছে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। কিন্তু আমি তার দাবীকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করি। এরপর থেকে নাঈম আমাকে জীবন নাশ এবং স্ত্রী কন্যাকে তুলে নেয়ার হুমকি দেয়। আমি নিরুপায় হয়ে তাকে ২০ হাজার টাকা দেই। কিন্তু তাতেও নাঈম সন্তুষ্ট হয়নি। এক পর্যায় আমি র্যাবের কাছে অভিযোগ দেই। তিনি আরো বলেন, সোমবার রাতে নাঈম চাঁদা নিতে আমার বাসায় যায়। আমি তাকে আবারো ২০ হাজার টাকা দেই। এরপরও আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় অল্পের জন্য রক্ষা পাই।
আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন সবুজ বলেন, নাঈম ছাত্রলীগের কেউ না। সে একজন চিহিৃত সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং লিডার।
পটুয়াখালী র্যাব-৮ কোম্পানী অধিনায়ক লেঃ কমান্ডার মোঃ শহীদুল ইসলাম (এস) বলেন, চাঁদাবাজীর অভিযোগের ভিত্তিতে দেশীয় অস্ত্র (ধারালো ছুরি) ও নগদ ২০ হাজার টাকাসহ সন্ত্রাসী নাঈমকে গ্রেফতার করে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) রনজিত কুমার সরকার বলেন, নাঈমকে পটুয়াখালী র্যাব সদস্যরা আটক করেছে। তার বিরুদ্ধে আমতলী থানায় চাঁদা ও অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নাঈমকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এমএইচকে/এমআর