ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
জার্মানি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আবু ধাবি থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে ১৪ই ফেব্রুয়ারি মিউনিখে যান শেখ হাসিনা। জার্মানি সফর শেষে রোববার সকালে মিউনিখ থেকে আবু ধাবি পৌঁছান তিনি।
বিগত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটাই ছিল তার প্রথম বিদেশ সফর। বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ ছয় শতাধিক নীতি-নির্ধারক, চিন্তাবিদ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধির অংশগ্রহণে শুক্রবার ৫৫তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন শেখ হাসিনা। সেদিন সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন আয়োজিত ‘হেলথ ইন ক্রাইসিস-ডব্লিউএইচও কেয়ার্স’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দেন তিনি।
সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাঝে ২০১৭ সালের নোবেলবিজয়ী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার উইপনস-আইসিএএনের নির্বাহী পরিচালক বিয়াত্রিস ফিন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর ফাতোও বেনসুদা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পাশাপাশি সিমেন্স এজির প্রেসিডেন্ট ও সিইও জোয়ে কাইজার এবং ভেরিডোস জিএমবিএইচের প্রধান নির্বাহী হ্যানস ভুল্ফগাং কুনজও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। ভেরিডোস জিএমবিএইচ বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট বাস্তবায়ন করছে। পায়রাতে ৩৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এলএনজিভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জার্মানির সিমেন্সের সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তি হয় শনিবার। রোববার সকালে আবু ধাবিতে পৌঁছে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী ও নেভাল ডিফেন্স অ্যান্ড মেরিটাইম সিকিউরিটি প্রদর্শনী দেখেন প্রধানমন্ত্রী। পরে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিকালে বিদ্যুৎ, জ¦ালানি খাতে সহযোগিতা এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সোমবার সকালে আবু ধাবি এক্সিজিবশন সেন্টারে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হয় আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং আমিরাত অব দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মাদ বিন রশিদ আল মাকতুমের। দুপুরে রাজকীয় প্যালেসে আবু ধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া আবু ধাবির বাহার প্যালেসে ইউএইর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং আবুধাবির শাসক শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের স্ত্রী শেখা ফাতিমা বিনতে মুবারক আল কেতবির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর। মঙ্গলবার সকালে আবু ধাবির হোটেল সেন্ট রেগিজে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন লুলু গ্রুপের চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী এবং এসএমসি গ্রুপের চেয়ারম্যান বিআর শেঠী। সন্ধ্যায় ওই হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এক নাগরিক সংবর্ধনায় অংশ নেওয়ার পর রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন শেখ হাসিনা।
আমিরাত প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান: বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য আমিরাত প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সেন্ট রেগিজ হোটেলে বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করছি। প্রবাসীরাও দেশে বিনিয়োগ করে যথেষ্ট লাভবান হতে পারেন। দেশের কল্যাণও করতে পারেন। বাংলাদেশে যত বেশি বিনিয়োগ হবে, দেশের মানুষের কর্মসংস্থান তত বাড়বে, দেশের উৎপাদন বাড়বে, দেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। প্রবাসী কয়েকজন ব্যবসায়ী দেখা করে দেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান তিনি। এখনকার ডিপ্লোমেসিটা আসলে অর্থনৈতিক ডিপ্লোমেসি। এখন আর রাজনৈতিকটা নাই। যত বেশি বিনিয়োগ করা যায়, যত বেশি ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো যায়, ততই ভালো। প্রবাসীরা যে দেশে থাকছেন সেই দেশের নিয়ম-কানুন মেনে চলার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি বৈধ পথে দেশে টাকা পাঠানোর আহ্বানও জানান তিনি। চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে প্রথম বিদেশ সফরে জার্মানির মিউনিখে এক সম্মেলনে অংশ নিয়ে রোববার আবু ধাবিতে পৌঁছে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী ও নেভাল ডিফেন্স অ্যান্ড মেরিটাইম সিকিউরিটি প্রদর্শনীতে অংশ নেন শেখ হাসিনা। এরপর দুদিন নানা বৈঠকে ব্যস্ত সময় কাটানোর পর ফেরার আগের দিন প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন সরকার গঠনের পর এটাই প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর ও প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। কাজেই প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর সফল হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতকে পরীক্ষিত বন্ধু অভিহিত করে ১৯৭৪ সালে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের দেশটি সফরের কথা স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে নিজের প্রচেষ্টার কথা প্রবাসীদের কাছে তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা গত নির্বাচনে দেখেছি, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের টার্গেট ছিল যেন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ও দেশে উন্নয়ন হয়। সে জন্য সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলব, আপনারা আমাদের ভোট দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আমরা আপনাদের আকাক্সক্ষা পূরণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ। কারও কাছে আমরা হাত পেতে, কারও কাছে মাথা নত করে আমরা চলব না। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতি প্রতিরোধে যা যা করণীয় আমরা করব, করে যাচ্ছি। আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদ ছাড়াও বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি বক্তব্য দেন।
এফএন/এমআর