গলাচিপা (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালীর গলাচিপা-দশমিনায় প্রাকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি উপভোগ করার মত দৃশ্য ছিল পানপট্টি, পক্ষিয়া, গোলখালী, বদনাতলী, ডাকুয়া, উলানিয়া, গজালিয়া, আমখোলা, কলাগাছিয়া, চিকনিকান্দী, চরকাজল, চরবিশ^াস, দশমিনার পাতারচর থেকে আউলিয়াপুর লঞ্চঘাট, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বীজ বর্ধণ খামার। রামনাবাদ, বুড়া গৌরঙ্গ, আগুণমুখা ও তেতুঁলিয়া নদীর রাক্ষসী ছোবলে যা আজ স্বপ্নের বাড়ি-ঘরসহ বিলীনের পথে।
গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের ওয়াপদা ভাংগন, ডাকুয়ার ইউনিয়নের ওয়াপদা ভাংগন, পানপট্টি লঞ্চঘাট ভাংগন, বোয়ালিয়া, পক্ষিয়া ওয়াপদা ভাংগন, বদনাতলী, উলানিয়া, কলাগাছিয়াসহ বিভিন্ন স্থানের ওয়াপদা, বাড়ীঘর ভাংগন এখন মানুষের চিন্তার কারন। দশমিনা উপজেলার রনগোপালদী ইউনিয়নের পাতারচর থেকে শুরু করে আউলিয়াপুর লঞ্চঘাট পর্যন্ত এক সময় তেতুঁলিয়া নদীর এলাকাটি ছিল অপরূপ সৌন্দর্য। আর এখন এই পাতারচর ও আউলিয়াপুর নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষের স্বপ্নের ঘর-বাড়িসহ লঞ্চঘাটটি প্রতিদিনই ক্রমশই গ্রাশ করছে এই ক্ষুধার্ত তেতুঁলিয়া নদী। দিনে দিনে ছোট হয়ে আসছে দশমিনা উপজেলার মানচিত্র। প্রতিনিয়ত নদীর সৃষ্টি হওয়া ভয়ানক ঢেউ কেড়ে নিচ্ছে বানভাসিদের স্বপ্নের ঘরবাড়ি। যা আজ বিলীন হতে যাচ্ছে রাক্ষসী তেতুলীয়া নদীর গর্ভে। খুব শীঘ্রই সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে বিলীন হতে সময় লাগবে না এক সময়কার এবং বর্তমান তিন উপজেলার জনসাধারণে যোগাযোগ ব্যবস্থার দৃষ্টিনন্দন এই লঞ্চঘাটটি।
নদীর পাশে অবস্থানরত ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় বসবাসকারিরা বলেন, সমুদ্রটি বহুদুরে ছিল। এখন যেভাবে রাক্ষসী নদী সমুদ্রের পাড় ভেঙ্গে নিচ্ছে নদীগর্ভে এভাবে ভাঙতে থাকলে যতটুকু আছে তাও খুব অল্প সময়ে বিলীন হয়ে যাবে। ভাঙ্গন চলে যাবে প্রায় দশমিনা-উলানিয়া যাতায়াতরত মেইন সড়ক পর্যন্ত। বাংলাদেশের অলংকার দেশরতœ ও উন্নয়নের রুপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট এলাকাবাসীর আকুল আবেদন খুব দ্রুত এই ভাঙ্গন রোধেন ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমাদের বাঁচান।
এ বিষয়ে গোলখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নাসিরউদ্দিন হাওলাদার, চরকাজল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান, রতনদী তালতলী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান গোলাম মস্তফা খান, গলাচিপা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাদী বলেন, আমাদের এলাকাগুলো নদী বেষ্টিত এলাকা বলে প্রতিবছর নদী ভাংগনের মুখে পড়তে হচ্ছে মানুষের ঘর বাড়ীসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
রনগোপালদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এটি এম আসাদুল হক নাসির সিকদার বলেন, তেতুঁলিয়া নদীর পার্শবর্তী মৎস্য ব্যবসায়ী ও বসবাসরত এলাকাবাসীরা নদী ভাঙ্গনে খুব আতংঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, নদীতে থাকা প্রচন্ড ঢেউ (তুফান) থাকার কারণে বাড়িঘর, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখন হুমকির মুখে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা যায়, পাতারচর থেকে শুরু করে লঞ্চঘাট পর্যন্ত নদীতে ভেঙ্গে নিয়ে গেছে আমাদের বাড়িঘরগুলো তাই এই ভাঙ্গন রোধ করার দাবি নিয়ে এখনো আশার স্বপ্ন বুনছে এলাকাবাসী।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিষ কুমার জানান, বিষয়টি লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে দশমিনা উপজেলার স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী সঞ্জয় ব্যানার্জি জানান, এ ব্যাপারে দশমিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল-আমিন এর সাথে কথা হয়েছে, তিনি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। আশা করি খুব দ্রুতই সংশ্লিষ্ট দপ্তর ব্যবস্থা নিবেন।
গলাচিপা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মু. শাহিন শাহ বলেন, নদী ভাংগন রোধে সরকার বদ্ধ পরিকর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের চাবিকাঠি। তিনি বিষয়টি দেখবেন। আমাদের গলাচিপা-দশমিনা আসনের সংদস্য এস এম শাহজাদা সাজু (এমপি) নদী ভাংগনের বিষয়টি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করায় আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই। এ বিষয়ে ১১৩ পটুয়াখালী-৩ দশমিনা-গলাচিপা আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য উন্নয়নের রূপকার এসএম শাহাজাদা সাজু (এমপি) জানান, নদী বেষ্টনী উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে বর্তমান সরকার প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত আন্তরিক, তার নির্দেশে ইতিমধ্যে ভেরীবাঁধ প্রকল্পের কার্যক্রম চলছে। আমিও আশাবাদী, ইনশাহ্ আল্লাহ্, অতি শিঘ্রই আমাদের আবহেলীত বানভাসি মানুষের স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে জীবনযাপন করতে পারবে এবং টিকে থাকবে তাদের স্বপ্নের ঠিকানা।
এসডি/এমআর