চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
ভোলা জেলার শশীভূষন থানা এলাকা যেন জুয়াড়ীদেও অভয়াশ্রমে পরিনত হয়েছে। সন্ধ্যা নামতেই বিভিন্ন পয়েন্ট বসে জুয়ার মহোৎসব। প্রতিনিয়ত ধ্বংসের পথে যুব সমাজ। করোনার মধ্যে আসরের মাত্রা বেশী হলেও এখন থেমে নেই জুয়াড় আসর। জুয়ার আসর থেকে আড্ডার ছলে হয়ে উঠছে মাদকসেবী। উপকূলীয় চরফ্যাশনের চারপাশে নদী থাকায় নদী পথে সহজে প্রবেশ করছে মাদকদ্রব্য। নেশা ও জুয়ার টাকা যোগাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হিং¯্র হয়ে উঠছে তারা। বাবা মায়ের উপর টাকার জন্য টর্চারসহ বাড়ছে নানান অপরাধ প্রবণতা।
সরেজমিন অনুসন্ধানের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শশীভূষণ থানাধীন বিভিন্ন এলাকাসহ আব্দুল্লাহপুর, চরমাদ্রাজের সামরাজ, নতুন স্লইজ, হাজারীগঞ্জ, এওয়াজপুর ও আসলামপুর ইউনিয়নের ভূইয়ারহাটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে জুয়াড়ি সিন্ডিকেটের তৎপরতা দৃশ্যমান। এসব সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত হাই প্রোফাইল ব্যক্তিরা। ক্ষমতার সাপোর্ট দেওয়ার বিনিময়ে তাদের পকটস্থ হচ্ছে প্রতিনিয়ত কমিশন ভিত্তিক টাকা।
“ভূতার খেয়াশাহাবুদ্দিনসিন্ডিকেট”
শাহাবুদ্দিনের উক্তি অনুযায়ী তার বাড়ী হল চরফ্যাশন উপজেলার এওয়াজপুর ৭নং ওয়ার্ডে। স্থানীয়দের অভিযোগ, জুয়ার আসরে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে জুয়াড়ীরা আসলে শাহাবুদ্দিনসহ একটি চক্র তাদেরকে রিসিভ করেন এবং জনপ্রতি ৫০০টাকা করে আদায় করে নেন প্রতিজুয়ার আসর থেকে। এরপর মোটর সাইকেল পার্কিং এর জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যাবস্থা। তবে প্রতিটি মোটর সাইকেল রাখা বাবদ ১০০ টাকা। সকল জুয়াড়ীর কাছ থেকে টাকা নেয়ার পরে কালু মাঝীর বাড়ির পাশে খালপাড়ে বিশেষ নিরাপত্তায় শুরু হয় আসর। জুয়ার আসর নির্বিঘেœ চালানোর জন্য তিনজন পাহারাদার কাজ করেন। দিনপ্রতি যাদেরকে শাহাবুদ্দিন জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে বকরা নেন। রাতভর এই জুয়ার আসরে চলে লক্ষ লক্ষ টাকার হাত বদল ।
প্রশাসন যেন তৎপরতা না দেখায় এই শর্তে মাধ্যম হয়ে মাসিক ভিত্তিতে ২৫হাজার টাকা যায় থানায় কর্মরত অঘুষিত ক্যাশিয়ার এর হাতে যাওয়ার অভিযোগ গোপন সূত্রের। জুয়াড় আসরে আসা জুয়াড়ীদেও টাকা ফুড়িয়ে গেলে তাদের স্বর্ন অলঙ্কার যেমন হাতের রিং, চেইনসহ মোবাইল, মোটর সাইকেল বন্ধক রেখে টাকার যোগান দেওয়ার জন্য রয়েছে একটি গ্রুপ। এই গ্রুপে রয়েছেন স্বর্নকার রাজিবসহ আরো অনেকে।
পেশাগত দিক থেকে এই সিন্ডিকেট মুখপাত্র শাহাবুদ্দিন বেকার হলেও জুয়ার আসর চালিয়ে নামে বেনামে আজ কোটিপতি বনে গেছেন বলেও জানা যায়। এভাবেই চলছে এসব জুয়ার আসর। একাধিক পয়েন্টে দিনের আলো ফুরালে দীর্ঘ দিন এসব জুয়ার আসর বসলেও নেই প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা। প্রশাসনের নিরবতায় দিন দিন উঠতি বয়সের যুবক ও তরুণরাও ঝুকছে জুয়ার নেশায়। আর এভাবেই ধ্বংস হচ্ছে আমাদের যুবসমাজ।
উপজেলার আবদুল্লাপুর ইউনিয়নের –ওয়ার্ডে, আসলমাপুর ইউনিয়নে ভূইয়ারহাট এলাকায় দৈনিক চলে জুয়ার আসর। নীলকমল, নুরাবাদ ও আহম্মদপুর ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি স্পটে জুয়ার আসর বসে। পুলিশ আটক করলেও মামলা না দিয়ে ভ্র্যাম্যামন আদালতে আড়াইশ টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আক্তারুল আলম সামু বলেন, পুলিশ জুয়ার বিষয়ে নিয়মিত মামলা গ্রহণ করলে অনেকাংশই জুয়াা খেলা হ্রাস পেত।
এ বিষয়ে শাহাবুদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, আমি জুয়ার মধ্য নেই। এই গুলো ভূয়া কথা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে।
শশীভূষন থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, জুয়াড়ী ও মাদকের বিষয় পুলিশ রাতেও টহল দিয়ে থাকে। ইতিপূর্বে একাধিক জুয়াড়ী আটক করা হয়েছে। থানায় উৎকোচের বিষয়টি সঠিক নয়।
দুলারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোরাদ হোসেন বলেন, জুয়া ও মাদকের বিষয় পুলিশ জিরো টলারেন্স। ইতিপূর্বে বাংলাবাজার, গাছিরখাল, হাজিরহাটের রাস্তার মাথা থেকে জুয়াড়ী আটক করে ভ্র্যাম্যমান আদালতে জেল-জরিমানা করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল নোমান রাহুল বলেন, জুয়াড় বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এএইচ/এমআর